স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ধ্বংসাত্মক ঘটনা ঘটানোয় হেফাজতে ইসলামের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে ১৪ দলের শরিকরা। এখনই দলটির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া না হলে আগামীতে আরও খারাপ পরিস্থিতি তৈরি হবে বলে এই দলগুলোর নেতারা সতর্ক করেছেন।
২৬ মার্চ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সফরের বিরোধীতা করে হেফাজতের বিক্ষোভ কর্মসূচি থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চট্টগ্রাম, ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক ধ্বংসাত্মক ঘটনা ঘটানো হয়। এসব ঘটনা শুধু মোদীর বিরোধীতা বা সরকার বিরোধী কোনো ঘটনা নয় বলে ১৪ দলের নেতারা মনে করছেন। উনরা এটাকে স্বাধীন রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে, মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেওয়া হিসেবে দেখছেন।
১৪ দল মনে করেন, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে রাষ্ট্রবিরোধী এ ধরনের ঘটনা ঘটানোর পর এদের আর ছাড় দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। জঙ্গিবাদকে যেভাবে দমন করা হয়েছে সেভাবে এদের দমন করার কথাও বলেন নেতাদের কেউ কেউ।
এদিকে এ জোটের অনেক নেতার অভিযোগ, ধ্বংসাত্মক ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের নামে মামলা হচ্ছে না। তাদের বাদ দিয়ে অন্যদের ধরা হচ্ছে। যারা এই তাণ্ডবের সঙ্গে জড়িত, যারা নেতৃত্ব পর্যায়ে থেকে নির্দেশ দিয়েছেন তাদের প্রত্যেকের নামে মামলা দিয়ে গ্রেফতার করে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি সাম্প্রদায়িক ও ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম গণমাধ্যমকে বলেন, তারা যে ধ্বংসাত্মক ঘটনা ঘটিয়েছে তার জন্য আইনি ব্যবস্থা নিয়ে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। স্বাধীনতার ৫০তম বার্ষিকীতে তারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে। তারা স্বাধীনতা মানেনি, পাকিস্তানের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ধ্বংসাত্মক তৎপরতা চালিয়েছিলো। আবারও সেই ঘটনা ঘটিয়েছে সুবর্ণজয়ন্তীতে। এরা এদেশকে তালেবানি রাষ্ট্র বানাতে চায়। শিশুদের তারা ধ্বংসাত্মক কাজে ব্যবহার করছে। এটা মানবতাবিরোধী অপরাধ। এদেরকে কঠোরভাবে দমন করতে হবে।
আওয়ামী লীগের আরেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে তারা তাণ্ডব চালিয়েছে। ২৬ মার্চ থেকে পরপর তিন দিন তাদের এই তাণ্ডব চলেছে। জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যরা জড়িত তারা কেউই ছাড় পাবে না। এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হলে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা আর ঘটানোর সাহস পাবে না।
এ বিষয়ে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন গণমাধ্যমকে বলেন, হেফাজত যে ঘটনা ঘটিয়েছে তাতে এখন রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে এর জন্য কি করতে হবে। তারা সরকারের বিরুদ্ধে না, রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কাজ করে যাচ্ছে। যারা এই তাণ্ডব করেছে তাদের বাদ দিয়ে অন্যদের নামে মামলা দেওয়া হচ্ছে। হেফাজতের নেতা বাবুনগরী, মামুনুল হক কাউকে বাদ দেওয়া যাবে না। তাদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। আপস করার কোনো সুযোগ নেই। এখনই ব্যবস্থা না নেওয়া হলে আগামীতে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।
জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, এর আগে ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বর এবং এবার ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চট্টগ্রামে তারা প্রমাণ করেছে যে তারা স্বাধীনতা বিরোধী, ৭১ এর পরাজিত শক্তি, পাকিস্তানপন্থীদের পক্ষে মাঠে কাজ করছে। জামায়াত, বিএনপির সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে আছে। বিএনপি এর আগেও তাদের সমর্থন করেছিলো, এবারও সমর্থন করছে। মোদীর সফরের ছুতায় তারা কার্যত বাংলাদেশে, মুক্তিযুদ্ধ, শিল্প-সংস্কৃতির বিরুদ্ধে, সংবিধানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। রাষ্ট্রীয় অফিস-আদালতে ভাঙচুর করে তারা সংবিধান ও রাষ্ট্রবিরোধী, মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী কাজ করেছে। এদের সঙ্গে রাজনৈতিক লেনদেন হবে আত্মঘাতী। দুধ কলা দিয়ে সাপ পুষলে ছোবল মারবেই। জঙ্গিদের যেভাবে দমন করা হয়েছে সেভাবে এদের নির্মূল করতে হবে।
বাংলাদেশ জাসদের সভাপতি শরিফ নুরুল আম্বিয়া বলেন, হেফাজতের সঙ্গে রাজনৈতিক সখ্যতা বাদ দিতে হবে। তাণ্ডবে যারা নেতৃত্ব দিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দিতে হবে। বলা হচ্ছে ব্যবস্থা নেওয়া হবে, কিন্তু দায়ীদের ধরা হচ্ছে না। সমঝোতা থেকে সরে এসে এদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। নিষিদ্ধ করতে হবে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি। সরকার জামায়াতকে এখনও নিষিদ্ধ করতে পারেনি, যুদ্ধাপরাধী দল হিসেবে জামায়াতের বিচার করতে পারেনি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বললে এগুলো করতে হবে। তা না হলে পরিস্থিতি ভালো হবে না।
ন্যাপের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, প্রথমত এদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক পদক্ষেপ নিতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের যে শক্তি তাদের রাজনৈতিকভাবে সংগঠিত করে জনগণের প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। দ্বিতীয়ত স্বাধীন দেশে সাম্প্রদায়িক ধর্মীয় রাজনীতি কেউ করতে পারবে না। আইন করে এই রাজনীতি বন্ধ করতে হবে।
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ উদযাপন উপলক্ষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাংলাদেশ সফরের বিরোধীতা করে দেশজুড়ে বিক্ষোভ করে হেফাজতে ইসলামী বাংলাদেশ। বিক্ষোভে অংশ নেওয়া নেতাকর্মীরা অগ্নিসংযোগ করে বিভিন্ন সরকারি স্থাপনায়। নানা জায়গায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে বেশ কয়েকজনের প্রাণহানি ঘটলে প্রতিবাদে হরতাল পালন করে সংগঠনটি।