নিখাদ বার্তাকক্ষ: বাংলাদেশের একেক এলাকার বৈশিষ্ট্য যে একেক রকম, সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে সে অনুযায়ী উন্নয়ন পরিকল্পনা সাজানোর আহ্বান জানিয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রোববার মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এক সভায় তিনি বলেন, “বাংলাদেশটাকে চিনতে হবে, জানতে হবে। বাংলাদেশের কিন্তু একেক এলাকা একেক রকম, এটাও মাথায় রাখতে হবে। সেটা মাথায় রেখেই আপনাদের কাজ করতে হবে।”
সরকারের শতবর্ষী মহাপরিকল্পনা বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ বাস্তবায়নে গঠিত ডেল্টা গভর্ন্যান্স কাউন্সিলের প্রথম সভায় এ কথা বলেন শেখ হাসিনা।
এই মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে একটি নীতিমালা তৈরি কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “ডেল্টা প্ল্যানটা যদি আমরা ভালোভাবে একটা গাইডলাইন তৈরি করে প্ল্যান ভালোভাবে বাস্তবায়ন করতে পারি, আর যেহেতু এটা ২১০০ সাল পর্যন্ত, তাই সময়ের সাথে এটা পরিবর্তন, পরিবর্ধন, সংশোধন করতে হবে।
“… সেইভাবেই কিন্তু আমাদের সমস্ত প্ল্যান হাতে নিতে হবে, নিয়ে আমরা কাজ করতে পারব।”
মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিত করাই আওয়ামী লীগ সরকারের মূল লক্ষ্য বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, “সে বিষয়টি মাথায় রেখেই আমরা কাজ করব।”
সরকারপ্রধান বলেন, “আমি মনে করি যে, ডেল্টা গভর্ন্যান্স কাউন্সিলের সভা থেকে একটা ভালো… যেসব এজেন্ডাগুলো আছে তার বিষয়ে ভালো একটা সুপারিশমালা যাবে…।
“পরিকল্পনা বাস্তবায়নটা কীভাবে আমরা করতে পারি সেটা ত্বরান্বিত হবে এবং বাস্তবমুখী পদক্ষেপ কীভাবে নেব সেটাও আমাদের চিন্তা করতে হবে। সেইভাবে আমাদের এগুতে হবে।”
শতবছরের পরিকল্পনা বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও দিকনির্দেশনা দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে চেয়ারপারসন করে এই কাউন্সিল গঠন করেছে সরকার। কাউন্সিলের ভাইস-চেয়ারম্যান হিসেবে আছেন পরিকল্পনা মন্ত্রী।
বন্যা, নদী ভাঙন, নদী ব্যবস্থাপনা, নগর ও গ্রামে পানি সরবরাহ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও নিষ্কাশন ব্যবস্থাপনার দীর্ঘমেয়াদি কৌশল হিসেবে বহু আলোচিত ‘বদ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০’ ২০১৮ সালের ৪ সেপ্টেম্বর অনুমোদন দেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (এনইসি)।
‘ডেল্টা প্ল্যান’ নামে বেশি পরিচিত এ মহাপরিকল্পনার অধীনে আপাতত ২০৩০ সালের মধ্যে বাস্তবায়নের জন্য ৮০টি প্রকল্প নেবে সরকার, যাতে ব্যয় হবে প্রায় ২৯৭৮ বিলিয়ন টাকা।
দেশের উন্নয়নে আওয়ামী লীগ সরকারের নানা উদ্যোগ ও ভবিষ্যত পরিকল্পনার কথাও বৈঠকে তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।
জলবায়ু পরিবর্তনে বাংলাদেশের ‘কোনোরকম দায় নেই’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, “উন্নত দেশগুলো যে সমস্ত ক্ষতির সৃষ্টি করেছে তার প্রভাবেই জলবায়ু পরিবর্তন সৃষ্টি হয়েছে। আঘাতটা কিন্তু বাংলাদেশের উপর আসবে।”
ভৌগলিক অবস্থান বিবেচনা করে সরকার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “আমাদের যেহেতু একদিকে বিশাল সমুদ্র, অপরদিকে নদীমাতৃক দেশ। আর হিমালয় থেকে যে নদীগুলো নেমে আসে সব থেকে বেশি পলি আমাদের দেশের ভেতর থেকেই বঙ্গোপসাগরে পড়ে। সেদিকে বিবেচনা করেই আমরা আমাদের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি।
“সেদিক থেকে আমি মনে করি, এই ব-দ্বীপ পরিকল্পনাটা বাস্তবায়ন করতে পারলে অন্তত ২১০০ সালের কী কী করণীয় তার একটা কাঠামো এখানে দেওয়া হয়েছে।”
দেশের সমুদ্র সীমার অধিকার নিশ্চিতে দেশের আগের সরকারগুলো কোনো উদ্যোগ নেয়নি মন্তব্য করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেন, “জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সমুদ্র সীমার অধিকার নিশ্চিতে আইন করে গেলেও ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট তাকে নির্মমভাবে হত্যার পর যারা সংবিধান লঙ্ঘন করে অবৈধভাবে সরকার গঠন করেছিল, তারা এই ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ নেয়নি।”
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “…জিয়াউর রহমানের সরকার, এরশাদের সরকার বা খালেদা জিয়ার সরকার কেউ কিন্তু এ ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ নেয়নি। আমাদের যেটা অধিকার আছে, এই বিষয়টা কিন্তু তারা কখনও তুলেই ধরেনি বা এ ব্যাপারে কখনও পদক্ষেপ নেয়নি। সেসময় যারা ক্ষমতায় ছিলেন, তাদের কাছে ক্ষমতাটা ভোগের বস্তু ছিল।”
বর্তমান সরকার সমুদ্র সম্পদকে কাজে লাগানোর উদ্যোগ নিয়েছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “আমি মনে করি, আমাদের ডেল্টা প্ল্যানের সাথে আমাদের এই যে সমুদ্র, আজকে যে বিশাল সমুদ্ররাশি আমরা পেয়েছি, এই সম্পদটাকে আমাদের অর্থনৈতিক কার্যক্রমে কাজে লাগাতে হবে।”
কিছু কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, “যেহেতু আমাদের নদীগুলো সাগরেই যাচ্ছে, আবার সাগর আমাদের একটা বিরাট সম্পদ, এই সম্পদটা আমরা পেয়ে গেছি। পেয়ে গেছি যখন, তখন এটাও আমাদের কাজে লাগাতে হবে।”
বঙ্গোপসাগরের গুরুত্বের কথা তুলে ধরে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বঙ্গোপসাগরের সবচেয়ে গুরুত্বটা হলো যে আদিকাল থেকেই এই বঙ্গোপসাগর দিয়েই সারা বিশ্বে ব্যবসা বাণিজ্যটা চলে। কারণ দুইপাশে দুইটা মহাসাগর, এই মহাসাগরের এক সাগর থেকে আরেক সাগরে যেতে গেলে এই বঙ্গোপসাগরের উপর থেকেই কিন্তু চলাচলটা হয়। সেদিক থেকে বঙ্গোপসাগরের গুরুত্ব কিন্তু অনেক বেশি।”
বঙ্গোপসাগরের দূষণ রোধে মনোযোগ দেওয়ার পাশপাশি গবেষণার গুরুত্ব অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। সেই সঙ্গে ডেল্টা প্ল্যান বাস্তবায়ন করতে গিয়ে পরিবেশ রক্ষা, যেখানে সেখানে শিল্পপ্রতিষ্ঠান না করা, দেশে একশ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা, রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট পরিকল্পনা করে নির্মাণ করার কথাও প্রধানমন্ত্রী বলেন।
“ইতোমধ্যে আমি নির্দেশ দিয়েছি, যে সমস্ত জলাভূমি বা বিল অঞ্চল, সেখানে এলিভেটেড রাস্তা করে দেওয়া। সেখানে মাটি ভরাট করে যেন না হয় অর্থাৎ পানির যে গতিটা সেটা যেন ঠিক থাকে। এটা খুব বেশি প্রয়োজন আমাদের দেশের জন্য।”
বাংলাদেশে বিভিন্ন ঋতুতে যে পরিবর্তন ঘটে, সেটা মাথায় রাখার তাগিদ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “আমাদের বর্ষাকালে পানির গতি এক রকম থাকে, শীতকালে আবার নদী শান্ত, সাগর শান্ত। সেইগুলো মাথায় রেখেই কিন্তু আমাদের পরিকল্পনা নেওয়া উচিত।”
আর এক্ষেত্রে নৌ পরিবহন ও পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের কাজে সমন্বয় রাখার ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, “এটা আলোচনার মাধ্যমে করলে যথাযথভাবে করতে পারব।”