কর্মজীবনের কর্মশালাঃ যোগাযোগ দক্ষতা উন্নয়ন বিষয়ক কর্মশালা’র পর সফলভাবে সম্পন্ন হলো তৃতীয় ব্যাচের প্রাথমিক কার্যক্রম

ঢাকা প্রচ্ছদ


নিখাদ বার্তাকক্ষ: তরুণ প্রজন্মকে ক্যারিয়ার সচেতন করতে বাংলাদেশ আওযয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানবসম্পদ উপ-কমিটির উদ্যোগে, সেন্টার ফর রিসার্চ এন্ড ইনফরমেশন (সিআরআই) এর সহযোগিতায় ‘কর্মজীবনের কর্মশালা’র তৃতীয় ব্যাচের প্রাথমিক কার্যক্রম ইতোমধ্যে সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। রেজিস্টেশন প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। খুব দ্রুতই পরবর্তী ব্যাচ শুরু হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

তৃতীয় ব্যাচের কার্যক্রম উদ্বোধনের শুরুতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানবসম্পদ উপ-কমিটির সম্পাদক শামসুন নাহার চাঁপা বলেন, ‘আগামীদিনের বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে আজকের তরুণরাই নেতৃত্ব দেবে। তাই তাদেরকে আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় অবশ্যই দক্ষ হয়ে গড়ে উঠতে হবে। নিজের ক্যারিয়ারের পরিকল্পনা করে তারা যাতে এগিয়ে যেতে পারে ও দক্ষ হয়ে নিজের ও দেশের কল্যাণে অবদান রাখতে পারে সেই চিন্তা থেকেই তরুণদের জন্য বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের এই আয়োজন। গত ১২ ও ১৩ সেপ্টেম্বর আগের দুই ব্যাচের সফল সম্পন্নকারীদের নিয়ে যোগাযোগ দক্ষতা উন্নয়ন বিষয়ক কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছিলো। এই ব্যাচের সকলের কাছ থেকে তাদের দুর্বলতার বিষয়গুলো জেনে সেই বিষয়গুলো নিয়েও কাজ করা হবে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ চায় দেশের সকল তরুণ-তরুনী তাদের ক্যারিয়ার সম্পর্কে সচেতন হয়ে, সঠিক পরিকল্পনা করে দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে নিজেদের উন্নতির পাশাপাশি দেশের উন্নয়নেও অগ্রণী ভূমিকা পালন করুক। আর তাই দক্ষতা অর্জনে সহযোগিতার মাধ্যমে তাদের সম্পদে রূপান্তরের চেষ্টা করে যাচ্ছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।’

কর্মজীবনের কর্মশালা’র তৃতীয় ব্যাচ সম্পর্কে তথ্য প্রযুক্তিবিদ জনাব সুফি ফারুক ইবনে আবু বকর বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা যে উন্নত অবকাঠামো তৈরী করছেন তার সাথে মানাসই একটি তরুণ সমাজ তৈরী করতেই আমাদের এই প্রয়াস। নিজেদের উন্নত করে, উন্নত অবকাঠামোর সঠিক ব্যবহার করতে পারলেই আমরা উন্নত দেশ হিসেবে বিশ্বে মাথা উঁচু করে দাড়াতে পারব।’

তৃতীয় ব্যাচের একজন অংশগ্রহণকারী পঞ্চগড় জেলার যুবায়ের হোসেন বলেন, ‘কর্মশালায় সুন্দর করে আমাদের ক্যারিয়ার নিয়ে যে প্রেজেন্টেশন দেওয়া হয়েছে তা আমি আগে কখনোই পাইনি। নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে যে পরিকল্পনা করতে হয়, কিভাবে পরিকল্পনা করতে হয় তার সঠিক ও সুন্দর দিকনির্দেশনা পেয়েছি এই কর্মশালা থেকে।’
কর্মশালা’র অপর একজন অংশগ্রহণকারী মোঃ আরমান কর্মশালা সম্পর্কে তার অভিজ্ঞতা নিয়ে বলেন, ‘এই কর্মশালা’র উদ্যোগটি একটি অসাধারণ বিষয়। এই কর্মশালা’র বক্তাদের কথা যদি আমরা মেনে চলতে পারি ও সে অনুযায়ী যদি ক্যারিয়ার প্লান করে এগিয়ে যেতে পারি তবে অবশ্যই আমাদের জীবনে দারুন কিছু হবে; সফলতা আসবে।’
এ কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন আওয়ামী লীগের গবেষণা উইং ‘সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন-(সিআরআই)’- এর সমন্বয়ক তন্ময় আহমেদ। তিনি জানান, ‘গত ৯ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম চলে। প্রায় ৬ হাজার তরুণ-তরুণী এ কর্মশালার জন্য নিবন্ধন করেন। উক্ত নিবন্ধনকারীদের মধ্য থেকে প্রাথমিক বাছাই শেষে ৭০ জনকে নিয়ে প্রথম ব্যাচের কর্মশালা গত ১৫ এবং ১৬ ফেব্রুয়ারি সফলভাবে সম্পন্ন হয়। পরবর্তীতে ১ মার্চ থেকে ১০ মার্চ পর্যন্ত দ্বিতীয় ধাপে রেজিস্ট্রেশন উন্মুক্ত করা হলে আরো প্রায় ১ হাজার আগ্রহী তরুণ-তরুণী রেজিস্ট্রেশন করেন। দুই ধাপের রেজিস্ট্রেশনকারীদের মধ্য থেকে বাছাইকৃত ১২৬ জনকে নিয়ে কর্মশালা’র দ্বিতীয় ব্যচের কার্যক্রম চলে ১০ ও ১১ মার্চ, দুইদিন।’
তিনি আরো জানান, ‘গত ১২ সেপ্টেম্বর আবারও রেজিস্ট্রেশনের কার্যক্রম পুনরায় শুরু করা হয় যা এখনো চলমান রয়েছে। এর পরপরই ৭ ও ৮ অক্টোবর এখন পর্যন্ত যারা নিবন্ধন করেছেন তাদের মধ্য থেকে বাছাইকৃত ৮০ জনকে নিয়ে কর্মজীবনের কর্মশালা’র তৃতীয় ব্যাচের কার্যক্রমের প্রাথমিক পর্ব সফলভাবে শেষ হয়েছে।’
উল্লেখ্য যে প্রথম ও দ্বিতীয় ব্যাচের সফল সম্পন্নকারীদের নিয়ে ইতোমধ্যে গত ১২ ও ১৩ সেপ্টেম্বর ‘যোগাযোগ দক্ষতা উন্নয়ন’ বিষয়ে একটি কর্মশালা আয়োজন করেছে কর্মজীবনের কর্মশালা আয়োজক কমিটি।

যোগাযোগ দক্ষতা উন্নয়ন বিষয়ক কর্মশালায় অংশ নিয়ে চট্টগ্রাম জেলার শ্রীজন পাল আয়োজকবৃন্দকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘কমিউনিকেশন স্কিল ডেভেলপমেন্ট কোর্সটি চমৎকার ছিল৷ এরকম শর্টকোর্সগুলো চলমান থাকলে আমরা নানা বিষয় শিখতে পারব যা আমাদের ক্যারিয়ার শিক্ষার পথকে আরও মসৃণ করতে পারবে বলে আমার বিশ্বাস।’
অপর একজন অংশগ্রহণকারী, রংপুর জেলার মোঃ আজগর আলী বলেন, ‘কমিউনিকেশন স্কিল ডেভেলপমেন্ট” কোর্সটি ছিল অসাধারণ। বিশেষ করে বিজনেস কমিউনিকেশনের বিষয়গুলো আমাদের পরবর্তী চাকরি জীবনে অনেক কাজে আসবে। পরবর্তীতে এরকম আরো কোর্স আমরা চাই।’
নারায়ণগঞ্জ জেলা থেকে কর্মশালা’র অপর এক অংশগ্রহণকারী আমিনুল ইসলাম জানান, ‘কোর্সটি করার মাধ্যমে নিজের স্কিল লেভেলের আরো একধাপ উন্নতি হয়েছে । যা চাকুরী জীবনে ও ব্যক্তিগত জীবনে কমিউনিকেশন করার ক্ষেত্রে সহায়ক হবে বলে মনে করি।’
এছাড়াও ফেনী জেলা থেকে তানভীর আহমেদ ভুঁইয়া, মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, জয়পুরহাট জেলার মারুফ আহমেদ, কক্সবাজার জেলার মোঃ ফারেস উদ্দিন রাশেদ, পঞ্চগড় জেলার বরকত আলী, দিনাজপুর জেলার মিলন কিসকু, মোঃ সোহরাব হোসেন, নাটোর জেলার রাজু শেখ সহ সারাদেশের অংশগ্রহণকারীদের নিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে যোগাযোগ দক্ষতা উন্নয়ন বিষয়ক কর্মশালা। অংশগ্রহণকারীদের সকলেই আয়োজকদের ধন্যবাদ দেওয়ার পাশাপাশি এই ধরনের আরও কর্মশালা আয়োজনের জন্য আয়োজকদের অনুরোধ জানান।
কর্মজীবনের কর্মশালা’র সার্বিক কার্যক্রম সম্পর্কে তথ্য প্রযুক্তিবিদ জনাব সুফি ফারুক ইবনে আবু বকর বলেন, ‘তরুণদের ক্যারিয়ার সম্পর্কে সার্বিক ধারণা ও দিকনির্দেশনা দিতে কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। যোগাযোগ দক্ষতা উন্নয়নে ইতোমধ্যে একটি কর্মশালা করা হয়েছে।’ যোগাযোগ দক্ষতা উন্নয়ন বিষয়ে তিনি জানান, ‘যোগাযোগ দক্ষতা তরুণদের ক্যারিয়ার গঠনের একেবারে প্রাথমিক কিন্তু আবশ্যক একটি বিষয়। এই দক্ষতা থাকলে পরবর্তী কাজগুলো সহজ হয়ে যায়। আর সেদিকটি লক্ষ্য করেই তরুণদের যোগাযোগ দক্ষতা বৃদ্ধি করতে এই আয়োজনটি করা হয়।’
তৃতীয় ব্যাচের প্রাথমিক পর্বের সমাপ্তিতে অংশগহণকারীদের কাছ থেকে ক্যারিয়ার অ্যাসেসমেন্ট ফর্মের মাধ্যমে ক্যারিয়ার নিয়ে তাদের চিন্তা, তাদের দক্ষতা, দুর্বলতা ইত্যাদি কিছু বিষয় জানতে চাওয়া হয়েছে। তাদের পাঠানো তথ্যের ভিত্তিতে তাদের দক্ষতার জায়গাগুলোকে আরো ভালো করতে ও দুর্বলতার জায়গাগুলোকে দূর করতে কর্মশালার পরবর্তী বিষয় নির্ধারণ করে কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
কর্মজীবনের কর্মশালা আয়োজনের সহযোগী সংগঠন, সিআরআই এর সমন্বয়ক জনাব তন্ময় আহমেদ কর্মশালা’র সার্বিক অগ্রগতি সম্পর্কে বলেন, ‘কর্মজীবনের কর্মশালা বিষয়ক আয়োজনে তরুণদের কাছ থেকে আমরা অভূতপূর্ব সাড়া পেয়েছি। তিনটি ব্যাচের প্রাথমিক কার্যক্রম ও একটি দক্ষতা উন্নয়ন বিষয়ক কর্মশালা ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যেই আমরা পরবর্তী ব্যাচের কার্যক্রম শুরু করতে পারবো বলে আশা করছি।’
প্রসঙ্গত, গত ৯ জানুয়ারি তরুণদের কর্মদক্ষতা ও কর্ম-পরিকল্পনা উন্নয়ন বিষয়ক কর্মসূচি ‘কর্মজীবনের কর্মশালা’র আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, এমপি। উদ্বোধনী বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘দেশে লাখ লাখ তরুণ কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করছে। তাদের কর্মজীবন সম্পর্কে ধারণা দেওয়া এবং সে অনুযায়ী প্রস্তুতি গ্রহণের পরামর্শদানের মাধ্যমে তরুণদের সহযোগিতা করার পাশাপাশি আগামীর সম্ভাবনাময় পেশাগুলো সম্পর্কে ধারণা দিলে তরুণরা নিজেদের উপযোগী করে গড়ে তুলতে সক্ষম হবে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *