নিখাদ বার্তাকক্ষ: প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়াধীন বাংলাদেশ জরিপ অধিদপ্তরের উদ্যোগে আয়োজিত চলমান ‘আকাশ আলোকচিত্র ধারণের মাধ্যমে ঢাকা শহর ও পার্শ্ববর্তী এলাকার বৃহৎ স্কেলের টপোগ্রাফিক্যাল মানচিত্র প্রণয়ন (২য় সংশোধিত)’ শীর্ষক প্রকল্পের একটি সেমিনার আজ সোমবার ঢাকার বিজয় স্মরণীর বঙ্গবন্ধু সামরিক জাদুঘরের মাল্টিপারপাস হলে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সিনিয়র সচিব এন এম জিয়াউল আলম, বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব গোলাম মো. হাসিবুল আলম।
এতে সভাপতিত্ব করেন সার্ভেয়ার জেনারেল অব বাংলাদেশ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. হাবিবুল হক ।
বাংলাদেশ জরিপ অধিদপ্তরের জ্যেষ্ঠ পরিচালক মোহাম্মদ আব্দুর রউফ হাওলাদার তার স্বাগত বক্তব্যে ইউএভি প্রকল্প সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত ধারনা উপস্থাপন করেন।
এন এম জিয়াউল আলম তার বক্তব্যের শুরুতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মুক্তিযুদ্ধে জীবন উৎসর্গকারী সকল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণ করেন।
তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আজীবন লালিত স্বপ্ন ‘সোনার বাংলা’ গড়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকার ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত একটি প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক, আধুনিক ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ ইতোমধ্যে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ এসডিজির সকল লক্ষমাত্রা অর্জনে সক্ষম হবে এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত অর্থনীতির দেশে পরিনত হবে বলে আশা করা যায়।
তিনি বাংলাদেশ জরিপ অধিদপ্তরকে এরকম একটি সময়োপযোগী প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়ার জন্য সাধুবাদ জানান। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, এ প্রকল্পের মাধ্যমে উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন কাজে নিয়োজিত সরকারি, বেসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও গবেষণা সংস্থাকে ঢাকা শহরের সর্বশেষ জিও-ইনফরমেশন সমৃদ্ধ বৃহৎ স্কেলের (১:২,৫০০) জিআইএস ডাটাবেজসহ ডিজিটাল মানচিত্র সরবরাহের মাধ্যমে ঢাকাকে অত্যাধুনিক বাসযোগ্য শহর হিসেবে গড়ে তোলার জন্য সহায়ক হবে।
ঢাকা নগরীকে আধুনিক, দৃষ্টিনন্দন ও বাসযোগ্য করতে এবং সকল ধরনের নাগরিক সেবা নিশ্চিত করতে বর্তমান সরকার দীর্ঘদিন ধরে নানাবিধ পরিকল্পনা করে আসছে। এ যাত্রায় বাংলাদেশ জরিপ অধিদপ্তরের জিও-স্পেশাল ডাটা এক নতুন মাত্রা যোগ করবে।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব গোলাম মো. হাসিবুল আলম বলেন যে, ড্যাপ অনুযায়ী ঢাকা শহর ও পার্শ্ববর্তী এলাকার আয়তন আনুমানিক ১,৫২৮ বর্গ কি. মি.। ২০০৩ সালে বাংলাদেশ জরিপ অধিদপ্তর কর্তৃক ধারণকৃত আকাশ আলোকচিত্রের মাধ্যমে ঢাকা শহর ও পার্শ্ববর্তী এলাকার ১২২টি ১:৫,০০০ স্কেলের মানচিত্র প্রণয়ন করেছে। উক্ত মানচিত্র ব্যবহার করে বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নাধীন আছে।
তিনি আরো বলেন, এ মানচিত্রগুলি পুরনো বিধায় এর সাহায্যে পরিকল্পনাবিদদের চাহিদা পূরণ করা যাচ্ছেনা। ইতোমধ্যে শহরের জনসংখ্যা ও অবয়ব অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে ঢাকা শহরের পার্শ্ববর্তী শহর নারায়ণগঞ্জ, টঙ্গী, সাভার ও কেরানীগঞ্জ ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের বাইরে হলেও ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের সাথে যুক্ত হতে চলেছে। ঢাকা শহর ও তৎপার্শ্ববর্তী শহরগুলিতে শিল্পায়ন দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশের প্রত্যন্ত এলাকা হতে বিপুল সংখ্যক লোক কর্মসংস্থানের জন্য ঢাকায় ছুটে আসছে।
তিনি বলেন, ড্যাপ এর সফল বাস্তবায়নের জন্য নগরীর উন্নয়নের সাথে জড়িত সকল সংস্থা ও সর্বোপরি জনসাধারণের সমন্বিত প্রচেষ্টা এবং উদ্যোগ একান্তভাবে প্রয়োজন। বর্তমানে ঢাকাবাসী নানা সমস্যায় জর্জরিত। যানজট, জলাবদ্ধতাসহ অন্যান্য নাগরিক সমস্যায় প্রতিনিয়ত নাকাল হচ্ছে মানুষ। যত্রতত্র কলকারখানা স্থাপনের কারণে পরিবেশ দূষণ হচ্ছে। নদী, খাল, জলাশয় ভরাট, ও নির্বিচারে কৃষিভূমি ধ্বংস করে আবাসিক এলাকায় পরিণত করা হচ্ছে। ডিটেইল্ড এরিয়া প্লান মূলত সমাজের সকল স্তরের মানুষের চাহিদা এবং চিন্তাভাবনার একটি মিশ্র প্রতিফলন। এটি বাস্তবায়িত হলে ঢাকা শহরের সামগ্রিক উন্নয়নে একটি সাম্যাবস্থা তৈরী হবে বলে আশা করা যায়। আর ড্যাপ’র সফল বাস্তবায়নের জন্য ‘আকাশ আলোকচিত্র ধারণের মাধ্যমে ঢাকা শহর ও পার্শ্ববর্তী এলাকার বৃহৎ স্কেলের টপোগ্রাফিক্যাল মানচিত্র প্রণয়ন’ প্রকল্প থেকে প্রাপ্ত ডাটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আমি বিশ্বাস করি।
কি-নোট স্পিকার হিসেবে প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ও সার্ভেয়ার জেনারেল অব বাংলাদেশ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. হাবিবুল হক থ্রি ডি লার্জ স্কেল ম্যাপিং অব ঢাকা সিটি এন্ড সারোয়ান্ডিংস বাই ইউএভি’স বিষয়ের উপর বক্তব্য উপস্থাপন করেন।
তিনি নগর উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়নে প্রকল্প থেকে প্রাপ্ত ডাটাসমূহের ব্যবহার ও উপকারিতা সম্পর্কে বর্ণনা করেন।
সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. মাসুদ করিম, অতিরিক্ত সচিব মো. আশরাফ হোসেন, অতিরিক্ত সচিব মো. খাইরুল আলম, অতিরিক্ত সচিব মো. মিজানুর রহমান, অতিরিক্ত সচিব মো. আবু বকর ছিদ্দিক, অতিরিক্ত সচিব মো. আশরাফুল ইসলাম, যুগ্মসচিব ড. ফাহমিদা খানম, যুগ্মসচিব ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহফুজ আলম, পি ইঞ্জিঃ এবং বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাবৃন্দ।
অনুষ্ঠানের সভাপতি সার্ভেয়ার জেনারেল অব বাংলাদেশ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. হাবিবুল হক প্রধান অতিথি ও বিশেষ অতিথিকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন তাদের উপস্থিতি ও দিক-নির্দেশনামূলক বক্তব্য প্রদানের জন্য।
বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের অফিস প্রধান ও কর্মকর্তাবৃন্দকে সেমিনারে উপস্থিত হয়ে তাদের মূল্যবান মতামত প্রদানের মাধ্যমে অনুষ্ঠানকে প্রানবন্ত করার জন্য ধন্যবাদ জানান।
প্রকল্প বাস্তবায়নে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।