সর্বশেষ দলের বেঁধে দেওয়া আলটিমেটামের শেষ দিন গত মঙ্গলবার আওয়ামী লীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তরের পূর্ণাঙ্গ খসড়া কমিটি সম্মেলনের ৯ মাস পর অনুমোদনের জন্য কেন্দ্রে জমা দেওয়া হয়েছে। উপরোক্ত বিষয়ে কেন্দ্রীয়ভাবে দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত নেত্রীবূন্দ যাচাই-বাছাই করে যে কোনো সময় পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করতে পারে বলে আভাস পাওয়া গেছে। মহানগর দক্ষিণের জমা দেওয়া খসড়া তালিকা দৈনিক নিখাদ খবরের হাতে এসেছে।এতে দেখা যায়, অনেক বিতর্কিত ব্যক্তিকেও কমিটিতে রাখা হয়েছে। দুদকে মামলা চলমান রয়েছে- এমন ব্যক্তিকেও সহ-সভাপতি পদে রাখা হয়েছে। জানা যায়, গত সম্মেলনে মহানগর কমিটি ৭১ সদস্য থেকে বাড়িয়ে ৭৫ সদস্যবিশিষ্ট করার প্রস্তাব অনুমোদন হয়। পূর্বের ৭১ সদস্যের কমিটিতে ৬৯টি পদ পূরণ করে বাকি দুটি পদ ফাঁকা রাখা হয়েছিল। উক্ত কমিটির পাঁচজন সদস্য মারা যায় এবং চারটি পদ বাড়িয়ে মোট ১১টি পদ শূন্য ঘোষণা করা হয়। বর্তমানে যে খসড়াটি জমা দেওয়া হয় তাতে পূর্বের কমিটি থেকে ২৩ জনকে বাদ দিয়ে মোট ৩৪টি পদ শূন্য ঘোষণা করা হয়। শূন্য পদগুলোতে নতুন ৩৪ পদায়নের প্রস্তাব করা হয়েছে।
প্রাস্তাবিত নতুন খসড়া কমিটিতে ঠাঁই পেয়েছেন যুবলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় ও মহানগর কমিটি থেকে চারজন, ছাত্রলীগের সাবেক ১৬ জন, স্বেচ্ছাসেবক লীগের একজন এবং থানা ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ থেকে ১৩ জন। জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী বলেন, প্রস্তাবিত নতুন খসড়া কমিটিতে আগের কমিটির অন্তত ৭০ শতাংশ নেতা জায়গা পেয়েছেন। পাশাপাশি ছাত্রলীগ-যুবলীগের সক্রিয় ও পরীক্ষিত নেতাদের নতুন কমিটির খসড়া তালিকায় রাখা হয়েছে। কমিটিতে কাউন্সিলরদের রাখা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, কয়েকজনকে রাখা হয়েছে সদস্য হিসেবে। তাদের পদবী উল্লেখ করা হয়নি।কমিটি আমরা জমা দিয়েছি, আর যেটাই হোক দেশরত্ম শেখ হাসিনা (আওয়ামী লীগ সভানেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী) চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন। সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী ও সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবীরের নেতৃত্বে ৭৫ সদস্যের মহানগর কমিটিতে ৭৫ জনের নামের সঙ্গে অতিরিক্ত পাঁচটি নাম দেওয়া হয়েছে।
খসড়াতে সহ-সভাপতি পদে প্রস্তাব করা হয়েছে- নুরুল আমিন রুহুল আওলাদ হোসেন, সরফুদ্দিন আহমেদ সেন্টু, খন্দকার এনায়েত উল্লাহ, ডা. দিলীপ রায়, হেদায়েতুল্লাহ স্বপন, মিজবাউর রহমান ভূঁইয়া রতন, সাজেদা বেগম, আবদুর সাত্তার মাসুদ ও হাজী শহীদের নাম। সাবেক যুবলীগ কেন্দ্রীয় নেতা আবদুর সাত্তার মাসুদ আওয়ামী লীগে নতুন মুখ ।
যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে খসড়াতে রয়েছে কাজী মোর্শেদ কামাল ও মো. মিরাজ হোসেনের সঙ্গে সাবেক যুবলীগ নেতা মহিউদ্দিন আহমেদ মহির (নতুন) নাম রাখা হয়েছে
সাংগঠনিক সম্পাদক পদে গোলাম আশরাফ তালুকদার ও আক্তার হোসেনের সঙ্গে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা গোলাম সারোয়ার কবীরের (নতুন) নাম প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া আইন সম্পাদক পদে অ্যাডভোকেট জগুল (নতুন), কৃষি সম্পাদক আবদুর রহমান, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক পদে চৌধুরী আশিকুর রহমান লাভলু (নতুন), ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক পদে শেখ মো. আজাহার (নতুন), দফতর সম্পাদক পদে রিয়াজউদ্দিন রিয়াজ (নতুন), প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে চৌধুরী সাইফুন্নবী সাগর (নতুন), বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক পদে নাঈম নোমান, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক পদে এস এম সফিকুল ইসলাম (নতুন), মহিলাবিষয়ক সম্পাদক পদে তাহমিনা সুলতানা, যুব ও ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক পদে জামাল হোসেন (নতুন), শিক্ষা ও মানবসম্পদ সম্পাদক আনিস আহম্মেদ, শিল্প ও বাণিজ্য সম্পাদক পদে নাসির হোসেন, শ্রমবিষয়ক সম্পাদক পদে আবুল কালাম আজাদ, সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক পদে এসকে বাদল রায়, স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক পদে নজরুল ইসলামের নাম প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া প্রস্তাবিত কমিটিতে সহ-দফতর, সহ-প্রচার পদে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আরিফুর রহমান রাসেল (নতুন) ও আসাদুজ্জামান আসাদের (নতুন) নাম রয়েছে। ৩৬টি সদস্য পদে হাজী মোহাম্মদ সেলিম এমপি, শাহাবুদ্দিন শাহা(সাবেক যুবলীগ), দীপু চৌধুরী(সাবেক যুবলীগ), এ এস এম শহিদুল ইসলাম মিলন, গোলাম রাব্বানী বাবলু, সালাউদ্দিন বাদল, সাইফুল ইসলাম (মাসুদ সেরনিয়াবাত), মুজিবুর রহমান, জসিম উদ্দিন খান আজম, শাহজাহান ভূইয়া মাখন(সাবেক যুবলীগ), আইয়ুব আলী খান, দেওয়ান গাফফার আহমেদ রাজিব, রাকিব হাসান সোহেল, মুকুল, মুক্ত, ওবায়েদ, সারোয়ার হোসেন লিপু, তরিকুল, শামীম প্রমুখের নাম রয়েছে। প্রস্তাবিত পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে কাউন্সিলরদের রাখা না রাখা নিয়ে বিতর্ক থাকায় পূর্বের কমিটির সাতজন ওয়ার্ড কাউন্সিলরসহ ১০ জন ওয়ার্ড কাউন্সিলরকে সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে, যাদের মধ্যে কয়েকজন ইতিপূর্বে কমিটির সম্পাদকীয় দায়িত্বে ছিলেন। তারা হচ্ছেন কাউন্সিলর আবুল বাশার, ওমর বিন আজিজ তামিম, মামুনুর রশিদ শুভ্র, সৈয়দ রোকসানা ইসলাম চামেলী, শরিফুল ইসলাম দিলু, আসাদুজ্জামান আসাদ, মারুফ আহমেদ মনসুর, ফরিদ উদ্দিন আহমেদ রতন, আনিসুর রহমান ও মকবুল হোসেন। এদিকে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের প্রস্তাবিত পূর্ণাঙ্গ কমিটির তালিকায় আগের বেশির ভাগে নেতার নামই রাখা হয়েছে। ফলে এই কমিটিতে খুব বেশি পরিবর্তন নেই। নতুন কমিটিতে সব মিলিয়ে ১২-১৫ জন নতুন মুখ দেখা যেতে পরে। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় দফতরে জমা দেওয়া প্রস্তাবিত কমিটিতে থানা কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের মধ্যে ৫ জন এবং ছাত্রলীগ যুবলীগের ৫-৭ জন নেতার নাম রাখা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান বলেন, আগের কমিটির যারা সক্রিয় নেতা ছিলেন তাদের অনেকের নামই নতুন কমিটিতে আমরা তালিকায় রেখেছি। পাশাপাশি ওয়ান-ইলেভেনে যাদের ভূমিকা ছিল, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা, যারা মহানগরে রাজনীতি করেছেন তাদের রাখা হয়েছে। প্রস্তাবিত কমিটির নামের তালিকার পাশে সেই নেতার ভূমিকা ও সক্রিয় বা নিষ্ক্রিয় কিনা সে বিষয়ে উল্লেখ করা রয়েছে বলেও জানান তিনি। দলীয় সূত্র জানায়, করোনাভাইরাসের আবির্ভাবের আগেই ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের একটি নামের তালিকা দেশরত্ম শেখ হাসিনার কাছে জমা দেওয়া হয়েছিল। সেই তালিকায় সদ্য সাবেক হওয়া পুরো কমিটিই ছিল। সে সময় পুরনোর ৭১ সদস্য কমিটির সঙ্গে আরও নতুন ১২টি নাম যোগ করে তালিকা দেওয়া হয়। পাশাপাশি পুরনো কমিটির প্রতিটি নেতার নামের পাশে তার রাজনৈতিক কর্মকান্ডের সংক্ষিপ্ত ভূমিকা যুক্ত করে দেওয়া হয়েছিল। তালিকায় সাবেক নেতাদের কমিটিতে দায়িত্ব থাকাকালীন ‘নিষ্ক্রিয়’ ছিল, নাকি সক্রিয় ছিল তা উল্লেখ করা হয়। কাকে পদোন্নতি দিতে হবে আবার কাকে কমিটিতে রাখা যাবে না সেই তথ্যটিও জমা দেওয়া তালিকায় লিখে দিয়েছেন বর্তমান কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্তরা।