গ্রাম‍্য বা নোংরা রাজনীতির শিকার টি-২০ বিশ্বকাপ ক্রিকেট।

আন্তর্জাতিক খেলাধুলা

সূত্র:বর্তমান

অনেক চেষ্টা করেও এবছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ আয়োজন করতে পারল না আইসিসি। প্রতিযোগিতা পিছিয়ে দেয়ার কারণ হিসেবে করোনা মহামারীকে দায়ী করা হলো। না করে উপায়ও ছিল না। নিজেদের ব্যর্থতা ও দুর্বলতা ঢাকার জন্য এর থেকে ভালো অজুহাত আর কী বা হতে পারে! নামেই শুধু বিশ্বক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা। নেই কোনো নিয়ন্ত্রণ। যেন নিধিরাম সর্দার। বোর্ড মিটিংয়ে বাহুবলী সদস্য দেশগুলোর চোখরাঙানি মুখ বুজে তাই মেনে নিতে হলো আইসিসি’কে। অগত্যা ২০২০ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ বাতিল করে সেই জায়গাটা ছেড়ে দেয়া হয়েছে আইপিএলের জন্য।
আরব আমিরাতে আইপিএল করতে চাইছে বিসিসিআই। কিন্তু প্রশ্ন হলো, মরুদেশটি কি পুরোপুরি করোনা মুক্ত? আবুধাবি স্বাস্থ্য দপ্তরের রিপোর্ট অনুযায়ী, আমিরাতে এখনো অ্যাক্টিভ করোনা রোগীর সংখ্যা প্রায় সাড়ে সাত হাজার, যা অস্ট্রেলিয়ার থেকে প্রায় দ্বিগুণ (৩৮৫৮)। তাহলে আইপিএলের পথে করোনা বাধা হচ্ছে না কেন? আসলে করোনা হচ্ছে অজুহাত মাত্র। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ মূলত ক্রিকেট রাজনীতিরই শিকার হয়েছে।

একথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ পিছিয়ে যাওয়ায় সবচেয়ে লাভবান ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড। তবে আইপিএল হলে পকেট ভরবে পাকিস্তান ছাড়া সবার। দেশ-বিদেশের ক্রিকেটার, সাপোর্ট স্টাফ, ব্রডকাস্টার এবং বিভিন্ন ক্রিকেট বোর্ড আইপিএল থেকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে উপকৃত হয়ে থাকে। ক্রোড়পতি লিগের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে বিপুল বাণিজ্যিক স্বার্থ। মোদ্দা কথা, আইপিএল মানেই বিপুল অর্থ লাভ। যা টি-২০ বিশ্বকাপ হলে পাওয়া যেত না।
তাছাড়া কোভিডের কারণে কম-বেশি সব দেশের ক্রিকেট সংস্থাই আর্থিক সঙ্কটে ভুগছে। তাই বিশ্বকাপের চেয়েও দ্বিপক্ষীয় সিরিজ খেলতে আগ্রহী সকলেই। আপাতত ফাঁকা মাঠেই হবে ক্রিকেট। টিকিট বিক্রি করে রোজগারের পথ বন্ধ, তাই টিভি স্বত্ত্ব বিক্রি করেই আর্থিক দুরবস্থা ঠেকানোর চেষ্টায় ক্রিকেট বোর্ডগুলো। একটি সার্ভেতে দেখা গেছে, ভারতের বিরুদ্ধে দ্বিপক্ষীয় সিরিজ খেললে তুলনামূলকভাবে আর্থিক লাভের পরিমাণ বেশি। কারণ ভারতের বিরুদ্ধে সিরিজে টিভি স্বত্বের দর বেশি পাওয়া যাচ্ছে। তাই অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, শ্রীলঙ্কার মতো অনেক দেশই ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের মুখাপেক্ষী।
করোনার কারণে বিপুল আর্থিক সঙ্কট দেখা দিয়েছিল ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার। এমন পরিস্থিতিতে আগামী ডিসেম্বরে তাদের দেশে টেস্ট সিরিজ খেলতে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে দেউলিয়া হতে বসা অজি ক্রিকেট বোর্ডকে বাঁচিয়েছে বিসিসিআই। বিরাট কোহলিদের বিরুদ্ধে লম্বা সিরিজ খেলার জন্য ইতিমধ্যে তদ্বির শুরু করে দিয়েছে ইংল্যান্ডও। ভারত শুধু অন্য দেশের স্বার্থরক্ষা করে যাবে তা তো হতে পারে না! তাই ‘গিভ অ্যান্ড টেক পলিসি’র শর্ত মেনে টি-২০ বিশ্বকাপ পিছিয়ে দেয়ার জন্য ভারতীয় বোর্ডের সুরে সুর মিলিয়েছে পাকিস্তান বাদে প্রায় সকলেই। বিসিসিআই কর্তারা জানেন, একবার টি-২০ বিশ্বকাপ বাতিল হলে, আইপিএল করার ক্ষেত্রে আর কোনো বাধা থাকবে না। আর সেটাই ঘটেছে বাস্তবে।
ভারতীয় বোর্ডের সঙ্গে কম দরাদরি করছে না অস্ট্রেলিয়াও। তারা একটা ‘রিটার্ন গিফট’ চাইছে ভারতের কাছ থেকে। ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার দাবি, ২০২১ সালে টি-২০ বিশ্বকাপ তাদের করতে দিক ভারত। বদলে ২০২২ সালে টি-২০ বিশ্বকাপ হোক ভারতে। বোর্ড কর্মকর্তারা সেই দাবি মেনে নেয় কিনা, সময় বলবে। তবে সাবেক এক ক্রিকেট লিখিয়ে ঠিকই বলেছিলেন, ‘খেলোয়াড় নয়, ক্রিকেটের আসল নিয়ন্ত্রক কর্তাব্যক্তিরাই।’
সূত্র : বর্তমান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *