করোনার সেকেন্ড ওয়েভ থেকে দেশবাসীকে রক্ষায় সরকার যথাযথ প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে উল্লেখ করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা এখন থেকেই সচেতন।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেন,‘এই ধাক্কা (করোনার সেকেন্ড ওয়েভ) আমাদের দেশেও আসতে শুরু করেছে। আমরা এখন থেকেই সচেতন।’
তিনি বলেন, ‘হয়তো গতবার (করোনা আক্রমণের শুরুতে) হঠাৎ করে আসাতে অনেক কাজ আমরা করতে পারিনি। এবার আমরা আরো বেশি প্রস্তুতি নিয়েছি।’
তিনি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার এবং বাইরে মাস্ক ব্যবহারের জন্য জনগণের প্রতি তাঁর আহবান ও পুনর্ব্যক্ত করেন।
প্রধানমন্ত্রী এবং সংসদ নেতা শেখ হাসিনা আজ একাদশ জাতীয় সংসদের দশম (মুজিববর্ষ উপলক্ষে বিশেষ) অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাস সারা পৃথিবীজুড়ে মহামারী আকারে দেখা দিয়েছে। এখন আবার সেকেন্ড ওয়েভ এবং ব্যাপকভাবে সেটা ছড়িয়ে পড়েছে ইউরোপ এবং আমেরিকার বিভিন্ন জায়গায়।
তিনি বলেন, যে ভ্যাকসিন আবিষ্কার হচ্ছে বা যেটা নিয়ে রিসার্স চলছে, আমরা আগাম বুকিং দিয়েছি। যাতে সেটা চালু হওয়ার সাথে সাথে বাংলাদেশের মানুষের জন্য আমরা আনতে পারি। সে ব্যাপারে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। কাজেই সেই দিক থেকে আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছি।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘যেখানে বেশি লোকজনের সমাগম সেখানে যাওয়ার সময় অবশ্যই মাস্ক পরবেন, সেটাই আমি সবাইকে অনুরোধ জানাচ্ছি এবং গরম পানি খাওয়া, একটু উষ্ণ গরম পানি দিয়ে গার্গেল করা, সব সময় হাত ধুয়ে একটু পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকা, ঘরবাড়ি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা অর্থাৎ স্বাস্থ্য সুরক্ষা রাখার নিয়মাবলি সবাই যেন ভালো ভাবে মেনে চলেন।’
তিনি বিরোধী দলীয় উপনেতা গোলাম মোহম্মদ কাদেরের ভাষণে বিদ্যালয় খুলে দেয়ার প্রস্তাবে দ্বিমত পোষণ করে বলেন, ‘বাচ্চাদেরতো আমরা মৃত্যুর ঝুঁকিতে ফেলে দিতে পারিনা।’
তিনি বলেন, আমেরিকায় একটা পর্যায়ে স্কুল খুলে দিয়ে পরে তারা বন্ধ করতে বাধ্য হয়। ইউরোপে তথা ইংল্যান্ডেও এমন ঘটনা ঘটেছে। তার কারণ সেখানে ব্যাপক হারে সংক্রমণ বেড়ে যায়।
শেখ হাসিনা বলেন, যখনই করোনার প্রকোপ কমে গেল আমরাও একটা প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম স্কুল খুলে দেয়ার। আমি ও শিক্ষামন্ত্রী আলোচনা করেছিলাম। কিন্তু তারপরে দেখলাম আবার ইউরোপে প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে।
তিনি বলেন, ছেলে-মেয়েরা, শিক্ষকরা বা বাচ্চাদের নিয়ে তাঁদের অভিভাবকরা স্কুলে যাবেন। সেখানে এই ঝুঁকিটা আমরা ছেলে-মেয়েদের জন্য কেন নেব?
স্কুলে না যেতে পারায় বাচ্চাদের কষ্টের বিষয়টি অনুধাবন করে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, ‘আগে একান্নবর্তী পরিবার ছিল সবাই একসঙ্গে চলতো। এখন সেই সুযোগটা কম। সেজন্য বাচ্চাদের খুবই কষ্ট, এতে কোন সন্দেহ নাই। তারপরও তাঁদেরতো মৃত্যুর ঝুঁকিতে আমরা ঠেলে দিতে পারিনা। সেটাও আপনাদের মাথায় রাখতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে অটোপ্রমোশনে দেশব্যাপী সৃষ্ট মিশ্র প্রতিক্রিয়াতেও নিজস্ব অভিমত ব্যক্ত করেন।
তিনি বলেন, ‘অটোপ্রমোশনের ব্যাপারে আমি বলবো- আগেতো আমাদের সেমিস্টার সিস্টেম ছিলনা। আমি প্রথমবার সরকারে এসে এই সেমিস্টার সিস্টেম চালু করি। কাজেই সারা বছর তারা যে পরীক্ষা দিয়েছে সেটার ভিত্তিতেই একটা রেজাল্ট দেয়া। এটাতো ইংল্যান্ডও দিয়েছে, পৃথিবীর অনেক দেশই দিয়েছে। এতে খুব বেশি একটা ক্ষতি হয়, তা নয়।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তারপরেতো স্কুল খুলবে, পড়বে, পরীক্ষা দেবে যারা টিকে থাকবে। নইলে আবার পরীক্ষা দেবে। সে সুযোগতো রয়েছে। কাজেই একটা অটোপ্রমোশনে খুব যে বেশি ক্ষতি হয়ে গেল, এটা কিন্তু ঠিক নয়।’
তিনি উদাহারণ দিয়ে বলেন, একদিন বসে লিখে পাশ করেও সে পাশই পাশ আর সারাবছর পরীক্ষা দিয়ে যে রেজাল্ট সে রেজাল্ট কিছু না এটাতো হতে পারেনা। বরং সেইভাবে যদি সারাবছরের রেজাল্ট একসঙ্গে করে প্রমোশন দিয়ে দেয়া যায় তাহলেওতো আমি মনে করি তাঁদের মেধার পরিচয়টা পাওয়া যায়। শেখ হাসিনা তাঁর বক্তব্যের স্বপক্ষে বলেন,‘আরো ভালো রেজাল্ট পাওয়া যায় তাতে।’
প্রধানমন্ত্রী সব এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানকে সরকারিকরণ না করার কারণও ব্যাখ্যা করেন। তিনি বলেন, ‘স্কুল করার একটা নিয়ম আছে। অনেকে সেই নিয়ম মানেননি। যেখানে সেখানে যখন তখন একটা স্কুল খুলে ফেলেছেন। হয়তো ছাত্র-ছাত্রীই নাই সেখানে। এরকমও আছে ছাত্র-ছাত্রীদের থেকে শিক্ষকের সংখ্যাও বেশি। নিয়মটা স্কুল এবং মাদ্রাসা সবার জন্যই সমানভাবে প্রযোজ্য।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার সবাইকে শিক্ষা নীতিমালার মধ্যে আনার যে উদ্যোগ নিয়েছে তা অব্যাহত থাকবে। কারণ তাঁর সরকার চায় দেশ আরো এগিয়ে যাক।
প্রধানমন্ত্রীর সমাপনী বক্তব্য শেষে তাঁর অনুরোধে ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি সংবিধান সংশোধনকালে জাতীয় সংসদে জাতির পিতার দেয়া ভাষণটি বাজিয়ে শোনানো হয়।