বাবা হারানো সাবেক এটর্নি জেনারেল কেএস নবীর নাতি দুই শিশুকে বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
শনিবার দিবাগত মধ্যরাতে একটি বেসরকারি টিভিতে এ সংক্রান্ত টকশো নজরে নিয়ে স্বপ্রণোদিত হয়ে বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমান এ আদেশ দেন।
আদালতের আদেশ পেয়ে রাতেই তা বাস্তবায়ন করেছে ধানমন্ডি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)।
সম্প্রতি বাবা হারানো এই দুই শিশু বারবার চেষ্টা সত্ত্বেও পৈত্রিক নিবাসে ঢুকতে না দেয়ার ঘটনা আমলে নিয়ে আদালত এ আদেশ দেন।
ঘটনাটি নিয়ে শনিবার দিবাগত রাত ১২টায় একাত্তর টিভির একাত্তর জার্নালে একটি প্রতিবেদন প্রচারিত হয়। এসময় একাত্তর জার্নালে শিশু দুটির সঙ্গে তাদের ফুফু, সাংবাদিক রেজওয়ানুল হক ও সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ আলোচনায় যুক্ত ছিলেন। অনুষ্ঠানটি প্রচার চলাকালিন বিষয়টি নজরে আসে বিচারপতি আবু তাহের মোহাম্মদ সাইফুর রহমানের। এরপর স্বপ্রণোদিত হয়ে হাইকোর্টের বেঞ্চ বসিয়ে আদেশ দেন বিচারপতি আবু তাহের মোহাম্মদ সাইফুর রহমানের বেঞ্চ।
এডভোকেট মসজিল মোরসেদ বাসস’কে বলেন, আদালতের আদেশ পেয়ে ধানমন্ডি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওই দুই শিশুকে রাতেই তাদের পৈতৃক বাসায় পৌঁছে দেন। তারা এখন সে বাড়িতেই রয়েছেন। এ বিষয়ে পুলিশ আদালতের আদেশ বাস্তবায়ন প্রতিবেদন আজ দাখিল করবেন।
একটি বেসরকারি টেলিভিশনে আলোচনা হচ্ছিলো এই দুটি শিশু নিয়ে। ওই দুটি শিশু সাবেক এটর্নি জেনারেল প্রয়াত ব্যারিস্টার কে এস নবীর নাতি। যাদেরকে তাদের চাচা বাসায় ঢুকতে দিচ্ছে না। কিছুদিন আগে এই দুই শিশু বাবা হারিয়েছেন।
রাজধানী ধানমন্ডির একটি চারতলা বাড়ির মালিক সাবেক এটর্নি জেনারেল কেএস নবী। উত্তরাধিকার সূত্রে ওই বাড়িতে ঢুকতে চাইলেও গত কয়েকদিন ধরে ঢুকতে পারছে না কেএস নবীর ছোট ছেলে সিরাতুন নবীর দুই পুত্র।
জানা যায়, গত ১০ আগস্ট সিরাতুন নবীর মৃত্যুবরণ করেন। ওই শিশুদের আপন চাচা কাজী রেহান নবী তাদের বাসায় ঢুকতে দিচ্ছিলেন না।
আগেই শিশু দুটির বাবা-মায়ের মধ্যে বিবাহবিচ্ছেদের ঘটনা ঘটে। এরপর বাবার মৃত্যুর পর শিশু দুটি কিছুদিনের জন্য তার মায়ের আশ্রয়ে থেকে যায়। এরপর মায়ের কাছ থেকে নিজ পিত্রালয়ে ফেরার চেষ্টা করে ওই দুই শিশু। কিন্তু তাদেরকে আর বাড়িতে প্রবেশ করতে দেয়া হয়না। এরপর কয়েকবারের চেষ্টা করেও শিশু দুটি ওই বাসায় প্রবেশ করতে পারেনি। তবে বিষয়টি ধানমন্ডি থানাকে জানানো হলেও পুলিশের কথা আমলে নেননি শিশুদের চাচা ও আইনজীবী কাজী রেহান নবী।
শিশু দুটির ফুফু (কেএস নবীর বোনের মেয়ে) মেহরীন আহমেদ জানান, বিবাহবিচ্ছেদের জন্য শিশুদের বাবা-মা আলাদা থাকতেন। ওরা ওদের বাবার সঙ্গেই দাদার বাড়িতে থাকতো। কিন্তু বাবার মৃত্যুর পর শিশু দুটি খুব বেশি একাকি হয়ে পড়ে এবং ওদের মায়ের কাছে কিছুদিন থেকে আবার গতকাল বাড়িতে ফিরেছে। কিন্তু তারা বাসার গেট খোলেনি। আমরা পরিবার থেকে যোগাযোগ করি। শিশুদের বড় চাচা কাজী রেহান নবীকে ফোন করি। বাড়িটি এখনো কেএস নবীর নামে। সেদিক থেকে দেখলে এই শিশু দুটিও ওই বাড়ির উত্তরাধিকারী।
আইনজীবীরা জানায়, মধ্যরাতে হাইকোর্ট বসিয়ে আদেশ দেয়ার ঘটনা দেশের বিচার বিভাগের ইতিহাসে বিরল।