নিউজ ডেস্ক : বাংলাদেশে সফররত জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের প্রেসিডেন্ট ভলকান বজকার রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য ভাসানচরে সুযোগ-সুবিধার তৈরী করার ভূয়সী প্রশংসা করে বলেছেন, বাস্তুচ্যূত মানুষকে কিভাবে আশ্রয় দেয়া যায়- সে ব্যাপারে বাংলাদেশ বিশ্বের দরবারে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
আজ মঙ্গলবার ঢাকায় ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের সাথে এক যৌথ প্রেস ব্রিফিংকালে তিনি বলেন, ‘শরণার্থীদের কিভাবে আশ্রয় দিতে হয়- বিশ্বের দরবারে তা (ভাসানচর) একটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
ইউএনজিএ প্রেসিডেন্ট স্বীকার করেন যে, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের স্বাচ্ছন্দে ও নিরাপদ স্থানান্তর নিশ্চিত করতে এবং তাদের সুযোগ-সুবিধার দিকে লক্ষ্য রেখে বাংলাদেশ সরকার ভাসানচরে পর্যাপ্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
তিনি আরো বলেন, ‘আমি এ বিষয়টি (ভাসানচরে উচ্চ-পর্যায়ের কাজের ব্যাপারটি) সব জায়গায় উল্লেখ করবো।’ বজকার বুধবার রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন ও শরণার্থীদের সাথে কথা বলার জন্য কক্সবাজারে যাচ্ছেন।
তিনি বলেন, ‘(আগামীকাল) আমি কক্সবাজার থেকে (রোহিঙ্গা সংকটের ব্যাপারে) মিয়ানমারকে বার্তা দিব।’
এর আগে, জাতিসংঘের কারিগরি দল ভাসানচর পরিদর্শন শেষে বঙ্গোপসাগরের দ্বীপটিতে শরণার্থীদের থাকা-খাওয়াসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার ব্যাপারে ইতিবাচক প্রতিবেদন পেশ করে। বাংলাদেশ সরকার কক্সবাজার থেকে এই দ্বীপটিতে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের একটি অংশকে স্থানান্তর করেছে।
বাংলাদেশ নৌ-বাহিনী ভাসানচরে ১ লাখ রোহিঙ্গার বাসস্থানের জন্য ৩১০০ কোটি টাকা ব্যয়ে আশ্রায়ন-৩ প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। ২০১৭ সালে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে দেশটির সেনা বাহিনীর দমন-পীড়নের কারণে প্রাণ রক্ষার্থে প্রায় ৭ লাখ ৫০ হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশের টেকনাফ ও উখিয়াতে আশ্রয় নেয়।
সরকার ভাসানচরে কার্যক্রম শুরু করার জন্য জাতিসংঘসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থাগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে আসছে। কিন্তু জাতিসংঘ বরাবরই বলে আসছে যে, দ্বীপটিতে সরেজমিনে পরিদর্শন শেষে প্রতিবেদনের উপর তাদের কার্যক্রম নির্ভর করছে।
যৌথ ব্রিফিংয়ের আগে ইউএনজিএ প্রেসিডেন্ট ও বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মধ্যে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় এবং সেখানে রোহিঙ্গা সংকট, শান্তিরক্ষী বাহিনী, মহামারি, জলবায়ু পরিবর্তন, কালচার অব পিস, স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে বাংলাদেশের উত্তরণ, অভিবাসী ও ফিলিস্তিন ইস্যুসহ বিভিন্ন ইস্যুতে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
ব্রিফিংকালে বজকার বলেন, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী অপারেশনগুলোতে বাংলাদেশের ভূমিকা অত্যন্ত প্রশংসিত হয়েছে।
জলবায়ু ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে একজন নেতা হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও এলডিসি থেকে বাংলাদেশের উত্তরণের জন্য তাঁর ভূয়সী প্রশংসা করেন।
তিনি আরো বলেন, ‘বাংলাদেশ এমন একটি দেশ- যাকে অর্থনৈতিক সাফল্যের একটি দৃষ্টান্ত হিসেবে দেখা উচিৎ।’ মোমেন বলেন, ইউএনজিএ প্রেসিডেন্টের সাথে এসডিজি ১৭ ও জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীতে নিয়োজিত বাংলাদেশী সদস্যদের ভ্যাকসিন প্রদানের বিষয়ে তার ফলপ্রসু আলোচনা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, বজকার চলতি বছর কালচার অব পিস এর উপর বৈশ্বিক সম্মেলনের আয়োজনে বাংলাদেশকে সহায়তা প্রদানের আশ্বাস দিয়েছেন।
ইউএনজিএ প্রেসিডেন্ট মঙ্গলবার ভোরে এক সংক্ষিপ্ত সফরে বাংলাদেশে আসেন। এ সময় হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাকে অভ্যর্থনা জানান পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন।
সকালে বজকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবনে সাক্ষাত করেন। তিনি ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে তাঁর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান।
বিকেলে, ইউএনজিএ প্রেসিডেন্ট ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে বিভিন্ন বৈশ্বিক সংকট ও জরুরি অবস্থা এবং এর ফলে সারা বিশ্ব ও জাতিসংঘের এর প্রভাব এবং জাতিসংঘের কার্যক্রমের ব্যাপারে বক্তব্য রাখেন।
ইউএনজিএ প্রেসিডেন্ট বুধবার ইউএন রেসিডেন্ট কোঅর্ডিনেটর কর্তৃক গৃহীত গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম ও রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ইউএনএচইচসিআর রিপ্রেজেন্টেটিভ প্রত্যক্ষ করতে কক্সবাজারে যাবেন।- বাসস