ক্রাইম রিপোর্টার>
মোবাইলে অ্যাপসের মাধ্যমে বিনিয়োগ ও অধিক মুনাফার লোভ দেখিয়ে প্রতারণার অভিযোগে ০২ জনকে গ্রেফতার করেছে সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টার (সিপিসি)। আজ সকালে ডিএমপি ডেমরা থানাধীন মাতুয়াইল মোঘলনগর এলাকা থেকে তাদেরকে গ্রেফতার করে । গ্রেফতারকৃতরা হলেন – ১। ব্রাহ্মনবাড়ীয়ার নবীনগর উপজেলার গোপাল চন্দ্র সেন এর ছেলে পাপপু কুমার সেন (২৮) ও ভোলার চর ফ্যাসন এলাকার আব্দুল খালেক এর ছেলে মো. কাওসার (২৭)। গ্রেফতারকালে তাদের নিকট থেকে অপরাধকর্মে ব্যবহৃত ১ হাজার একশত পঞ্চাশটি সিম কার্ড, ০১ টি হার্ডডিস্ক ও মোবাইল ফোনসহ অন্যান্য আলামত জব্দ করা হয়েছে।
ভুক্তভোগীরা জানান, আসামীরা নিজ নামীয় ফেসবুক আইডি ব্যবহারকালে আন্তর্জাতিক স্টক মার্কেটের একটি এ্যাড দেখতে পেয়ে অ্যাডের লিংকে প্রবেশ করেন। লিংকে প্রবেশ করার পর অজ্ঞাত একটি হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বার থেকে বাদীর ব্যবহৃত হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বার এ কিছু মেসেজ পাঠায় এবং টাস্ক দেয়। বাদীর হোয়াটসএ্যাপে একটি অ্যাকাউন্ট খোলার নির্দেশনা আসে। ভুক্তভোগী নির্দেশমতো তাদের অ্যাপস এর লিংকে প্রবেশ করে তার নাম, এনআইডি, মোবাইল নাম্বার দিয়ে অ্যাকাউন্ট করেন। উক্ত অ্যাপসে তার একটি ডিজিটাল ওয়ালেট তৈরি হয়। আসামীরা বাদীকে তাদের দুটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ এ যুক্ত করে নেয়। উক্ত হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে বাদীর পরিচিত অনেকেই যুক্ত ছিল এবং সেখানে ট্রেডিং বিষয়ে কথাবার্তা হতো। উক্ত গ্রুপগুলোতে বিভিন্ন নামে বিভিন্ন মোবাইল নাম্বার দেখা যায়। আসামিদের কথায় বিশ্বাস করে মামলার বাদী বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্টে সর্বমোট ১৩ লাখ ছাপান্ন হাজার চারশত ছিয়াশি টাকা বিনিয়োগ করে। উক্ত অ্যাপস এ আসামিদের কথামতো ট্রেড করার পর ডিজিটাল ওয়ালেটে তার টাকা বাড়তে থাকে এবং এক পর্যায়ে লাভ সহ প্রায় ৬৪ লাখ পাঁচ হাজার দুইশত সাতাশি টাকা প্রদর্শিত হয়। আসামীরা বাদীর নিজ নামীয় সিটি ব্যাংক, কারওয়ান বাজার ব্রাঞ্চ, এর মাধ্যমে ৫ হাজার টাকা ডিপোজিট করে। আসামিদের নিকট বাদী তার বিনিয়োগকৃত টাকা ফেরত চাইলে তারা টাকা ফেরত না দিয়ে আরো টাকা বিনিয়োগ করতে বলে। এক পর্যায়ে তিনি প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পেরে ধানমন্ডি থানার মামলা করেন। যার মামলা নং-২৬, তারিখ-২২/০১/২০২৫ ।
সিআইডি জানায়,আসামীরা পরস্পর যোগসাজশে বিভিন্ন জায়গা থেকে কোন রকম ছবি, ফিঙ্গারপ্রিন্ট এবং এনআইডি কার্ড ছাড়াই সামান্য কিছু বেশী টাকা দিয়ে অবৈধভাবে মোবাইল সিমকার্ড সমূহ সংগ্রহ করেন। উক্ত সিমকার্ডগুলো তারা বিভিন্ন টেলিগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপসহ অন্যান্য মাধ্যমে দেশি-বিদেশি ক্লায়েন্টদের নিকট শুধু মোবাইল নাম্বারগুলো উচ্চ মূল্যে বিক্রি করে থাকে। দেশি-বিদেশি আসামীরা উক্ত অবৈধ মোবাইল নাম্বার দিয়ে টেলিগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ খুলে উক্ত গ্রুপে বিভিন্ন ব্যক্তিদের যুক্ত করে তাদেরকে অধিক মুনাফা দেয়ার লোভ দেখিয়ে বিনিয়োগ করার জন্য অফার দিতে থাকে।
ভুক্তভোগী ব্যক্তিরা অধিক মুনাফা লাভের আশায় আসামিদের দেয়া ফাঁদে পড়ে এবং তাদের তৈরি অ্যাপসে নিজেদের নাম, মোবাইল নাম্বার, এনআইডি কার্ডের তথ্য দিয়ে অ্যাকাউন্ট খুলে সেখানে লক্ষ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করে। আসামীরা ভুক্তভোগীদের কোন মুনাফা না দিয়ে কৌশলে কোটি কোটি টাকা প্রতারণা করে বাংলাদেশের বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়ে অবৈধভাবে দেশের বাইরে পাচার করে দিচ্ছে মর্মে তদন্তে প্রকাশ পায়। উক্ত অ্যাপস চীন থেকে পরিচালিত হয় মর্মে প্রাথমিকভাবে জানা যায় এবং বাংলাদেশে অবস্থানরত আসামীরা অবৈধ মোবাইল নাম্বার অধিক লাভে বিদেশে অবস্থানরত আসামিদের নিকট বিক্রি করে সম্পূর্ণ অপরাধ কার্যক্রম সংঘটনে সহায়তা করে থাকে।