শেখ হাসিনার মতো দক্ষ, দূরদর্শী, বিচক্ষণ, ন্যায়ের প্রতি অবিচল প্রতিশ্রুতিসম্পন্ন বাংলার শোষিত জনগণের জননী, সচল-সজীব, সপ্রাণ কিংবদন্তির একজন মানুষকে নিয়ে দুই লাইন লিখতে আর কার কি হয় জানি না আমার মাথায় জট লেগে যায়। এর শুরুটা কোথা থেকে করব আর শেষটা কোথায় করব তা স্থির করতে পারছি না। একজন ব্যক্তির ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয় কাজের মূল্যায়ন হয়তো অধ্যায়ভিত্তিক আলোচিত হতে পারে কিন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুধু একজন সরকারপ্রধান নন, তিনি শুধু একের পর এক মাইলফলক তৈরি করা মানুষ নন, শুধু মানবতার মূর্ত প্রতীক বা একটি জাতির অগ্রযাত্রার রূপকার নন তিনি অসাধারণ এক মানুষ যার অনন্য দক্ষতা, অসাধারণ দূরদর্শিতা ও অদম্য ইচ্ছাশক্তির প্রকাশ করা কঠিন। এমন একজন মানুষকে নিয়ে কতভাবে কত সুদীর্ঘভাবে লেখা যায় তার হিসেব করা কঠিন। এটি আমার জন্য আরও কঠিন এজন্য যে আমি তার ছাত্র জীবনের সহপাঠী। আমি তাকে প্রধানমন্ত্রী বা রাজনৈতিক দলের প্রধান কিংবা আমার নীতি-আদর্শ ও স্বপ্ন বাস্তবায়নের প্রতীকই নন তাকে চিনি আমি অর্ধশতক ধরে। আমার নিজের সঙ্গে-আমাদের ছাত্রলীগের কর্মীদের সঙ্গে তার অসাধারণ সব স্মৃতি আছে। এখন মাঝে মাঝে ভাবি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের দোতালায় প্রজাপতির মতো উড়ে বেড়ানো সেই মেয়েটির হাতে একদিন বঙ্গবন্ধুর সৃষ্টি করা বাঙালির রাষ্ট্রটিকে সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তোলার সুমহান দায়িত্ব পড়বে তা-কি তখন একবারও ভেবেছি? ঘর সংসার করে, লেখাপড়া চালিয়ে রাজনীতিতে সক্রিয় থাকার যে অসাধারণ মানুষটি আমাদের সহপাঠিনী ছিলেন এবং আমরা যার আচার-আচরণে ভাবতেই পারতাম না যে তিনি বঙ্গবন্ধুকন্যা সেই মানুষটি এখনও সেদিনের মতোই আত্মবিশ্বাস নিয়ে চলেন, মুখের সেই হাসিটা এখনও অমলিন এবং আত্মপ্রত্যয়ে সুদৃঢ় এই মানুষটি এই জাতিকে খাদের নিচ থেকে তুলে আনার যে সুকঠিন দায়িত্ব পালন করছেন তার বিবরণ দু-চারটি অনুচ্ছেদ বা পাতায় তুলে ধরা যাবে না। আশা করি কেউ না কেউ তার জীবনালেখ্য রচনা কারে তাকে যথাযথভাবে মূল্যায়ন করার চেষ্টা করবেন।
আমার এই অক্ষমতা রয়েছে যে তার দৈনিন্দিন জীবনের সবটা দেখার সৌভাগ্য আমার হয় না। অতীতের কিছু স্মৃতি এবং তৃতীয় সূত্রে পাওয়া কিছু তথ্যের বাইরেও গত আড়াই বছরে সরকারে থেকে তাকে যতটা দেখেছি তাতে একটি মহাগ্রন্থ লিখেও সব বিষয় যথাযথভাবে বিস্তারিত উপায়ে প্রকাশ করা যাবে না। তবুও একটি আলোচনার মুখবন্ধ হিসেবে আমি একটু বলতে চাই যে, পঁচাত্তরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করে বাংলাদেশটাকে হত্যা করে পাকিস্তান বানানোর যে জঘন্য ষড়যন্ত্র নগ্নভাবে করা হয়েছিল তার বিরুদ্ধে এই জাতির ঘুরে দাঁড়ানো বা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তোলা শুধু দুঃসাধ্য ছিল না বা অসম্ভব ছিল না যদি আমাদের একজন শেখ হাসিনা না থাকতো। জাতি হিসেবে আমরা ভাগ্যবান যে পঁচাত্তরের ঘাতকরা ১৫ আগস্ট বা তার পরপরও শেখ হাসিনাকে হত্যা করার সুযোগ পায়নি। তবে শেখ হাসিনা যে তাদের পাকিস্তানিকরণ চক্রান্তের প্রধান শত্রু তা এরই মাঝে অন্তত একুশবার প্রমাণিত হয়েছে। পঁচাত্তরে তাদের উদ্দেশ্য ছিল বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করার পর জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করে বাংলাদেশকে হত্যা করা আর এখন তাদের গর্হিত লক্ষ্য শেখ হাসিনাকে হত্যা করে বাংলাদেশকে হত্যা করা। ওরা বুঝেছে যে বঙ্গবন্ধু বাঙালি শোষিত জনগোষ্ঠীর জন্য যে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে গেছেন তাকে পিতার স্বপ্নের রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলছেন শেখ হাসিনা। তাদের এই গাত্রদাহ এমন যে এখনও পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই ও তাদের বাংলাদেশি দোসরদের ষড়যন্ত্র বিশ্বজুড়ে বিস্তৃত নেটওয়ার্কের মাধ্যমে কূটচক্র বিস্তার করছে। আমার ভয়টা আরও একটু বাড়ছে এজন্য যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এখন প্রায়ই বাঙালি জাতির অগ্রগতির ইশতেহার হিসেবে জাতির পিতার দ্বিতীয় বিপ্লবের কথা বলছেন। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার দ্বিতীয় কারণ ছিল এটি। তিনি বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করার দায়ে তাদের হত্যা তালিকায় ছিলেন এবং দ্বিতীয় বিপ্লব কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে গিয়ে তাদের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সাম্রাজ্যবাদীদেরও চক্ষুশূল হয়ে ওঠেন। আমাদের প্রধানমন্ত্রী বলছেন যে বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বিপ্লব বাস্তবায়িত করতে পারলে আবকের বাংলাদেশ বিশ্বের কাছে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকত। এর ফলে বাংলাদেশবিরোধী পাকিস্তানপন্থিদের সঙ্গে দেশীয় সাম্রাজ্যবাদের সহযোগীরাও আরও যুক্ত হয়েছে।
এখন থেকে ৫০ বছর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের ছাত্রী শেখ হাসিনা সম্পর্কে তার শিক্ষক প্রফেসর রফিকুল ইসলাম এখনও বলেন “শেখ হাসিনার মধ্যে কোন অহমিকা নেই এখনও সে আমার ছাত্রী’। প্রয়াত আনিস স্যারও এ কথা বলতেন। মনে হচ্ছে আমাদের এই দুই স্যারই তাদের ছাত্রী শেখ হাসিনার বাংলা বিভাগের জীবনটাকে একদমই ভুলতে পারেননি। একটি বহুল প্রচারিত ভিডিও সবারই নজরে পড়ার কথা যেখানে প্রফেসর আনিসুজ্জামান স্যার লাল কার্পেটের ওপর দিয়ে হাঁটছেন আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুর্বা ঘাস দিয়ে হাঁটছেন এবং তিনিই তার শ্রদ্ধেয় শিক্ষকের চাদরটা ঠিক করে দিচ্ছেন। এসব ছোট ছোট ঘটনার মধ্য দিয়ে আপনারা হয়তো লক্ষ্য করে থাকবেন যে শেখ হাসিনা তার শিক্ষকদের কি গভীর শ্রদ্ধা প্রদর্শন করেন। আমরা সতীর্থরা ৭০ সালেই সেটি দেখছি। এটাও দেখেছি যে তিনি অতি সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের সাধারণ ছাত্রলীগ কর্মী হিসেবে শিক্ষাজীবনটা অতিক্রম করেছেন। সেই ছাত্র জীবনের সময়টার পর ৮১ সালে তিনি যখন দেশে ফিরে আসেন তারপর ১৯৮৩ সালের মার্চ মাসে তার সঙ্গে আমার আবার দেখা হয়। আমি মহাখালীতে তাদের বাসায় একজন সাংবাদিক হিসেবে একটি সাক্ষাৎকার নিতে গিয়েছিলাম। সেদিন তিনি নিজের হাতে চা বানিয়ে শুধু সাক্ষাৎকার দেননি বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের অসাধারণ স্মৃতিগুলো রোমন্থন করেন। দেখেছি অতি মধ্যবিত্ত পরিবারের বধূ হিসেবে মহাখালীর সরকারি বাসভবনে একজন পরমাণু বিজ্ঞানীর স্ত্রী ও সন্তানের মা হিসেবে কতোটা সাধারণ জীবনযাপন করেছেন ও কত সরলভাবে নিজের রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জের কথাও বলেছিলেন।
আমরা যখন স্বাধীনতার ৫০ বছরের দ্বারপ্রান্তে তখন একটু হিসেবে করতেই হচ্ছে যে স্বাধীনতার পরপরই যে দেশটাকে তলাহীন ঝুড়ির দেশ বলে চিহ্নিত করা হয়েছিল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সেই দেশটিকে কি অসাধারণ দক্ষতা ও দূরদর্শিতায় একটি উন্নয়নমুখী দেশে রূপান্তরের পথে যাত্রা শুরু করিয়েছিলেন। ভাবুন তার হাতে আইিটিইউ-ইউপিইউ এর সদস্যপদ লাভের কথা। স্মরণ করুন ১৯৭৫ সালের ১৪ জুন তিনি বেতবুনিয়ায় উপগ্রহ ভূ-কেন্দ্র উদ্বোধন করেছিলেন। বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা, প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ, ২৫ বিঘা জমির খাজনা মওকুফ, ১০০ বিঘা জমির সিলিং নির্ধারণ ইত্যাদি সব বিষয় নিয়ে আলোচনা করে শেষ করা যাবে না। তবে একটি কথা বলতেই হবে যে জাতির পিতা সত্যিকারের সোনার বাংলা গড়ে তোলার জন্য দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচি ঘোষণা করে দেশটির প্রকৃত গন্তব্য নির্ধারণ করে দিয়ে গেছেন। বস্তুত ডিজিটাল বাংলাদেশ এর বীজ বপন করেন। যারা মনে করেন যে ডিজিটাল বাংলাদেশ মানে চতুর্থ শিল্প বিপ্লব, রোবোটিক্স, আইওটি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ইত্যাদি বা পঞ্চম-ষষ্ঠ বিপ্লব তারা ভুল করছেন। ডিজিটাল বাংলাদেশ মানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সোনার বাংলা-মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ভাষায় সুখী, সমৃদ্ধ উন্নত, দারিদ্র্যমুক্ত ও বৈষম্যহীন একটি বাংলাদেশ। বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে বঙ্গবন্ধু এই সোনার বাংলার স্বপ্নটা এই জাতিকে দিয়ে গেছেন।
স্মরণে রাখুন পচাত্তারে জাতির পিতাকে সপরিবারে ও জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করার পর আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠনসমূহ একেবারে বিধ্বস্ত হয়ে পড়ার ৬ বছর পর শেখ হাসিনা পোড়ামাটিতে চারাগাছ রোপণের কাজ দিয়ে তার বর্তমান রাজনৈতিক জীবনের শুরু করেন। ৮১ থেকে সুদীর্ঘ্য ১৫ বছর লড়াই করে ৯৬ সালে তিনি যখন জাতির পিতার দেশটি পরিচালনার দায়িত্ব পান তখন সেটিকে পাকিস্তান বানানোর সকল আয়োজন সম্পন্ন করে রাখা হয়েছে। একদিকে উল্টা করা পাটিকে সোজা করা, নোংরা আবর্জনা পরিষ্কার করা ও অন্যদিকে ধ্বংসস্তূপ থেকে দেশটিকে উদ্ধার করার কঠিন লড়াইতে তিনি জাতির পিতার স্বপ্নপূরণে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার প্রদান করেন। আমি শ্রদ্ধার সঙ্গে তার একটি সুমহান কাজের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে চাই যে তিনি পিতা, মাতা, ভাই, ভাবি ও আত্মীয়-স্বজনসহ পঁচাত্তরের ঘাতকদের বিচারসহ একাত্তরের ঘাতক যুদ্ধাপরাধীদেরও বিচার করেন। ইতিহাসে এটি এক অনন্য নজির।
আমি একটু স্মরণ করতে চাই যে ডিজিটাল বাংলাদেশ ঘোষণাটি কোন পরিপ্রেক্ষিতে তিনি ঘোষণা করেন। তার প্রথম ৫ বছরের শাসনকালের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় স্মরণ করুন। ৯৬ সালে তিনি ভি-স্যাট ব্যবহারকে প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ করে অনলাইন ইন্টারনেট যুগকে সামনে চলার মহাসড়ক নির্মাণ করে দেন। একই সঙ্গে তিনি একটি মোবাইল অপারেটরের বদলে আরও চারটি মোবাইল অপারেটরকে লাইসেন্স দিয়ে বাংলাদেশে মোবাইলের স্বর্ণযুগের সূচনা করেন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজটি তিনি ৯৮-৯৯ সালের বাজেটে ঘোষণা করেন। তিনি কম্পিউটারের ওপর থেকে সব শুল্ক ও ভ্যাট প্রত্যাহার করেন। সেই সময়েই তিনি কম্পিউটার শিক্ষার সক্ষমতাকে বহুগুণ বাড়িয়ে দেন। আমাদের দুর্ভাগ্য যে ২০০১ এর পর বাংলাদেশের অগ্রগতির যাত্রা আবার থামিয়ে দেশের অস্তিত্বকে বিপন্ন করে আবারও পাকিস্তান বানানোর প্রচেষ্টা চলতে থাকে। ওই সময়ে সাত বছরে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে পাঁচ বছরে শেখ হাসিনা যতটা ইতিবাচক রূপান্তর করেছিলেন তাকে পেছনে নিয়ে যাবার সব আয়োজন সম্পন্ন করা হয়।
এটি অত্যন্ত স্পষ্টভাবে উল্লেখ করার দরকার যে শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর সেই কন্যা ও বাংলা মায়ের সেই মহীয়সী নারী যিনি বঙ্গবন্ধুর দূরদর্শিতাকে অবলম্বন করে বাংলাদেশকে ডিজিটাল যুগের উপযোগী করে গড়ে তোলার কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেন। সেই কারণে তিনটি শিল্প বিপ্লবে যোগ দিতে না পারা দেশটিতে অন্তত তৃতীয় শিল্প বিপ্লবে শরিক করার জন্য তথ্যপ্রযুক্তি বিকাশের যুগান্তকারী পদক্ষেপসমূহ গ্রহণ করেন। সম্ভবত এটিও উল্লেখ করা দরকার যে তিনিই বাংলাদেশের প্রথম রাজনীতিক যিনি নিজে কম্পিউটার ব্যবহার করেন। তার সুযোগ্য পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের সহায়তায় তিনি সেই আশির দশকে নিজে কম্পিউটার ব্যবহার করে এমনকি দল পরিচালনা করেন। তিনি নিজেই বলেন, আমি তাকে বাংলা টাইপ করা শিখিয়েছিলাম। স্মরণে রাখা দরকার তিনিই দেশের প্রথম রাজনৈতিক দলের নেত্রী যিনি দলের জন্যও তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করেন। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে বাংলাদেশের প্রথম ডিজিটাল নিউজ সার্ভিস আবাসের মাধ্যমে ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে তিনি নির্বাচনী প্রচার চালান। হাজার হাজার বছর উপনিবেশ থাকা ও বিদেশিদের দ্বারা লুণ্ঠিত হওয়া একটি ভূখ- অগ্রগতির সোপানে পা রাখার যে স্বপ্ন বাঙালি বঙ্গবন্ধুর হাত ধরে দেখেছিলÑবিজয়ী হয়েছিল, সেই দেশটির ৫০ বছরের ইতিহাসের ২৯ বছরই একাত্তরের পরাজিত শত্রুদের নিয়ন্ত্রণে থাকায় আমাদের সামনে চলা স্তিমিত হয়ে পড়ে। তবে বাংলাদেশের আজকের অবস্থান বস্তুত বঙ্গবন্ধুর শাসনকালের সাড়ে তিন বছর ও শেখ হাসিনার শাসনকালের ১৬ বছরের শাসনকালের। বিশেষ করে তিনি ২০০৮ সালের ১২ ডিসেম্বর ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচি ঘোষণা করার পর ২০০৯ সাল থেকে দেশটির যে রূপান্তর ঘটাতে থাকেন তার ফলে বাংলাদেশ এখন ডিজিটাল দুনিয়ার একটি বিস্ময়ের নাম। একদিকে তিনি কৃষি-শিল্প উৎপাদন, বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জন, মানবসম্পদের দেশে-বিদেশে কার্যকরভাবে ব্যবহারের পাশাপাশি ব্যক্তি, সমাজ, সরকার ও রাষ্ট্রের সামগ্রিক ডিজিটাল রূপান্তর করে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। অন্যদিকে তার রূপকল্প একুশ, এসডিজি গোল ২০৩০, জ্ঞানভিত্তিক সমাজ ও উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার পরিকল্পনা ৪১ অথবা ডেল্টা প্ল্যান ২১০০ পর্যালোচনা করলে এটি স্পষ্ট হবে যে তিনি বঙ্গবন্ধুর শুধু জেনেটিক উত্তরাধিকারী নন, বরং তিনিই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তোলার স্থপতি। আমরা যখন এই মহান মানুষটির ৭৪তম জন্মদিন পালন করছি তখনই ২ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘে তিনি একটি অসাধারণ ভাষণ দেন, তার ভাষণ সম্পর্কে ডিজি বাংলার প্রতিবেদনটির অংশ বিশেষ তুলে ধরছি, ‘চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের ফলে সৃষ্ট উদীয়মান চাকরির বাজার বিবেচনা করে ২০৩০ সালের মধ্যে দেশের প্রতিটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়কে ডিজিটাল একাডেমি এবং সেন্টার অব এক্সিলেন্স হিসেবে প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ভবিষ্যৎ প্রজন্মের অভিন্ন লক্ষ্য অর্জনে ডিজিটাল সহযোগিতায় বিশ্বব্যাপী অংশীদারিত্বের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের অভিন্ন লক্ষ্য অর্জনে একটি শক্তিশালী বৈশ্বিক অংশীদারিত্বের অপেক্ষায় রয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘যেহেতু আমরা বাংলাদেশকে ২০৪১ সাল নাগাদ একটি উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছি, কাজেই আমরা আমাদের তরুণ প্রজন্মকে এই রূপান্তরিত যাত্রার কেন্দ্রে রাখতে চাই।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্বের প্রায় অর্ধেক জনসংখ্যারই ন্যূনতম ইন্টারনেট প্রবেশগম্যতা নেই। সে শূন্যতা পূরণ করতে হবে।’
বুধবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদরদপ্তরে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৫তম অধিবেশনের সাইডলাইনে ‘ডিজিটাল সহযোগিতা: ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য অ্যাকশন টুডে’ শীর্ষক একটি উচ্চপর্যায়ের ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
পূর্বে ধারণকৃত ভিডিও বার্তায় প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন যে, কোভিড-১৯ মহামারি ডিজিটাল পরিষেবার শক্তিকে উন্মোচিত করেছে এবং ডিজিটাল বিভাজনকেও প্রকাশ করেছে।
বাংলাদেশে তার সরকার ২০২১ সালের মধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপকল্প নির্ধারণ করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ডিজিটালাইজেশনের জন্য সরকারের চাপের কারণেই বাংলাদেশ ইন্টারনেট প্রযুক্তিতে একটি ব্যাপক পরিবর্তন প্রত্যক্ষ করেছে।
তিনি বলেন, দেশে মোট ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১০৩ দশমিক ৪৮ মিলিয়নে দাঁড়িয়েছে। আমাদের ডিজিটালাইজেশন জনগণকে পরিবর্তন-নির্মাতা হওয়ার বিশাল সুযোগ এনে দিয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘ডিজিটাল কানেক্টিভিটির ওপর আমাদের আলোকপাত অর্থনৈতিক বিকাশকে সহজতর করেছে এবং নারীর ক্ষমতায়নসহ সামাজিক পরিবর্তনকে অনুঘটক করেছে। এটি এসডিজিগুলোকে বাস্তবায়ন এবং কোভিড-১৯-এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সহায়তা করছে।’ এই ভাষণের মধ্য দিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সারা বিশ্বকে জানিয়ে দিলেন যে, তিনি শুধু ডিজিটাল বাংলাদেশের স্থপতি নন ডিজিটাল বিশ্বের নেত্রী।
মুজিব বর্ষে অবস্থান করে আমরা যখন আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনার হীরক জন্মবার্ষিকীর দিকে যাচ্ছি তখন সমগ্র জাতি ও বিশ্বের সব বাঙলা ভাষাভাষী মানুষসহ শোষিত মানুষদের পক্ষ থেকে আন্তরিক শুভেচ্ছা, কৃতজ্ঞতা ও অভিনন্দন। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা শেখ হাসিনার হাতেই বাস্তব হচ্ছে সেজন্য অভিনন্দন এই মহীয়সী স্বর্ণকত্যার প্রতি।
লেখকঃ মন্ত্রী, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ