সাহাবউদ্দিন আল ইসলাম ছিলেন একজন ট্রাভেলস ব্যবসায়ী। সেই ব্যবসা থেকে বিপুল অর্থ উপার্জন করেন তিনি। একপর্যায়ে হাসপাতাল তৈরির নেশায় পেয়ে বসে তাকে। বিএনপির নেতা হওয়াতে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি সাহাবউদ্দিনকে। গড়ে তুলেন সাহাবউদ্দিন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। পরে হাসপাতালের এমডির দায়িত্ব দেন তার বড় ছেলে ফয়সাল আল ইসলামকে। দায়িত্ব পাওয়ার পর তিনি শুরু করেন রোগীদের সাথে প্রতারণা। নানা কৌশলে প্রতারণা করেই রোগীদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেন ফয়সাল। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এমন তথ্য জানা গেছে।
জানা য়ায়, সাহাবউদ্দিন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চেয়ারম্যান সাহাবউদ্দিন আল ইসলামের নামে হাসপাতালের নামকরণ করা হয়। একসময় তিনি বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-অর্থবিষয়ক সম্পাদক এবং ঢাকা মহানগর উত্তরের সহ-সভাপতি ছিলেন। এছাড়াও রাজধানীর বনানী এলাকায় নিশু ট্রাভেলস নামের একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তিনি আদম ব্যবসা করতেন। মূলত সেই ব্যবসা থেকেই বিপুল পরিমাণ অর্থের মালিক হন তিনি। এরপর বনানীতে হোটেল সুইট ড্রিম ও গুলশানে সাহাবউদ্দিন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল গড়ে তুলেন। সেই সুবাধে তার বড় ছেলেকে হাসপাতালের এমডির দায়িত্ব দেয়া হয়। কিন্তু সরকার পরিবর্তনের সাথে সাথেই ফয়সাল আওয়ামী লীগের আর্দশে বলে নিজেকে পরিচয় দেয়া শুরু করেন। এছাড়া হাসপাতালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি সাঁটানো হয়। রোগীদের প্রতারণার ফাঁদে ফেলার জন্যই ছবিগুলো সাঁটানো হয়েছিল। এছাড়াও ফয়সাল নানা কৌশলে একের পর এক প্রতারণা, অবৈধ বাণিজ্য শুরু করেন। সর্বশেষ তিনি করোনাভাইরাস নিয়েও রোগীদের সাথে প্রতারণা করতে গিয়ে র্যাবের হাতে ধরা পড়েন।
সূত্রমতে, গত রোববার সাহাবউদ্দিন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে অভিযান চালায় র্যাব। এ সময় হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. আবুল হাসনাত ও স্টোরকিপার শাহরিজ কবিরকে আটক করা হয়। পরদিন সোমবার দিনভর তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পরে ওই দিন মধ্যরাতে হাসপাতালের এমডি ফয়সাল আল ইসলামকে বনানীর হোটেল সুইট ড্রিম থেকে আটক করা হয়। এরপর তাদের বিরুদ্ধে গুলশান থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। ওই মামলায় ৫ দিনের রিমান্ডে রয়েছেন তারা। বর্তমানে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ তাদের দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করছে।
ডিবি সূত্রে জানা যায়, জিজ্ঞাসাবাদে তাদের প্রতারণার কৌশল, তাদের সহযোগিদের নাম ওঠে এসেছে। এছাড়াও আরো কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন ফয়সাল ও তার সহযোগিতা। বিএনপির নেতার ছেলে হয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে কিভাবে তিনি এসব প্রতারণা করছেন; সেসব বিষয় নিয়েও ফয়সালকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তার কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতেই মামলার তদন্ত কর্যক্রম করা হয়েছে বলে জানান গোয়েন্দা কর্মকর্তারা।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, এক বছর আগে সাহাবউদ্দিন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হলেও এখনো তা নবায়ন করা হয়নি। এছাড়া রোগীদের কাছ থেকে ইচ্ছামাফিক বিল আদায়, করোনাভাইরাসের অনুমোদনহীন অ্যান্টিবডি র্যাপিড টেস্ট, পরীক্ষা ছাড়াই করোনার ভুয়া প্রতিবেদন দেওয়া, করোনা নেগেটিভ রোগীকে পজিটিভ দেখিয়ে হাসপাতালে ভর্তি রাখাসহ নানা অপকর্মের দায় ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে ফয়সাল স্বীকার করেছেন। এমনকি প্রতারণা করে এমডি ফয়সাল কোটি কোটি টাকা অবৈধভাবে আয় করেছেন।