তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, একুশে আগস্টের কুশীলবরা এখনও ষড়যন্ত্র করছে।
তিনি বলেন, ‘২০০৪ সালের ২১ আগস্ট যারা গ্রেনেড ছুঁড়ে শেখ হাসিনাকে হত্যা করতে চেয়েছিল সেই কুশীলবরা এখনও বেঁচে আছে এবং ষড়যন্ত্র করছে। তাদের ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে।’
মন্ত্রী আজ বিকেলে সিলেট জেলা পরিষদ মিলনায়তনে বিভাগের চারজেলার সাংবাদিকদের মাঝে প্রধানমন্ত্রীর আর্থিক সহায়তার চেক বিতরণ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন।
সিলেটের জেলা প্রশাসক এম. কাজী এমদাদুল ইসলামের সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠানে তিনি আরও বলেন, যারা দেশের স্বাধীনতা চায়নি, বঙ্গবন্ধুকে যারা রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করতে ব্যর্থ হয়েছিলো, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তারাই ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে।
ড. হাছান বলেন, ‘আজকেও যারা শেখ হাসিনাকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করতে ব্যর্থ হচ্ছে তারাও ষড়যন্ত্রের পথ বেঁছে নিয়েছে। ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর মতো তাঁর সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনাকে হত্যা করার জন্য বৃষ্টির মতো গ্রেনেড ছোঁড়া হয়েছিল। সেই কুশিলবরা এখনও ষড়যন্ত্র করছে। তাই আমাদেরকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে।’
যারা দেশের বিরুদ্ধে, অর্থনীতির বিরুদ্ধে, স্বাধীনতার চেতনার বিরুদ্ধে অসম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে আঘাত হানতে চায়, ষড়যন্ত্র করে, তাদের বিরুদ্ধে সাংবাদিকদের আরও সোচ্চার হওয়ার কথা বলেন তথ্যমন্ত্রী ।
হাছান মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়নের ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাদুকরি নেতৃত্বের পরিচয় দিয়েছেন। করোনা ভাইরাস মোকাবেলার ক্ষেত্রেও তিনি যেভাবে সক্ষমতা দেখিয়েছেন, এটা অতুলনীয়।
তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ৭৪ বছর বয়স। এই সময়ে করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় গত সাড়ে পাঁচ মাসে একদিনও বিশ্রাম নেননি। একই সময়ে বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়ের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করেছেন।
মন্ত্রী বলেন, অনেকেই বলেছিলো করোনার সময়ে দেশে হাজার হাজার মানুষ মারা যাবে। বলা হয়েছিলো রাস্তায় লাশ পড়ে থাকবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো- একজন মানুষও অনাহারে মরেনি। করোনাভাইরাসে মৃত্যুর হার পৃথিবীতে যে ক’টি দেশে সবচেয়ে কম তাদের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। আমাদের দেশে করোনয় মৃত্যুর হার ১.২৫ থেকে ১.৩০ শতাংশ। যা ভারত-পাকিস্তানের চেয়েও কম।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, শেখ হাসিনার জাদুকরি নেতৃত্বে এসব সংকট মোকাবেলা করা সম্ভব হয়েছে বলে করোনাকালীন সময়েও গত জুলাই মাসের রপ্তানী বিগত ২০১৯ সালের জুলাই মাসের চেয়ে ১৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। সঠিক নেতৃত্ব ও সঠিক সিদ্ধান্তের কারণেই এটি সম্ভব হয়েছে।
দলমত নির্বিশেষে সকল সাংবাদিককে প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী আরও বলেন, গণমাধ্যম রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ। এই স্তম্ভ তৈরি করেন সাংবাদিকরা। বর্তমান সরকার সাংবাদিকদের কল্যাণে কাজ করছে। যারা সরকারের ঘোর সমালোচক তাদেরকেও প্রণোদনা দিচ্ছে সরকার।
করোনাকালে গণমাধ্যমের ভূমিকা প্রসঙ্গে তথ্যমন্ত্রী বলেন, দু’একটি ব্যতিক্রম ছাড়া করোনা সংকটকালে গণমাধ্যম সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করেছে। তিনি বলেন, সমালোচনা থাকবে। না হলে বহুমাত্রিক সমাজব্যবস্থা নষ্ট হয়ে যাবে। সরকার মনে করে, সমালোচনা পথচলাকে শাণিত করে। কিন্তু সমালোচনা হতে হবে বস্তুনিষ্ট। সমাজককে সঠিকভাবে পরিচালনা করার জন্য। অন্ধের মতো একপেশে সমালোচনা গ্রহণযোগ্য নয়।
দেশের উন্নয়নের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যে দেশকে এক সময় তলাবিহীন ঝুঁড়ি বলা হয়েছিলো সেই দেশ বঙ্গবন্ধুর কন্যার নেতৃত্বে এগিয়ে চলছে। বাংলাদেশে এখন কুঁড়েঘর খুঁজে পাওয়া যায় না। ছেঁড়া কাপড় পরা মানুষ পাওয়া যায় না, সেন্ডেল ছাড়া মানুষ পাওয়া যায় না। এটাই হচ্ছে বাস্তবতা। দেশ বদলে গেছে শেখ হাসিনার জাদুকরি নেতৃত্বে।
তথ্য অফিসের বিভাগীয় উপ পরিচালক জুলিয়া জেসমিন মিলির পরিচালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মোল্লা জালাল, মহাসচিব শাবান মাহমুদ, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ, সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন, জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন খান, সিলেট জেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি তাপস দাশ পুরকায়স্থ, সিলেট প্রেসক্লাবের সভাপতি ইকবাল সিদ্দিকী। আলোচনা পর্ব শেষে সিলেট বিভাগের শতাধিক সাংবাদিকের মধ্যে প্রণোদনার চেক বিতরণ করেন মন্ত্রী।
এর আগে মন্ত্রী দুপুরে বিমানযোগে সিলেটে পৌঁছে সিলেট বেতার কেন্দ্র পরিদর্শন করেন। পরে হযরত শাহজালাল (রহ.) মাজার জিয়ারত করেন মন্ত্রী।
বেতার কেন্দ্র পরিদর্শনের সময় সংক্ষিপ্ত আলোচনায় তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছানুযায়ী দেশের প্রত্যেক বিভাগীয় শহরে একটি করে টিভি কেন্দ্র স্থাাপনের উদ্যোগ গ্রহন করা হয়েছে। সে অনুযায়ী সিলেটে একটি টিভি কেন্দ্র তৈরি করা হবে।এর দাপ্তরিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে এবং আগামী বছরের মধ্যে তা চালু হওয়ার আশাবাদ ব্যাক্ত করেন তিনি।
তথ্যমন্ত্রী বলেন বেতারের অনুষ্ঠান এখনো গ্রামের মানুষ বেশি মনযোগ দিয়ে শুনেন বিশেষ করে বেতারের কৃষিভিত্তিক অনুষ্ঠানটি সবার কাছে খুবই জনপ্রিয় । তিনি বলেন, সিলেট বেতারের উন্নয়নে ৫৬ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে, যার কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। এর কাজ সম্পন্ন হলে সিলেট বেতার আরো আধুনিক যুগোপযোগী ও সমৃদ্ধ হবে।
হাছান মাহমুদ বলেন, বেতার বিনোদন ও নানা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জাতি গঠনে বিশেষ ভুমিকা রাখতে পারে। বেতারের অনুষ্ঠান তরুনদেরকে অবক্ষয়ের হাত থেকে রক্ষা করে ভালো কাজে উদ্বুদ্ধা,পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা, পরিবেশের সুরক্ষায় মানুষকে সচেতন করে তুলতে পারে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, সিলেটের জেলা প্রশাসক এম কাজি এমদাদুল ইসলাম, তথ্য অফিস সিলেটের উপপরিচালক জুলিয়া জেসমিন মিলি, বাংলাদেশ বেতার সিলেটের আঞ্চলিক পরিচালক মোঃ ফখরুল ইসলাম, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ, জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট নাসির উদ্দিন খাঁন, মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন এবং সিলেট প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রশীদ রেনু।