তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, বঙ্গবন্ধু প্রতিষ্ঠিত এফডিসি’র হাত ধরে এদেশের চলচ্চিত্র শিল্প আবার শুধু তার স্বর্ণালী সময়ই ফিরে পাবে, তা নয়, বিশ্ববাজারেও সম্মানজনক স্থান করে নেবে।
তিনি আজ দুপুরে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশন-বিএফডিসি আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় একথা বলেন।
সভার শুরুতে পঁচাত্তরের পনেরই আগস্ট জাতির পিতা ও সকল শহীদের স্মরণে একমিনিট নিরবতা পালন করা হয়। এর আগে তথ্যমন্ত্রী বিএফডিসি প্রাঙ্গণে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন। কর্পোরেশন ও চলচ্চিত্র পরিবারের প্রতিনিধিবৃন্দও এসময় জাতির পিতাকে স্মরণ করে পুষ্পিত শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
ঢাকায় এফডিসি প্রতিষ্ঠাকে বঙ্গবন্ধুর অনন্য দূরদর্শিতার পরিচায়ক হিসেবে বর্ণনা করে মন্ত্রী বলেন, শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৫৭ সালে তৎকালীন প্রাদেশিক সরকারের শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী থাকাকালে সংসদে উত্থাপিত বিলের মাধ্যমে যে চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশন প্রতিষ্ঠা করেন, তা বহু কালজয়ী সিনেমা ও গুণী শিল্পীর জন্ম দিয়েছে। এই সিনেমাগুলো আমাদের স্বাধিকার আদায়ের আন্দোলন, স্বাধীনতা সংগ্রাম ও স্বাধীনতাপরবর্তী দেশ গড়তে ভূমিকা রেখেছে। আজ আমরা চলচ্চিত্র জগতসহ সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় জাতির পিতার এই স্থাপনার হাত ধরে দেশের চলচ্চিত্রকে কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছে দেবো।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হাজার বছরের ঘুমন্ত নিরস্ত্র বাঙালিকে ‘বীর বাঙালি অস্ত্র ধরো, বাংলাদেশ স্বাধীন করো’, ‘তোমার আমার ঠিকানা, পদ্মা-মেঘনা-যমুনা’ শ্লোগান দিয়ে জাগিয়ে তুলে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে স্বাধীনতা অর্জনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন’।
ড. হাছান বলেন, ‘বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাসে তিনিই জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন। সেজন্যই তিনি জাতির পিতা এবং হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, যিনি শুধু রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাই নয়, মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে ৭.৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি এনে দিয়েছেন, তিনকোটি গৃহহারা মানুষকে পুণর্বাসন করেছেন, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করেছেন। যেসব আইনী কাঠামো গড়েছেন, তার ওপর ভিত্তি করেই আমরা সমুদ্র ও স্থলসীমা জয় করেছি, তেল-গ্যাসক্ষেত্রগুলো নিজেদের অধিকারে আনতে পেরেছি।’
মন্ত্রী ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘাতকদের হাতে শহীদ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সকল সদস্য, শহীদ জাতীয় চার নেতা ও মুক্তিযুদ্ধের সকল শহীদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে তাদের আত্মার শান্তি কামনা করেন।
এর পরপরই বিএফডিসি চত্বরে চলচ্চিত্র পরিবার আয়োজিত শোক দিবসের সভায় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান বলেন, ‘“ বঙ্গবন্ধু হত্যার ষড়যন্ত্রকারীদের মুখোশ উন্মোচন করে বিচারের আওতায় আনার জন্য আজ দেশের সাধারণ নাগরিক ও সাংবাদিক সমাজ দাবি জানিয়েছে। আমি আগে থেকেই বলে আসছি যে, শুধু এই হত্যাকান্ডের কুশীলবই নয়, যারা এর পটভূমি তৈরি করেছিলো, তাদেরও মুখোশ উন্মোচন করে বিচারের জন্য এখনই একটি কমিশন গঠন করা উচিত। মনে রাখতে হবে, এই হত্যাকান্ডের পর যারা এটিকে সমর্থন করেছিলো, দায় তাদেরও আছে।”
বিএফডিসি’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুজহাত ইয়াসমিনের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য রাখেন প্রধান তথ্য অফিসার সুরথ কুমার সরকার, বাংলাদেশ টেলিভিশনের মহাপরিচালক এস এম হারুন অর রশীদ, বাংলাদেশ বেতারের মহাপরিচালক হোসনে আরা তালুকদার ও বিএফডিসি’র পরিচালক আইয়ুব আলী।
চলচ্চিত্র পরিবারের সভায় প্রযোজক সমিতির সভাপতি খোরশেদ আলম খসরু, পরিচালক সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজার, চিত্রতারকা রোজিনা, দিলারা, রিয়াজ, মৌসুমী, ওমর সানি, শাকিব, অনন্ত জলিল, অপু বিশ্বাস, নিপুণ, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক অরুণ সরকার রানা প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। শিল্পী সমিতির সভাপতি মিশা সওদাগরসহ চলচ্চিত্র শিল্পী, কলাকুশলীবৃন্দ সভায় যোগ দেন।