জয়তু শেখ হাসিনা

অন্যান্য প্রচ্ছদ

আবদুল মান্নান : বাংলাদেশ তার স্বাধীনতার ৫০ বছর ও জাতির পিতার জন্মের শত বছর পালন শেষ করল। এই দুটি অনুষ্ঠান করার জন্য অনেক পরিকল্পনা করা হয়েছিল; কিন্তু করোনার কারণে তার অনেকটাই কাটছাঁট করতে হয়েছে। শুধু শেষ ১০ দিন, ১৭ থেকে ২৭ মার্চ সময়ের মধ্যে জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে কিছু অনুষ্ঠান হয়েছে, যাতে পাকিস্তান ও আফগানিস্তান বাদে বাকি সার্ক দেশগুলোর সরকার বা রাষ্ট্রপ্রধানরা সশরীরে অংশ নিয়েছেন। সীমিতসংখ্যক দর্শক-শ্রোতাও স্বাস্থ্যবিধি মেনে উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া বিশ্বের প্রায় ৫০টি দেশের সরকার বা রাষ্ট্রপ্রধান শুধু শুভেচ্ছা বাণীই দেননি, তাঁরা বঙ্গবন্ধু ও তাঁর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। একইভাবে প্রশংসা করেছেন ব্রিটেনের রানি, পোপ ফ্রান্সিস, জাতিসংঘের মহাসচিবসহ অনেকেই। তবে এই সময় সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় ছিল পাকিস্তানের করাচি থেকে প্রকাশিত সাউথ এশিয়া ম্যাগাজিনটি বাংলাদেশের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে শেখ হাসিনার ছবি দিয়ে একটি কাভার স্টোরি করা। কাভারে শেখ হাসিনার একট পূর্ণ পৃষ্ঠাব্যাপী ছবি দিয়ে হেড লাইন করেছে ‘Fifty Years of Bangladesh-The Rising Sun!’ (বাংলাদেশের ৫০ বছর—উদীয়মান সূর্য!)। বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে পাকিস্তানি মিডিয়ায় প্রশংসা নতুন কিছু নয়। এর আগে তাদের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল—‘যে পূর্ব পাকিস্তানকে সব সময় আমরা তাচ্ছিল্য করেছি, যারা আমাদের তাচ্ছিল্যের শিকার হয়ে আমাদের সঙ্গে যুদ্ধ করে স্বাধীন বংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেছিল, তারা কিভাবে সর্বক্ষেত্রে আমাদের পেছনে ফেলে গেল?’ পাকিস্তানের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান দায়িত্ব নিয়ে তাঁর প্রথম মন্ত্রিসভায় পাকিস্তানের উন্নয়নের ভবিষ্যৎ রূপরেখা কেমন হবে তা বলতে গিয়ে বলেছিলেন, তিনি পাকিস্তানকে সুইডেনের মডেলে উন্নত করবেন।  সেই রাতে পাকিস্তানের একাধিক বেসরকারি টিভি চ্যানেল টক শোতে অংশগ্রহণকারীরা পরিষ্কার ভাষায় বলেছিলেন, ‘পাকিস্তানকে সুইডেন বানানোর আগে বাংলাদেশ বানিয়ে দাও।’ এই বক্তব্যের পাকিস্তানের জনগণ বেশ প্রশংসা করেছিল এবং এ-ও বলেছিল, বাংলাদেশের এই চোখ-ধাঁধানো উন্নয়নের পেছনে সবচেয়ে বেশি অবদান হচ্ছে সেই দেশের রাজনৈতিক নেতৃত্ব, যার সামনে রয়েছেন দেশটির প্রতিষ্ঠাতা শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা শেখ হাসিনা (কোনো কোনো টিভি চ্যানেলে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে হাসিনা শেখ বলেও সম্বোধন করা হয়)।

সাউথইস্ট ম্যাগাজিনে সাতটি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে যার মধ্যে যেমন আছে পাকিস্তানের গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যক্তিরা ঠিক, তেমনি আছেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ও গবেষণাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত পণ্ডিতজনরা। মূল প্রবন্ধটি লিখেছেন পাকিস্তানের সাবেক সিনেটর জাভেদ জব্বার। তিনি একসময় পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় মন্ত্রীও ছিলেন। তাঁর লেখার শিরোনামটি ছিল Life Begins at 50! (পঞ্চাশে জীবন শুরু হয়) তিনি তাঁর প্রবন্ধে লিখেছেন, তাঁকে যখন পত্রিকাটির সম্পাদক বাংলাদেশের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে লিখতে অনুরোধ করেন তিনি এই অপূর্ব দেশটি (Charming Country) সম্পর্কে লিখতে রাজি হয়ে যান এবং ঠিক করেন তিনি তাঁর পূর্বপরিচিত কয়েকজন বাংলাদেশি বন্ধুর সঙ্গে যোগাযোগ করবেন এবং তাঁদের তিনি দেশটি সম্পর্কে তিনটি ইতিবাচক ও দুটি নেতিবাচক বিষয় সম্পর্কে নির্মোহভাবে বলতে বলবেন। তিনি যাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন তাঁরা হলেন—ফারুক সোবহান, একজন বড়মাপের শিল্পোদ্যোক্তা, একজন জ্যেষ্ঠ আমলা, একজন সিনিয়র ব্যাংকার, একজন ব্যবসায়ী, যিনি ১৯৭১ সালের আগে করাচিতে বসবাস করতেন, একজন প্রবাসী বাঙালি নারী, যিনি নিয়মিত বাংলাদেশে যাতায়াত করেন ও একজন স্বনামধন্য লেখক। সবার উত্তর কমবেশি অনেকটা একই রকমের। তাঁরা সবাই ৫০ বছরে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং বলেন যে কয়টি খাত এই উন্নয়নে অবদান রেখেছে তার মধ্যে আছে কৃষি, তৈরি পোশাক রপ্তানি, বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশিদের পাঠানো বৈদেশিক মুদ্রা (রেমিট্যান্স), সেবা খাতের উন্নয়ন, যোগাযোগব্যবস্থা, পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচির সাফল্য, নারীর ক্ষমতায়ন ও অধিকসংখ্যায় নারীর শিক্ষাক্ষেত্রে প্রবেশ, দারিদ্র্য বিমোচন, নারী উদ্যোক্তাদের আবির্ভাব, শিক্ষার সামগ্রিক অগ্রগতি, ক্ষুদ্রঋণ ব্যবস্থার সাফল্য, বেসরকারি খাতের প্রসার, স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়ন, ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার, জঙ্গিবাদ দমন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, রপ্তানি আয় বৃদ্ধি প্রভৃতি। সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বকে। তবে সবাই কভিড-১৯ নিয়ে কিছুটা চিন্তিত। তাঁদের মতে, বাংলাদেশের চলমান অগ্রগতি ধরে রাখা সমস্যা হতে পারে যদি এই মহামারিকে সফলতার সঙ্গে শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ মোকাবেলা করতে না পারে। তবে এরই মধ্যে বুধবার বিশ্বব্যাংক আগাম বার্তা দিয়েছে এই বছর বাংলাদেশের অর্থনৈতিক গড় প্রবৃদ্ধি ৫.৬ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে।

বাংলাদেশের অগ্রগতির পথে যেসব সমস্যা আছে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে আধুনিক প্রশাসন চালানোর মতো যোগ্যতা ও মেধাসম্পন্ন আমলাতন্ত্রের অভাব, চরম আয়বৈষম্য, দুর্নীতি দমনে সরকারের ব্যর্থতা, সুষ্ঠু রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের ঘাটতি ইত্যাদি। বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক রেহমান সোবহানের মতে, বাংলাদেশের রাজনীতি বর্তমানে বিত্তবানদের কুক্ষিগত হয়েছে, যার ফলে সুষ্ঠু রাজনীতি ক্ষতিগ্রস্ত  হচ্ছে। 

পাকিস্তানের Sustainable Development Policy Institute (SDP), Islamabad একজন গবেষক আসিফ জাবেদ লিখেছেন, সম্প্রতি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বাংলাদেশের মাথাপিছু গড় আয় (জিডিপি) পাকিস্তান ও ভারতের চেয়ে বেশি ঘোষণা দিয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। তিনি উল্লেখ করেছেন, শুধু আইএমএফ নয়, বিশ্বের অনেক গবেষণা সংস্থা বাংলাদেশের অর্থনীতি সম্পর্কে এই ধরনের ইতিবাচক মন্তব্য করেছেন এবং বলেছেন, বিশ্বের এই কভিড-১৯ জনিত দুঃসময়ে যে ২৩টি দেশ ইতিবাচক অর্থনৈতিক অগ্রগতি বজায় রেখেছে তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত পুঁজি ব্যবস্থাপনা সংস্থা গোল্ডম্যান স্যাস (Goldman Sach) ভবিষ্যদ্বাণী করেছে বাংলাদেশ আগামী দিনে বিশ্ব অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ও শক্তিশালী ভূমিকা রাখবে। আসিফ জাবেদ এটাও বলেছেন যে বাংলাদেশের তরুণ জনসংখ্যাকে দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তর করতে পারলে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক লীগের ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী বাংলাদেশ ২০৩৫ সাল নাগাদ বিশ্বের ২৫তম অর্থনীতির দেশ হয়ে উঠবে। আসিফ জাবেদ বিভিন্ন পরিসংখ্যান ব্যবহার করে বলেছেন, বাংলাদেশের কাছ থেকে পাকিস্তানের অনেক কিছু শেখার আছে। সর্বক্ষেত্রে বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তানের পিছিয়ে পড়ার জন্য আসিফ জাবেদ পাকিস্তান রাষ্ট্রের অনেক ভ্রান্তনীতির সমালোচনা করেন। তিনিও কভিড-১৯ পরবর্তী সময়টা সবার জন্য বিপজ্জনক হিসেবে আখ্যায়িত করেন।

South Asian Forum of Employers-এর প্রথম নির্বাচিত সভাপতি মাজিদ আজিজ বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অগ্রগতি নিয়ে লিখতে গিয়ে অনেক পরিসংখ্যান ব্যবহার করছেন। তিনিও বাংলাদেশের এই অগ্রগতির পেছনে যেসব বিষয় ভূমিকা রেখেছে তা উল্লেখ করে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন নারী শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন ও কৃষির ওপর। ভূয়সী প্রশংসা করেছেন তরুণ প্রজন্মকে, যারা ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে নানা ধরনের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নিজেদের সম্পৃক্ত করেছেন। মাজিদ আজিজ তাঁর প্রবন্ধ শেষ করেছেন শেখ হাসিনার বক্তব্যের একটি উদ্ধৃতি দিয়ে, যেখানে তিনি লিখেছেন, ‘বাংলাদেশ কোনো ধনী দেশ নয়, কিন্তু আমাদের একটা বড় হৃদয় আছে।’

ড. ফরিদা খান যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডো বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক। তিনি তাঁর Taking Stock প্রবন্ধে প্রশ্ন রেখেছেন বাংলাদেশ কি কভিড-১৯ পরবর্তীকালে তার এই চোখ-ধাঁধানো অগ্রযাত্রা ধরে রাখতে পারবে? তিনি লিখেছেন, বাংলাদেশের এই অগ্রগতির পেছনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে তার অবকাঠামোগত উন্নয়ন। বলেছেন, পদ্মা সেতু চালু হলে দেশটির অর্থনৈতিক অগ্রগতি আরো ত্বরান্বিত হবে। ড. ফরিদা খানম ব্যাংকিং সেক্টরের চরম অব্যবস্থাপনা ও দুর্বলতাকে সমালোচনা করতে গিয়ে বলেন, বাংলাদেশে একটি কার্যকর বিরোধী রাজনৈতিক শক্তির কারণে গণতন্ত্র বিকশিত হওয়ার পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাঁর মতে, দেশটির গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলো শক্তিশালী ও কার্যকর করতে পারলে কভিড-১৯ পরবর্তীকালে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অগ্রগতি থেমে থাকবে না। 

বিশ্বখ্যাত ফরেন অ্যাফেয়ার্স ম্যাগাজিনের সম্পাদক ও লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের চায়না ইনস্টিটিউটের গবেষক ডানকান বারটলেট বাংলাদেশের কূটনীতি নিয়ে লিখেছেন। তাঁর লেখার শিরোনাম হচ্ছে, ‘Malice Towards None?’ তিনি তাঁর লেখার শুরুতেই বাংলাদেশের কভিড-১৯ মহামারি ব্যবস্থাপনার প্রশংসা করেছেন এবং মনে করিয়ে দিয়েছেন বাংলাদেশের জনসংখ্যার ঘনত্বকে। তিনি এই মহামারি দমনে ভারতের সহায়তারও প্রশংসা করেছেন। তিনি লিখেছেন বাংলাদেশের স্থপতি, সেই দেশের জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান ‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব কারো সঙ্গে শত্রুতা নয়’— পররাষ্ট্রনীতিতে তাঁর কন্যা শেখ হাসিনা আস্থা রেখেছেন। সে কারণেই বাংলাদেশ পাকিস্তান ছাড়া অন্য সব প্রতিবেশীর সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখতে সক্ষম হয়েছে। তাঁর মতে, পাকিস্তান যদিও বারবার চেষ্টা করছে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতি করতে, তা এখন পর্যন্ত সম্ভব হয়নি, কারণ দুই দেশের মধ্যে অনেক অমীমাংসিত বিষয় রয়ে গেছে। বারটলেটের মতে, বাংলাদেশের সঙ্গে যেমন ভারতের সম্পর্ক ভালো, ঠিক তেমনি চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গেও সম্পর্ক ভালো। তিনি মনে করেন এটি বাংলাদেশের কূটনৈতিক মুনশিয়ানার পরিচয় বহন করে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসা করে তিনি বলেছেন, তাঁর নেতৃত্বগুণে এই কঠিন সময়েও বাংলাদেশ অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যে পড়েনি। তবে তিনি মনে করেন এই কভিড-১৯-এর কারণে যেসব শ্রমিক বেকার হয়েছেন তাঁদের জন্য আবার কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা একটি বিরাট চ্যালেঞ্জ হতে পারে আগামী দিনে। তবে এই সমস্যার মধ্যে প্রতিবেশী দেশগুলোও পড়তে পারে বলে মন্তব্য করেছেন ডানকান বারটলেট।

ড. আহরার আহমেদ যুক্তরাষ্ট্রের সাউথ ডাকোটার ব্ল্যাক হিল স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক। তিনি অন্যদের মতো পরিসংখ্যান দিয়ে দেখিয়েছেন বাংলাদেশের গত ৫০ বছরের অবিশ্বাস্য উত্থান। আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন মাদক, নারী নির্যাতন, বায়ুদূষণ, মাঝেমধ্যে ধর্মীয় উগ্রবাদের মাথাচাড়া দিয়ে ওঠা আর লাগামহীন দুর্নীতি সম্পর্কে। বলেছেন, বিগত ৫০ বছরে বাংলাদেশ বীরের মতো অগ্রসর হয়েছে; কিন্তু অগ্রযাত্রা ধরে রাখতে হলে সর্বক্ষেত্রে চাই যোগ্য ও মেধাসম্পন্ন নেতৃত্ব। তিনি সর্বক্ষেত্রে সহিষ্ণুতার ওপর জোর দেন। 

বিরুপাক্ষ পালের সঙ্গে এই দেশের অনেকেই পরিচিত। একসময় তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদের দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক। তিনি বাংলাদেশের উন্নয়নকে এক বিস্ময় বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি এই বিস্ময়কর অর্জনের জন্য মূলত উদার অর্থনৈতিক নীতি, দূরদৃষ্টিসম্পন্ন জননীতি ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাকে কৃতিত্ব দিয়েছেন। বিরুপাক্ষ পাল বাংলাদেশের অগ্রযাত্রার সূত্রপাত দেশটির স্থপতি শেখ মুজিব করেছেন বলে উল্লেখ করে লিখেছেন, তা হঠাৎ করে থমকে যায় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তাঁকে হত্যা করার মধ্য দিয়ে। কিন্তু তিনি দেশটাকে একটা শক্ত ভিতের ওপর দাঁড় করিয়ে গিয়েছিলেন। তাঁর মতে, বাংলাদেশের অন্যতম বড় অর্জন জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ। অন্যদের মতো তিনিও বাংলাদেশের অন্যান্য ক্ষেত্রে অর্জনের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। দেশটির দুর্বলতার কথা বলতে গিয়ে তিনি অদক্ষ আমলাতন্ত্র, শিক্ষার মান, ধীরগতিসম্পন্ন বিচারব্যবস্থা, মানুষের কর ফাঁকি দেওয়ার প্রবণতা ও পরিবশদূষণের কথা উল্লেখ করেছেন। এসব বিষয় নিয়ে সরকারকে আরো সচেতন হতে হবে বলে তিনি মত প্রকাশ করেছেন। তিনি আরো বলেছেন, দেশটিতে দারিদ্র্য নিত্যসঙ্গী হিসেবে অনেক বিশ্লেষক একসময় মনে করতেন, তাঁরা ভুল প্রমাণিত হয়েছেন। বাংলাদেশের যা কিছু অর্জন তার বেশির ভাগ হয়েছে গত ১২ বছরে, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে।

পাকিস্তানের একটি গুরুত্বপূর্ণ ম্যাগাজিনে বাংলাদেশের প্রশংসা শুনলে সবারই ভালো লাগে। এরই মধ্যে লন্ডনের ইকোনমিস্ট, যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল, সংযুক্ত আরব আমিরাতের গালফ নিউজ, ভারতের অনেক গণমাধ্যম বাংলাদেশের ৫০ বছরে উন্নয়নের ভূয়সী প্রশংসা করেছে। তবে একটি আশঙ্কার কথা না বললেই নয়, আর তা হচ্ছে, সাম্প্রতিককালে অনেক অযোগ্য ও দুর্নীতিবাজ লোককে গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন করা হয়েছে, যাঁরা সরকারকে নানাভাবে বিপদের মুখে ফেলতে পারেন। বঙ্গবন্ধুকন্যার হাত ধরে বাংলাদেশ তার স্বাধীনতার শতবর্ষ উদযাপন করবে না। সুতরাং আগামী ৫০ বছর যেন বিগত ৫০ বছরের চেয়ে আরো আলোকোজ্জ্বল হয় তার পরিকল্পনা এখন থেকেই করতে হবে। জয়তু শেখ হাসিনা। জয়তু বাংলাদেশ। দীর্ঘজীবী হোক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের স্মৃতি।

লেখক : বিশ্লেষক ও গবেষক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *