তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘জেনারেল জিয়া ও বেগম জিয়া দু’জনেই হত্যার রাজনীতির পথে হেঁটেছেন’। তিনি আজ সোমবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে ‘২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার বিচারের রায় কার্যকর করার দাবি ও ‘জাতীয় শোক দিবস’ উপলক্ষে আওয়ামী হকার্স লীগ আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ কথা বলেন।
তথ্যমন্ত্রী বক্তব্যের শুরুতেই ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট শহীদ জাতির পিতা ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের এবং ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় সকল শহীদসহ একই ঘটনায় শহীদ আইভি রহমানের ষোড়শ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে তাঁর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান ও তাঁদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন।
এর আগে আজ সকালে তিনি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সাথে বনানী কবরস্থানে ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলায় শহীদ আইভি রহমানের সমাধিতে পুষ্পস্তক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের হত্যাকান্ড এবং ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের হত্যাকান্ড-দু’টিই একই সূত্রে গাঁথা’ উল্লেখ করে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘দেশি-বিদেশি অপশক্তি ও একাত্তরের পরাজিত শক্তি যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা চায়নি এবং যারা বঙ্গবন্ধুকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হয়েছিল তারাই ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছিল।
একইভাবে শেখ হাসিনাকে যারা রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হয়েছিল তারাই ২০০৪ সালেও তাঁকে চিরতরে সরিয়ে দেয়ার লক্ষ্যে এবং আওয়ামী লীগকে নেতৃত্ব শূন্য করার উদ্দেশ্যে গ্রেনেড হামলা পরিচালনা করেছিল বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইতিহাসের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, ‘আপনারা লক্ষ্য করে দেখুন ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট শুধু বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়নি, তাঁর (বঙ্গবন্ধু) সপরিবারের সদস্যদেরও হত্যা করা হয়েছে। এমনকি ১০ বছরের শিশু শেখ রাসেল, শেখ ফজলুল হক মণি, শেখ আবু নাছের এবং আব্দুর রব সেরনিয়াবাত যিনি বঙ্গবন্ধুর ভগ্নিপতি ও মন্ত্রিসভার মন্ত্রী ছিলেন তাঁকেও হত্যা করা হয়েছে। অর্থাৎ আওয়ামী লীগকে নেতৃত্ব শূন্য করা, দেশকে আবার পরাধীনতার দিকে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যেই বঙ্গবন্ধুকে সেদিন স্বপরিবারে হত্যা করা হয়। এই হত্যাকান্ডের মুল কুশীলব ছিল খন্দকার মোশতাক এবং জিয়াউর রহমান।’
ড. হাছান বলেন, ‘২১ আগস্টের হত্যাকান্ডের মুল কুশীলব, পরিকল্পনাকারী এবং পরিচালনাকারী জিয়াউর রহমানের পুত্র তারেক রহমান। অর্থাৎ দু’টি হত্যাকান্ডেই একই পরিবার যুক্ত। আজকে এ কথাগুলো দিবালোকের মতো সত্য এবং স্পষ্ট।’
তিনি বলেন, ২১ আগস্টের হত্যাকান্ডের জন্য তারেক রহমানের বিচার হয়েছে, আদালত তাকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দিয়েছে।
এ সময় ড. হাছান উল্লেখ করেন, ‘বেগম খালেদা জিয়া তো তখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তার (বেগম জিয়ার) জ্ঞাতসারে, অনুমোদনে তারেক রহমানের পরিচালনায় ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা হয়েছিল। এজন্য আজকে যখন দাবি উঠেছে, বেগম খালেদা জিয়াকেও হুঁকুমের আসামী হিসেবে বিচারের আওতায় আনা প্রয়োজন, তখন বিএনপির নেতারা আবোল-তাবোল বলা শুরু করেছেন। তাদের একটি বক্তব্য হচ্ছে যে, বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য না কি ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের মিটিংয়ে গ্রেনেড হামলা পরিচালনা করা হয়েছিল! এই কথা শুনে পাগলও হাসে।’
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে জনগণের দাবি হচ্ছে, শুধু তারেক রহমানের বিচার হলে হবে না, বেগম খালেদা জিয়াকেও ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার আসামী করতে হবে’।
তিনি বলেন, ‘জিয়াউর রহমান যেমন হত্যার পথ বেছে নিয়েছিলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যার অন্যতম কুশীলব ছিলেন সেই পথ থেকে বেগম খালেদা জিয়াও ফিরে আসতে পারে নাই। বেগম খালেদা জিয়াও তার ক্ষমতাকে নিষ্কন্টক করার জন্য এবং তার ক্ষমতাকে ভবিষ্যতে চিরস্থায়ী করার লক্ষ্যেই ২১ আগস্ট শেখ হাসিনাকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে তার পুত্রের মাধ্যমে গ্রেনেড হামলা পরিচালনা করিয়েছিলেন। এটিই হচ্ছে বাস্তবতা।’
বাংলাদেশ আওয়ামী হকার্স লীগের সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক জাকারিয়া হানিফের সভাপতিত্বে ও যুগ্ম আহ্বায়ক মো. জাহেদ আলীর সঞ্চালনায় এ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম নাদেল ও ঢাকা দক্ষিণ মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব আবু আহমেদ মান্নাফী বক্তৃতা করেন।