২৭ মার্চ সাতক্ষীরার শ্যামনগরে আসছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি শ্যামনগর উপজেলার ঈশ্বরীপুর গ্রামের যশোরেশ্বরী কালীমন্দির পরিদর্শন করবেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান।
তিনি জানান, ভারতীয় হাইকমিশনের কর্মকর্তা ও মোদির নিরাপত্তা দলের সদস্যরা গত সপ্তাহেই সাতক্ষীরা সরেজমিনে ঘুরে দেখে গেছেন এবং নরেন্দ্র মোদীর নিরাপত্তার বিষয়ে যাবতীয় ব্যবস্থায় সন্তুষ্ট প্রকাশ করেছেন। মন্দিরের অবকাঠামো, যাতায়াত পথ, নিরাপত্তাসহ সবকিছু রেকি করে গেছেন তারা। বর্তমানে সাতক্ষীরা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের পক্ষ থেকে ওই মন্দির এলাকায় নিরাপত্তার ব্যাপারে সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে যশোরেশ্বরী কালীমন্দির ও এর আশপাশ এলাকা বিশেষ গোয়েন্দা নজরদারিতে আনা হয়েছে।
তাছাড়া ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ২৭ মার্চ যশোরেশ্বরী কালীমন্দিরে হেলিকপ্টারে আসবেন এবং সেই জন্য এরই মধ্যে সেখানে তিনটি হেলিপ্যাড প্রস্তুত করা হয়েছে । বাংলাদেশের পাশাপাশি ভারতের ও পৃথক নিরাপত্তা টিম ঘটনাস্থল সফর শেষ করেছে এবং মোদীর নিরাপত্তার ব্যাপারে সব ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পূর্ণ করেছেন বলে জানা গেছে।
এদিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আগমনের খবরে সাতক্ষীরার শ্যামনগরে মতুয়াদের মধ্যে বিরাজ করছে উৎসবমূখর পরিবেশ। জেলা মতুয়া সম্প্রদায়ের সভাপতি ও শ্যামনগর উপজেলা সভাপতি কৃষ্ণান্দ মুখার্জী বলেন, নরেন্দ্র মোদির আগমন উপলক্ষে মতুয়া সম্প্রদায়ের মধ্যে আনন্দের বন্যা বইছে।
যশোরেশ্বরী কালীমন্দিরের পুরোহিত দিলীপ মুখার্জী জানান, এ মন্দিরে প্রতি বছর শ্যামা কালীপূজা অনুষ্ঠিত হয়। তিনি জানান, এ মন্দিরে প্রতি বছর শ্যামা কালীপূজা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। এছাড়া প্রতি শনি ও মঙ্গলবার এ মন্দিরে পূজা অর্চনা হয়ে থাকে। এসব পূজা অর্চনায় শত শত ভক্তের সমাগম ঘটে বলে জানান তিনি।
উল্লেখ্য যে, সাতক্ষীরা জেলার বিভিন্ন স্থানে মতুয়া সম্প্রদায়ের ২৫ হাজারেরও বেশি মানুষ রয়েছেন। তাদের মধ্যে কেবলমাত্র শ্যামনগর উপজেলায় রয়েছেন ১৭ হাজারেরও বেশি মানুষ। ২৭ মার্চ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে নরেন্দ্র মোদির এ মন্দির সফর যথেষ্ট ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে ধারণা করছে এপার ওপার বাংলার রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
প্রসঙ্গত, আগামী ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। পরদিন ২৭ মার্চ হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কয়েকটি তীর্থস্থান পরিদর্শনের কথা রয়েছে তার।
ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকার সূত্রে জানা যায়,
২৭ তা তোরিখ গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পৈতৃক বাড়ি দেখতে যাওয়ার কথা মোদীর। সূত্রের দাবি, এই একই সফরে গোপালগঞ্জের ওড়াকান্দি ঘুরে আসতে চান নরেন্দ্র মোদী। ১৮১২ (মতান্তরে ১৮১১) সালে ১১ মার্চ ওড়াকান্দিতে জন্ম মতুয়া ধর্মমতের প্রবক্তা হরিচাঁদ ঠাকুরের। তাঁর বাণী ও নির্দেশাবলি গোটা বাংলায় ছড়িয়ে পড়েছিল তাঁর যে পুত্র গুরুচাঁদ ঠাকুরের হাত ধরে, তাঁরও জন্মস্থান ওড়াকান্দি। প্রত্যন্ত এই গ্রামে একটি মন্দির রয়েছে, যা মতুয়া সম্প্রদায়ের কাছে সর্বোচ্চ মর্যাদার তীর্থস্থান হিসেবে গণ্য হয়। নরেন্দ্র মোদী এখানে এসে হরিচাঁদ-গুরুচাঁদকে প্রণাম করে এলে পশ্চিমবঙ্গের মতুয়া-ভোট টানা বিজেপির পক্ষে সহজ হবে বলে মনে করছেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। কারণ ভারতের আর কোনও প্রধানমন্ত্রী সেখানে যাননি। যদিও পরিকাঠামোগত কিছু অসুবিধা থাকায় শেষ পর্যন্ত নরেন্দ্র মোদী আসতে পারবেন কি না, তা নিয়ে আলোচনা চলছে। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও ঢাকায় ভারতীয় হাই কমিশন বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্যে কিছু বলছে না। তবে বিজেপি সূত্রের দাবি, বনগাঁর সাংসদ শান্তনু ঠাকুরও ওড়াকান্দি সফরে মোদীর সঙ্গে থাকতে পারেন। এ মাসে ওড়াকান্দি যাচ্ছেন কি না, জানতে চাইলে শান্তনু খানিকটা থমকে যান। তার পরে বলেন, “ওড়াকান্দি থেকে আমন্ত্রণ এসেছে, কিন্তু যাওয়ার বিষয়টি এখনও চূড়ান্ত হয়নি।”