নিখাদ বার্তাকক্ষ : আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখলের পর প্রধানমন্ত্রীসহ বেশ কয়েকজন মন্ত্রীর নাম ঘোষণা করেছে তালেবান। তবে এখনো পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রীসভা গঠন হয়নি। এছাড়া মন্ত্রীসভার শপথ গ্রহণের তারিখ ধার্য করার পরে তা পিছিয়ে যায়। এখনো সেই শপথ গ্রহণ হয়নি। এদিকে তালেবান নেতৃত্বের মধ্যে চরম অন্তকোন্দলের তথ্য ফাঁস করেছে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম ব্লুমবার্গ এবং বিবিসি।
কিছুদিন আগেই তালেবান নেতা মোল্লাহ বারাদার যাকে ঘোষিত সুপ্রিম লিডার মোল্লা আখুনজাদার ডেপুটি ঘোষণা করা হয় মৃত্যুর গুজব উঠেছিল। পরে ভিডিও বার্তায় তিনি জানান, তার মৃত্যুর খবর গুজব। এদিকে ব্লুমবার্গ জানাচ্ছে সেপ্টেম্বরের শুরুর দিকে মন্ত্রীসভা গঠন নিয়ে আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে সরকার গঠন নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হয়। সেই বৈঠকে ছিলেন উপপ্রধানমন্ত্রী এবং তালেবান গোষ্ঠীর সহ-প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা বারাদারসহ অন্য প্রভাবশালী নেতারা। মন্ত্রীসভা কেমন হবে তা নিয়ে চলছে গভীর আলোচনা।
সূত্রের বরাত দিয়ে ব্লুমবার্গ জানায়, ওই বৈঠকে বারদার জোর দেন তালেবানের বাইরে থেকেও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে গ্রহণযোগ্য আফগানিস্তানের এমন নেতৃত্বকে অন্তবর্তীকালীন সরকারের সামিল করার জন্যে। ওই বৈঠকে বারাদার আরও বলেন, মন্ত্রীসভায় আফগানিস্তানের সংখ্যালঘু উপজাতি নেতার সামিল করতে হবে।
এমন সময় নিজের চেয়ার ছেড়ে বারাদারের দিকে তেড়ে যান হাক্কানি নেটওয়ার্কের প্রধান এবং আফগানিস্তানের মন্ত্রী খলিলুর রহমান হক্কানি। তারপরেই আচমকা ঘুষি মারতেন মোল্লা বারাদারকে। এদিকে বারাদারকে ঘুষি মারার পর হাক্কানিদের দিকে বন্দুক তাক করেন বারাদারের নিরাপত্তারক্ষীরা।
এদিকে পাল্টা হাক্কানির নিরাপত্তারক্ষীরাও গুলি চালাতে শুরু করেন। ঘটনাস্থলেই নিহত হয় কয়েক জন নিরাপত্তারক্ষীর। মন্ত্রীসভা ঠিক করার বৈঠকে এমন গোলাগুলিতে থেমে যায় বৈঠক। এরই মধ্যে প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ ছেড়ে বেরিয়ে যান বারাদার। ব্লুমবার্গ জানায় প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে এমন গোলাগুলির ঘটনায় গুজব ছড়িয়ে পরে মোল্লা বারাদারের মৃত্যু হয়েছে। এই ঘটনার পরে মোল্লা মহম্মদ হাসান আখুন্দকে অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যকরী প্রধানমন্ত্রী করা হয়। পরে সরকারি টেলিভিশনে বিবৃতি দেন মোল্লা বারাদারা। তিনি জানান, ‘‘আমি অক্ষত এবং ভাল আছি। আমাদের মধ্যে বিতর্ক নিয়ে যে খবর বেরিয়েছে তা পুরোপুরি সত্য নয়।’’ ওই ঘটনার পর থেকেই তিনি কান্দাহারে অবস্থান করছেন বলে জানিয়েছে ব্লুমবার্গ।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে টেলিফোনে ২০২০ সালে আলাপ করে আলোড়ন সৃষ্টি করেন মোল্লা বারাদার। তিনিই প্রথম কোন তালেবান হিসেবে কাজটি করেন। এর আগে তিনি তালেবানের পক্ষে আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা প্রত্যাহার সংক্রান্ত দোহা চুক্তিতে সই করেন। তালেবান সংগঠনটি তৈরি করার পেছনে তার বড়সড় ভূমিকা ছিল। তালেবানের প্রতিষ্ঠাতা মুহম্মদ ওমরের ডেপুটি ছিলেন বারাদার। ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই এবং সিআইএ কর্মকর্তারা পাকিস্তান থেকে তাকে গ্রেপ্তার করেছিলেন। ২০১৮ সালের ২৪ অক্টোবর আমেরিকার হস্তক্ষেপে মুক্তি পেয়েছিলেন বারাদার। পুরো নাম অবশ্য মোল্লাহ আব্দুল গনি বরাদর ওরফে মোল্লাহ বারাদার অখুন্দ।
এর আগে ১৯৮০ সালে সোভিয়েত-আফগান যুদ্ধে লড়াই করেছিলেন মোল্লাহ। আফগান মুজাহিদীনের সক্রিয় সদস্য ছিলেন তিনি। পরে কম্যান্ডার ওমর এবং তিনি কান্দাহারে একটি মাদ্রাসা খোলেন। পরবর্তীতে আফগানিস্তানের পশ্চিমাংশে তালেবানদের সংগঠন তৈরি করেন মোল্লাহ। তাকে নিয়ে কথিত আছে, ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যখন বুশের নির্দেশে আফগানিস্তানে ঢোকে, সে সময় নিজের পুরনো বন্ধু ওমরকে মোটরবাইকে বসিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন মোল্লাহ। মার্কিন সেনার সঙ্গে লড়াইও করেছেন দীর্ঘকাল। কিছু সংবাদমাধ্যমের দাবি ছিল, একসময় প্রাক্তন আফগান প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাইয়ের প্রাণ বাঁচিয়েছিলেন মোল্লাহ।