মিজানুর রহমানঃস্টাফ রিপোর্টার।
বেগম খালেদা জিয়ার জামিনে মুক্তির ৩ মাস পার হলো। গত ২৫ মার্চ বেগম খালেদা জিয়াকে বিশেষ বিবেচনায় চিকিৎসার জন্য ৬ মাসের জামিন দেওয়া হয়েছিল। ঐদিনই বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেগম খালেদা জিয়া তাঁর গুলশানের বাসভবন ফিরোজায় যান। বিএনপি দীর্ঘ আন্দোলন বা আইনি পথ কোন উপায়েই বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে না পেরে হতাশায় পর্যদুস্ত প্রায়, ঠিক তখন প্রধানমন্ত্রীর অনুকম্পায় বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি একটা আশাবাদ জাগ্রত করেছিল। ২৫ মাস পর বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি পাওয়ার ঘটনায় বিএনপির তৃণমূলের মধ্যেও একটা চাঙ্গা ভাব লক্ষ্য করা গিয়েছিল। বিএনপির শীর্ষস্থানীয় অনেক নেতাই আশা করেছিল যে, খুব শীঘ্রই বেগম খালেদা জিয়া খোলস ছেঁড়ে বের হবেন এবং তিনি দেশের সাম্প্রতিক অবস্থা, রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে কথাবার্তা বলবেন।
এই বাস্তবতায় অনেকেই মনে করেছিলেন যে, বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির কারণে সরকারের উপর একটি চাপ তৈরি হবে এবং বিএনপি অনেক শক্তিশালী হবে। কিন্তু গত ৩ মাসে বিএনপির মধ্যে যে উত্তেজনা, চাঙ্গা ভাব লক্ষ্য করা গিয়েছিল তা আস্তে আস্তে মিইয়ে গেছে এবং বিএনপির মধ্যে বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে হতাশা আরো বেড়েছে। এই সময়ে বেগম খালেদা জিয়া একমাত্র তাঁর পরিবারের সদস্য এবং লোকজন ছাড়া কারো সাথেই তেমন দেখা-সাক্ষাত করছেন না। গত ঈদে বেগম খালেদা জিয়া বিএনপির নেতৃবৃন্দের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত করেছেন। এছাড়া তিনি দু-একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত করেছেন। কিন্তু এই সমস্ত সৌজন্য সাক্ষাতের পর রাজনীতিতে বেগম খালেদা জিয়া প্রভাব রাখার মতো কোন কিছু করেননি।
বেগম জিয়ার পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন যে, বেগম খালেদা জিয়া আসলে বেশ অসুস্থ, তাঁর চিকিৎসা চলছে এবং যেহেতু তাঁর চিকিৎসার জন্যেই জামিনে বের হয়েছেন সেহেতু তিনি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে আগ্রহী নন। তবে বিএনপির একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে যে, বেগম খালেদা জিয়া আসলে রাজনীতির উপরে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন একাধিক কারণে।
প্রথমত, তিনি যখন জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দূর্নীতি মামলায় দণ্ডিত হলেন তখন তিনি ভেবেছিলেন যে, তাঁর দল তাঁর জন্য বড় আন্দোলন গড়ে তুলবেন। কিন্তু বাস্তবে তাঁর দল কার্যকর আন্দোলন তো দূরের কথা, নূন্যতম আন্দোলন গড়ে তুলতেও পারেনি।
দ্বিতীয়ত, বেগম খালেদা জিয়া তাঁর জন্যে যে আইনি লড়াই হয়েছে, সেই আইনি লড়াই নিয়েও সন্দিহান। তিনি মনে করছেন যে, তাঁর আইনজীবিরা যথাযথ প্রক্রিয়ায় এবং যথাযথভাবে আইনি লড়াইটিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেননি।
তৃতীয়ত, বেগম খালেদা জিয়া দেখেছেন যে, বিএনপিতে এখন তাঁর চেয়ে তারেক জিয়া অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ এবং তারেক জিয়ার অনেক কথাই শোনা হয়, অনেককিছু তাঁকে না জানিয়েই করা হয়। এই কারণে তিনি হতাশাগ্রস্ত।
চতুর্থত, বেগম খালেদা জিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে তাঁকে কঠিবভাবে বলা হয়েছে যে, তাঁরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে এই জামিনটা ভিক্ষা চেয়ে নিয়েছেন। কাজেই কোনরকম বিতর্কিত বক্তব্য বা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়ালে যদি তাঁর জামিন বাতিল হয়ে যায় বা যে পরিণতি হবে সেই পরিণতি তাকেই বহন করতে হবে। বেগম খালেদা জিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে এটাও জানানো হয়েছে যে, বিএনপির মধ্যে অনেকেই বিশ্বাসঘাতক এবং তাঁরাই আসলে বেগম খালেদা জিয়ার এতদিন কারান্তরীণ থাকার মূল কারন।
বেগম খালেদা জিয়াও এই সমস্ত বিষয়গুলো নিয়ে হিসেবনিকেশ করেছেন এবং তিনি বর্তমানের বাস্তবতা উপলব্ধি করতে পেরেছেন। বিএনপির একাধিক সূত্র বলছে যে, বেগম খালেদা জিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে যেমন তাঁকে বিদেশে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে, তেমনি জামিনের অর্ধেক সময় পেরিয়ে গেছে এবং জামিনের সময় যেন বাড়ান হয় সেজন্য চেষ্টা এবং তদবির চালাচ্ছেন। এই অবস্থায় সরকারের বিরুদ্ধে একটি অবস্থান নিলে বেগম খালেদা জিয়ার জামিন বা মুক্তি সংক্রান্ত বিষয়গুলো জটিল হয়ে উঠতে পারে। বেগম খালেদা জিয়া আর যাই চান না কেন, তিনি আর কারাগারে যেতে চান না এবং কারাগারে যদি না যেতে চান তাহলে এরশাদের মতোই সরকারের সঙ্গে আপোস করে তাঁকে থাকতে হবে।