স্বাস্থ্য অধিদফতরের ড্রাইভারের কাছে আলাদিনের চেরাগ

অপরাধ প্রচ্ছদ

‌গাড়ি চালক মো. আবদুুল মালেক ওরফে বাদল বিপুল স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের পাহাড় গড়েছেন এবং এখন অস্ত্র ও জাল নোটসহ র্যাব কব্জায় আটক। স্কুলের গন্ডি পার হতে পারেননি। অষ্টম শ্রেণিতেই লেখাপড়ার পাঠ শেষ। গাড়ি চালানো শিখে চাকরি নেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের ড্রাইভার পদে। চাকরিতে যোগদানের পর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।

ড্রাইভারী চাকরির পাশাপাশি নানা অবৈধ অস্ত্র ও জাল নোটের ব্যবসা ও চাঁদাবাজি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন বাদল ড্রাইভার। অবৈধভাবে উপার্জিত টাকায় রাজধানীর তুরাগ থানায় দক্ষিণ কামার পাড়ায় দুটি ৭ তলা বিলাসবহুল ভবন ও ধানমন্ডির হাতিরপুল এলাকায় সাড়ে ৪ কাঠা জমিতে তার ১০ তলা ভবনের মালিক হয়েছে বাদল। তাছাড়া দক্ষিণ কামার পাড়ায় ১৫ কাঠা জমিতে একটি ডেইরি ফার্ম ও রয়েছে তার এবং বিভিন্ন ব্যাংকে নামে-বেনামে ও তার বিপুল টাকা রয়েছে।

গতকাল শনিবার দিনগত রাত সোয়া ৩টার দিকে রাজধানীর তুরাগ থানাধীন কামারপাড়া, ৪২ বামনেরটেক,হাজী কমপ্লেক্স ভবন থেকে অস্ত্র-গুলি ও জাল নোটসহ আবদুল মালেক বাদল ওরফে ড্রাইভার মালেককে গ্রেফতার করে র‌্যাব-১। তার হেফাজত থেকে ১টি বিদেশি পিস্তল, ১টি ম্যাগাজিন, ৫ রাউন্ড গুলি, ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা মূল্যের জাল নোট, ১টি ল্যাপটপ ও ১টি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়।

একটি সংস্থার একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা দৈনিক নিখাদ খবরকে বলেন, গত এক যুগ ধরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের শীর্ষ পদে যারা ছিলেন তাদের নিয়ন্ত্রণ করতেন ড্রাইভার বাদল ওরফে মালেক। নিয়োগ বাণিজ্য, কেনাকাটা ও বদলি থেকে শুরু করে নানা অনৈতিক কাজে বিশাল সিন্ডিকেট তৈরি করে এই বাদল এবং জড়িয়ে অবৈধ অস্ত্র ও জাল টাকার ব্যবসার সাথে।

নাম না প্রকাশের শর্তে ঐ কর্মকর্তা গণমাধ্যম কর্মীদের বলেন, স্বাস্থ্য অধিদফতরের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সাথে ড্রাইভার বাদল ওরফে মালেকের অনৈতিক কর্মকান্ড এবং অবৈধ উপায়ে শত কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার বিষয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে রিপোর্ট দেয়া হয়েছে। নির্দেশ অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে ওই কর্মকর্তা মন্তব্য করেন।

র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল শাফী উল্লাহ বুলবুল গণমাধ্যম কর্মীদের বলেন, ড্রাইভার বাদল ওরফে আব্দূল মালেক তুরাগ এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল। অবৈধ অস্ত্র, জাল নোটের ব্যবসা ও চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলো এমন তথ্য প্রমাণ পাওয়া গেছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে অবৈধ অস্ত্র, জাল নোটের ব্যবসাসহ চাঁদাবাজি করে এই বিপুল পরিমাণ টাকার মালিক হবার বিষয়টি স্বীকার করেছে।

লে. কর্নেল শাফী উল্লাহ বুলবুল আরো বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে মালেককে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতার অভিযানের আগে র‌্যাব তার বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করে উক্ত অনুসন্ধানে ড্রাইভার বাদল ওরফে মালেকের বিরুদ্ধে অবৈধ অস্ত্র, জাল নোটের ব্যবসা ও চাঁদাবজির অভিযাগ পাওয়া যায়। তুরাগ থানা এলাকায় সাধারণ মানুষকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায় করার তথ্য ও পাওয়া যায়। তাছাড়া অনুসন্ধানে তার আয়-ব্যয়ের মধ্যে বিস্তর ফারাক ও পাওয়া যায়। তৃতীয় শ্রেণির একজন সাধারণ কর্মচারী হয়েও ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় একাধিক বিলাসবহুল বাড়ি, গাড়ি, ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন ব্যাংকে নামে-বেনামে বিপুল পরিমাণ অর্থ থাকার তথ্যের সত্যতা পাওয়া গেছে।

র‌্যাবের কর্মকর্তা লে. কর্নেল শাফী উল্লাহ বুলবুল বলেন, মালেক ১৯৮২ সালে সাভার স্বাস্থ্য প্রকল্পে গাড়ি চালক হিসেবে যোগ দেন। পরে ১৯৮৬ সালে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিবহন পুল ড্রাইভার হিসেবে চাকরি শুরু করেন। বর্তমানে প্রেষণে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা অধিদফতরে কর্মরত ড্রাইভার বাদল ওরফে মালেক।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট র‌্যাবের অন্য একজন কর্মকর্তা জানান, মালেক দু’টি বিয়ে করেছেন। প্রথম স্ত্রী নার্গিস আক্তারের নামে তুরাগ দক্ষিণ কামারপাড়া রমজান মার্কেটের উত্তরপাশে ৬ কাটা জমির উপর ৭ তলা হাজী কমপ্লেক্স দু’টি আবাসিক ভবন রয়েছে। এতে ২৪টি ফ্ল্যাট রয়েছে। বিল্ডিং সংলগ্ন আরো ১২ কাটার প্লট রয়েছে। মেয়ে বেবির নামে দক্ষিণ কামারপাড়া ৭০ রাজাবাড়ি হোল্ডিংয়ে ১৫ কাটার ওপর ইমন ডেইরি ফার্ম নামে একটি গরুর খামার রয়েছে। এতে ৫০টি গাভী রয়েছে। ২৩, ফ্রি স্কুল রোড, হাতিরপুলে সাড়ে ৪ কাটা জমির ওপর ১০ তলা নির্মানাধীন ভবন, নিজের সন্তানসহ প্রায় ১৫ জনকে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা অধিদফতরের বিভিন্ন পদে চাকরি প্রদান করেছেন। স্বাস্থ্য অধিদফতরের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের সিন্ডিকেটের সাথে জড়িত রয়েছে এই ড্রাইভার বাদল ওরফে মালেক। উক্ত সিন্ডিকেটের অনেকের বিরুদ্ধে হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করার ও তথ্য রয়েছে। ড্রাইভার বাদল ওরফে মালেক বিদেশে টাকা পাচার করেছে কিনা তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে বলে দ্বায়িত্বরত কর্মকর্তারা মন্তব্য করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *