নিখাদ বার্তাকক্ষ: বাগেরহাটে অতিরিক্ত মুনাফার লোভ দেখিয়ে আড়াই মাসে বেকার যুবকদের কাছ থেকে কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে কথিত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল সোস্যাল চেইন বিডির (জিএসসি বিডি) বিরুদ্ধে। প্রতারকদের বিচার ও টাকা ফেরতের দাবিতে পুলিশ সুপার বরাবর অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী বাগেরহাটের চিতলমারী এলাকার সাজিত শেখ নামের এক যুবক। শুধু বাগেরহাট থেকে নয়, সারা বাংলাদেশ থেকে শত কোটি টাকার উপরে হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে ওই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় আইনগত সহায়তা প্রদানের আশ্বাস দিয়েছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামান।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, খুলনা জেলার পাইকগাছা উপজেলার সোলাদানা থানার রাশেদ আলী সরদারের ছেলে শামীম হোসেন ও তার বন্ধু মাসুম বিল্লাহ জিএসসি বিডি নামের একটি ইকমার্স প্রতিষ্ঠান শুরু করে। তাদের কোম্পানির কাজের পদ্ধতি ছিল আইডিভিত্তিক। জিএসসি বিডিতে ১২০০ টাকা দিয়ে একটি আইডি ক্রয় করলে ১০ মাসে ৩ হাজার টাকা প্রদানের আশ্বাস দিত তারা। কেউ ইচ্ছে করলে চাইলে আনলিমিটেড আইডি করতে পারবে। ১৮ আগস্ট থেকে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত বাগেরহাটের ৩০০ মানুষের কাছে ৭ হাজার আইডি বিক্রি করেছে কোম্পানিটি। যা থেকে অন্তত ৮৪ লাখ টাকা হাতিয়েছে প্রতারকরা। শুরুতে মাসখানেক টাকা দিলেও, দেড় মাস ধরে গ্রাহকদের টাকা প্রদান বন্ধ রয়েছে।
প্রতারণার শিকার সাজিত শেখ বলেন, এবছর আগস্টের মাঝামাঝি সময়ে আমার পূর্ব পরিচিত খুলনা জেলার পাইকগাছা এলাকার মোহাম্মাদ আজিজুর রহমান গাজীর ছেলে আশরাফুল নামের এক ব্যক্তি আমাকে জানায় জিএসসি বিডি নামের একটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানে সে মার্কেটিং অফিসার হিসেবে যোগদান করেছেন। যেখানে সামান্য বিনিয়োগে ভাল আয় করা যাবে। কোম্পানির কাজ ও পদ্ধতি বোঝাতে মালিক শামীম হোসেন ও মাসুম বিল্লাহকে নিয়ে বাগেরহাটে আসেনে আশরাফুল। তারা আমাকে অনেক ভালভাবে তাদের পদ্ধতি বোঝায়। আশরাফুলের আশ্বাসে আমি কয়েক ধাপে ওই কোম্পানিতে ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করি। প্রথম কিছু দিনে ৭০ হাজার টাকা বিকাশের মাধ্যমে পেমেন্ট করলেও, পরবর্তীতে আমাকে আর কোন টাকা দেয়নি। এখন তারা আমার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে। আমি আমার টাকা ফেরত চাই।
শুধু আশরাফুল নয়, মাত্র আড়াই মাসে বাগেরহাটের অন্তত ৩ শতাধিক লোকের কাছে ৭ হাজার আইডি বিক্রি করে ৮৪ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। বেশির বিনিয়োগকারী তাদের মূলধনের ১০ শতাংশও ফেরত পায়নি। ২০ অক্টোবর থেকে কোম্পানির ওয়েবসাইট ও এ্যাপসও বন্ধ করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। সেই সাথে মার্কেটিং অফিসার ও মালিকদের মুঠোফোনও বন্ধ রয়েছে। মালিকদের সাথে যোগাযোগ করতে না পাড়ায় হতাশা বিরাজ করছে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে।
জিএসসি বিডিতে ৬ লাখ টাকা বিনিয়োগকারী রামপাল উপজেলা সদরের ফকির মিন্টু আলী বলেন, সরল বিশ্বাসে কোম্পানিতে বিনিয়োগ করেছিলাম। প্রথম এক মাস ভালভাবে লেনদেন করেছিল কোম্পানি। কিন্তু একমাস পর থেকেই সফটওয়ার আপডেট কেন্দ্রিক বিভিন্ন জটিলতার কথা বলে পেমেন্ট বন্ধ করে দেয়। হঠাৎ করে দেখি ওয়েবসাইট ও এ্যাপস এ প্রবেশ করা যাচ্ছে না। শুধু নিজের টাকা নয়, আমার কথায় বিশ্বাস করে অনেকেই বিনিয়োগ করেছে কোম্পানিতে। আমরা তো পথে বসে গেলাম।
বাগেরহাট সদর উপজেলার মূলঘর এলাকার মেহেদী হাসান পারভেজ বলেন, হঠাৎ করে কোম্পানির কার্যক্রম বন্ধ হওয়ায় ১০-১২ জন গ্রাহক নিয়ে কোম্পানির মালিক পাইকগাছা এলাকার শামীম হোসেনের বাড়িতে যাই। সেখানে শামীমের সাথে আশরাফুল ও মাসুমকেও দেখতে পাই। আমরা গেলে স্থানীয় ইউপি সদস্য শিকারি আবুবকরসহ অনেক লোক জড় হয়। স্থানীয়দের সামনে শামীমসহ অন্যরা টাকা নেয়ার কথা স্বীকার করে। কিন্তু পরবর্তীতে আমাদেরকে টাকা দিতে পারবে না বলে দেয়। টাকা চাইলে আমাদেরকে দেখে নেয়ারও হুমকি দেয় শামীম।
স্থানীয়রা আমাদের জানায়, শামীম, মাসুম ও আশরাফুল পেশাদার প্রতারক। প্রতারণার মাধ্যমে বিভিন্ন এলাকা থেকে এই প্রতিষ্ঠানের নাম ভাঙ্গিয়ে শত শত কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে তারা। বর্তমানে জিএসসি বিডি কোম্পানির কার্যক্রম বন্ধ করে কোফি কয়েন নামে নতুন আর একটি কোম্পানি চালু করেছে তারা।
সাজু শেখ নামের আরেক গ্রাহক বলেন, কোম্পানির ওয়েবসাইট ও এ্যাপসের আমরা দেখেছি এ পর্যন্ত কোম্পানিতে চার লাখ আইডি রয়েছে। বিপুল পরিমাণ এই গ্রাহকের বেশিরভাগই তাদের মূলধন হারিয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও পুলিশ প্রশাসনের সহযোগিতায় আমরা আমাদের টাকা ফেরত পেতে চাই।
বাগেরহাটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামান জানান, জিএসসি বিডি কোম্পানির নামে অর্থ আত্মসাথের একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।