জেলায় প্রতিদিন বিভিন্ন প্রজাতির শিকার করা সংখ্যায় প্রায় এক হাজার পাখি বিক্রি হচ্ছে। আশি^নে শীতের ইমেজ শুরু হোক আর না হোক মেহেরপুরের খাল বিলে মাছ শিকার করতে আশা পাখি শিকারে পরিণত হচ্ছে। পেশাদার পাখি শিকারীদের পাতা ফাঁদে এবং শখের শিকারীদের গুলিতে প্রাণ হারাচ্ছে প্রকৃতির প্রাণ পাখি। পরিবেশ ও জীববৈচিত্র রক্ষায় পাখি শিকার নিষিদ্ধ হলেও মেহেরপুর সদরসহ জেলার তিন উপজেলার খাল-বিল, নদীতে অবাধে চলছে পাখি শিকার। স্থানীয়দের অভিযোগ, সঠিক নজরদারি এবং সচেতনতার অভাবে বাড়ছে পাখি শিকার। এতে নষ্ট হচ্ছে জীববৈচিত্র।
স্থানীয়রা জানান, নদী-নালা ও বিভিন্ন জলাশয়ের পানি কমতে শুরু করেছে। এ সময় জলাশয় ও আমন ধানের জমিতে মাছ ও পোকা খেতে ভিড় জমানো বিভিন্ন প্রজাতির পাখি শিকারিদের জালে ধরা পড়ছে। ফাঁদে ধরা পাখি স্থানীয় হাটবাজারে ফেরি করে বিক্রি করতে দেখা যায়। গতকাল শনিবার মেহেরপুর জেলা শহরের বড়বাজার এক পাখি বিক্রেতাকে অবাধে ঝুড়িভর্তি বক বিক্রি করতে দেখা যায়। পাখি বিক্রেতা হবিবর জানান- ধলার বিলে এসব পাখি শিকারীদের জালে ধরা পড়ছে। তিনি সেই শিকারীদের কাছ থেকে কিনে এনে বিক্রি করছেন। পাখি শিকার ও বিক্রি এটা যে দ-নীয় অপরাধ, তাও তিনি জানেন তবে জীবীকার প্রয়োজনেই বাধ্য হয়ে বিক্রি করছেন বলে দাবি করেন। তিনি জানান ধলার বিলপাড়ের মানুষ প্রতিদিন অন্তত এক হাজার করে বক ফাঁদে ধরা পড়ছে। ওই পাখি তারমতো অনেকেই কিনে বিভিন্ন গ্রাম ও শহরে ফেরি করে বিক্রি করছেন।
প্রতিদিন শিকারীদের সংখ্যা বাড়ছে। পাখি ধরার নিত্য নতুন কৌশলও উদ্ভাবন হচ্ছে। বিভিন্ন ফাঁদ, বন্দুক অচেতন ওষুধসহ বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করা হচ্ছে পাখি শিকারে। শহর থেকে গ্রামে সর্বত্র চুপিসারে বিকিকিনি হচ্ছে অতিথি পাখি। অভিনব কৌশলে শিকারীরা পাখি বিক্রি করছে খোদ শহরেও। ।
বিশেষজ্ঞদের মতে এসব পাখি খেয়ে মানব দেহে বার্ডফ্লু ছড়িয়ে পড়তে পারে। যদিও পাখি রান্না করে খেলে বয়েলের কারনে বার্ডফ্লু ছড়ায় না। পাখি শিকার ও নিধন বন্ধের আইন থাকলেও এর কার্যকরী ভূমিকা না থাকায় পাখি শিকারীদের তৎপরতা বন্ধ করা যাচ্ছে না বলে সাধারণ মানুষদের অভিযোগ।
সমাজ কর্মি মাহবুবুল হক মন্টু জানান একশ্রেণির লোভী মানুষ এলাকার বিভিন্ন খাল-বিলে নানাভাবে পাখি শিকার করে স্থানীয় হাট-বাজারে বিক্রি করছে। ভোররাত থেকে তারা পাখি শিকার করে। আমাদের জীববৈচিত্র টিকিয়ে রাখার জন্য পাখি বাঁচিয়ে রাখা জরুরি।
মেহেরপুর জেলা বার্ড ক্লাবের সভাপতি এম এ মুহিত বলেন, প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় অতিথি পাখি শিকার বন্ধে সামাজিক আন্দোলন আজ বেশি প্রয়োজন। কঠোর আইন থাকা সত্ত্বেও তা প্রয়োগ করা হচ্ছে না। তিনি এ ব্যাপরে সুশীল সমাজকে এগিয়ে আসার আহবান জানান।
পাখি শিকার রোধের বিষয়ে জানতে চাইলে মেহেরপুর জেলা বন কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাফরুল্লাহ জানান, লোকবল সংকটের কারণে সবদিকে নজর দেওয়া সম্ভব হয় না। তাছাড়া সরকারিভাবে পরিবহন সুবিধাও নেই। তারপরও পাখি শিকার বন্ধে আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ মুনসুর আলী জানান, পাখি শিকার জীববৈচিত্রের জন্য ক্ষতিকর। এ বিষয়ে নিয়মিত অভিযান চলছে। কোনও শিকরিী হাট-বাজারে যাতে পাখি বিক্রি করতে না পারে সে বিষয়ে নজরদারি আছে।