মিজানুর রহমান–পাঁচটি হাসপাতালে ছুটোছুটির পর একটিতে ভর্তির সুযোগ পেলেও আইসিইউ সাপোর্ট না পেয়ে মারা গেছেন চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সহ-সভাপতি কামাল উদ্দিন। তিনটি হাসপাতাল ঘুরে চমেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়ার পরেই মারা যান নগরীর খুলশী এলাকার বাসিন্দা জসিম উদ্দিন চৌধুরী। নালা পাড়ার প্রীতি বিকাশ দত্তকে অ্যাম্বুলেন্স এ নিয়ে তিনটি হাসপাতালে গেছেন তার ছেলেরা। কোন হাসপাতালে তার ঠাঁই হয়নি। অ্যাম্বুলেন্সে বাবার লাশ নিয়ে বাসায় ফিরেছেন তারা।
গতকাল বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামে এমন এ তিনজনসহ চার জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে যাদের কেউ চিকিৎসা পাননি। আগের দিন ফাতেমা আক্তার মুক্তাসহ মারা গেছেন আরো ছয়জন। অসহায় স্বজনদের সামনেই তাদের মৃত্যু হয়েছে। ১০ মাসের অন্তঃসত্তা মুক্তাকে আইসিইউ সাপোর্ট দিতে ডাক্তারদের পায়ে ধরেন স্বামী তৌহিদুল আনোয়ার। মুক্তার দুই শিশু সন্তান এখন মা হারা। সোমবার হাসপাতালে ছুটতে ছুটতেই গাড়িতে প্রাণ যায় আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা শফিউল আলম ছগিরের।
এমন মৃত্যুর তালিকায় আছেন চট্টগ্রামের বড় দুই দলের অনেক নেতা থেকে শুরু করে ধনাঢ্য ব্যবসায়ী, শিল্পপতিও। করোনা উপসর্গসহ নানা রোগে প্রতিদিনই মানুষ মরছে বিনা চিকিৎসায়। সরকারি হাসপাতালে শয্যা নেই। বেসরকারি হাসপাতালে শয্যা থাকলেও তালা। কোনো কোনো হাসপাতাল রোগী ভর্তি নিলেও মিলছে না অক্সিজেন, আইসিইউ সাপোর্ট। এতে মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ হচ্ছে। চোখের সামনে বিনা চিকিৎসায় স্বজন হারানোর বেদনায় কাতর-অসহায় মানুষের প্রশ্ন এমন মৃত্যু আর কত?
চট্টগ্রামে এ পর্যন্ত করোনায় ১০৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। উপসর্গ নিয়ে এবং বিনা চিকিৎসায় দিনে কত জন মারা যাচ্ছেন তার হিসাব কারো কাছে নেই। প্রতিদিনই মানুষ মরছে। কিছু খবর মিডিয়ায় আসছে। অনেক মৃত্যুর খবর তাদের স্বজনরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করছেন। বলছেন চিকিৎসা না পাওয়ার ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার কথা। অসহায় আহাজারি এসব পরিবারে।
করোনা সংক্রমণের আগেই এখানে চিকিৎসা ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ে। সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা থাকলেও বেসরকারি বেশির ভাগ হাসপাতালে এখনও চিকিৎসা মিলছে না। প্রশাসনের হুমকি ধমকিতেও তারা দরজা খুলছে না। করোনা চিকিৎসা তো দূরের কথা অন্য রোগী ভর্তিও নিচ্ছে না অনেক হাসপাতাল। অথচ ২০টি হাসপাতালের অর্ধেক ৮২৫টি শয্যা খালি।