অনলাইন ডেস্ক
বিশ্বজুড়েই তাণ্ডব চালাচ্ছে করোনাভাইরাস। এই ভাইরাসের বিষাক্ত ছোবলে এরই মধ্যে প্রায় ১ কোটি আড়াই লাখ মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে মৃত্যু হয়েছে প্রায় ৫ লাখ সাড়ে ৪ হাজার মানুষের। এমন পরিস্থিতিতে অসহায় হয়ে পড়েছে বিশ্ববাসী। যদিও এর প্রতিষেধক তৈরির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। ঠিক কবে নাগাদ ভ্যাকসিন তৈরি হবে তার সঠিক তথ্য নিয়েও শঙ্কায় তারা। এরই মধ্যে করোনার প্রতিষেধক নিয়ে আশার কথা জানিয়েছে থাইল্যান্ড।
থাইল্যান্ডের বিজ্ঞানীরা জানান, প্রথমে ইঁদুরের ওপর, পরে বাঁদুরের ওপর-দুই ক্ষেত্রেই ক্লিনিক্যাল ট্র্যায়ালে করোনা প্রতিষেধকে আশানুরূপ ফল মিলেছে। শুধু তাই নয়, কবে থেকে এই ভ্যাকসিনের হিউম্যান ট্রায়াল শুরু হতে পারে, সে বিষয়ে ইঙ্গিতও দিয়েছেন তারা।
ভ্যাকসিনের গবেষণা দলের প্রধান চুলালংকর্ন বিশ্ববিদ্যালয় গবেষক কিয়াথ রুক্সরাংথাম জানান, অক্টোবর মাসের শুরুতেই থাইল্যান্ডের বিজ্ঞানীদের তৈরি করোনা প্রতিষেধকের হিউম্যান ট্রায়াল শুরু হতে পারে।
এর আগে, থাইল্যান্ডের উচ্চশিক্ষা ও বিজ্ঞান মন্ত্রী সুভিট মেয়সিনসি জানান, বানরের ওপর এই প্রতিষেধক প্রয়োগের ফলাফল বেশ ভাল। সবকটি বানরের শরীরেই করোনার বিরুদ্ধে যথেষ্ট প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে উঠেছে।
থাইল্যান্ডের উচ্চশিক্ষা ও বিজ্ঞান মন্ত্রী সুভিট মেয়সিনসি জানান, আরও একবার এই ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় জোড প্রয়োগ করা হবে বানরের ওপর। ওই ট্রায়ালেও সাফল্য পেলে আগামী অক্টোবরের মধ্যে মানুষের শরীরে এই প্রতিষেধক পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করা হতে পারে।
থাইল্যান্ডের দুটি সংস্থা করোনা প্রতিষেধক তৈরি নিয়ে গবেষণা চালাচ্ছে। আশা করা হচ্ছে আগামী বছরের মধ্যেই থাইল্যান্ডও করোনা প্রতিষেধক তৈরির কাজে সাফল্য পাবে।
এর আগে কঠিন পরিস্থিতিতে সবাইকে সচেতন থাকতে সতর্ক করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। যদিও করোনায় বিপর্যস্ত বিশ্ববাসী অপেক্ষায় আছে কবে নাগাদ এ প্রতিষেধক তৈরির সুখবর দেবেন বিজ্ঞানীরা। ডব্লিউএইচও বলেছে, যত শিগগিরই সম্ভব করোনা ভ্যাকসিন তৈরির চেষ্টা চলছে। তবে ঠিক কবে নাগাদ এই ভ্যাকসিন বাজারে আসবে সে বিষয়ে নিশ্চিত করতে পারেনি সংস্থাটি।
তবে এই মুহূর্তে অক্সফোর্ডের ‘কোভ্যাক্স’ (করোনা ভ্যাকসিন)-কে গুরুত্ব দিতে চাইছে ডব্লিউএইচও। সব দেশের হাতে কোভ্যাক্স তুলে দেওয়াটাই তাদের কাছে এখন বড় চ্যালেঞ্জ। এই ভ্যাকসিন তৈরির জন্য ১৮ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করাটাও সহজ নয় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কাছে, গত শুক্রবার এমনটাই জানিয়েছেন ডব্লিউএইচও’র প্রধান বিজ্ঞানী সৌম্যা স্বামীনাথন।
এরই মধ্যেই বিশ্বে মোট ২০০টি ভ্যাকসিন প্রয়োগ হয়েছে। প্রতিটি ভ্যাকসিন এক এক পর্যায়ে রয়েছে। এদের মধ্যে ১৫টি ভ্যাকসিনকে মানব দেহে ট্রায়ালও করা হয়েছে। সৌম্যা স্বামীনাথন আশা করছেন আগামী ১২ থেকে ১৮ মাসের মধ্যেই তৈরি হয়ে যাবে এই করোনা ভ্যাকসিন।
ডব্লিউএইচও’র প্রধান বিজ্ঞানী বলেন, উচ্চ আয় এবং উচ্চ মধ্য আয়ের দেশগুলোতে কোভ্যাক্স ভ্যাকসিনের প্রায় ৯৫০ মিলিয়ন ডোজের প্রয়োজন এবং তা যতদ্রুত সম্ভব। তিনি এও জানান, এই মুহূর্তে অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিন তৈরির সময়ের নিরিখে এগিয়ে আছে।
সৌম্যা স্বামীনাথন বলেন, তারা এরইমধ্যে অ্যাডভানস ফেজ-২ ট্রায়াল শেষ করেছে। অনেক দেশে ফেজ-৩-এর কাজ শুরু করার পরিকল্পনাও করেছে। মডার্নাও তাদের তৈরি ভ্যাকসিনের ফেজ-৩ পর্যায়ের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরু করবে জুলাইয়ের মাঝামাঝি। এখন এই ক্লিনিকাল ট্রায়ালে রোগীদের কতটা উন্নতি হচ্ছে এবং সুরক্ষা বজায় থাকছে কি না তা এখনও অজানা আমাদের কাছে।