মো: ওবাইদুল হক(চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি):
চাঁপাইনবাবগঞ্জ মোহাম্মদ হোসেন হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের শিক্ষক ও কর্মচারী নিয়োগ বানিজ্য এবং ব্যাপকহারে জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে সভাপতির বিরুদ্ধে। কয়েকটি পদে নিয়োগের নামে প্রায় কোটি টাকা আত্নসাতের অভিযোগ উঠেছে সভাপতি প্রফেসর সুলতানা রাজিয়ার বিরুদ্ধে। এছাড়াও হোমিওপ্যাথি মেডিকেল কলেজের জমির দলিল জাল করে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরে কলেজের বিভিন্ন নথিপত্র দাখিল করা হয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, গতবছরের ০২ সেপ্টেম্বর অনিয়ম-দুর্নীতির ষোলকলা পূর্ণ করা মোহাম্মদ হোসেন হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল পরিদর্শন করেন স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের গঠিত ০৬ সদস্যের পরিদর্শন কমিটি। পরিদর্শনের প্রেক্ষিতে গত ১৭ সেপ্টেম্বর স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন দাখিল করে পরিদর্শন কমিটি। প্রতিবেদনে যে জমির দানপত্র দলিল দেয়া হয়েছে, তা সম্পূর্ণ ভুয়া।
অভিযোগ রয়েছে, মেডিকেল কলেজ করার নামে মোটা অঙ্কের উৎকোচ দিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর এসিল্যান্ড অফিসের কম্পিউটার অপরেটর মেহেদী কলেজের জমিটি খারিজ করে দেন। অথচ এই দলিলের বিপরীতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ রেজিষ্ট্রী অফিস গেলে সার্টিফাইড কপি দিতে পারছেন না এবং সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই জমির দলিল ১৯৭৬ সালে রেজিষ্ট্রেশন হয়। কিন্তু ১৯৮১ সাল পর্যন্ত চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা হিসেবে ঘোষিত হয়নি।
অনুসন্ধানে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করে, ভুয়া দলিলে কার্যক্রম পরিচালনার বিষয়টি ফাঁস হয়ে যাওয়ায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ মোহাম্মদ হোসেন হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের শিক্ষক ও কর্মচারী নিয়োগে নানরকম বিভ্রান্তি ছড়িয়ে পড়েছে। মোটা অংকের টাকা নিয়ে চাকরি দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়ার পর জাল দলিল সংযুক্তির পর নিয়োগ প্রত্যাশীদের আগাম উৎকোচ দেয়ার পরেও নানারকম ভয়ভীতি ও হুমকি ধামকি দিচ্ছেন সভাপতি সুলতানা রাজিয়া।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক শিক্ষক পদপ্রত্যাশী বলেন, সকল কাগজপত্র ঠিক আছে ও শীগ্রই নিয়োগ দেয়া হবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়ে ৯ লাখ টাকা নিয়েছে কলেজের সভাপতি সুলতানা রাজিয়া। কয়েকদিন আগে ভুয়া দলিলের বিষয়টি জানতে পেরে তাকে প্রশ্ন করলে উল্টো আমাকেই ভয়ভীতি দেখায়। টাকা ফেরত চাইলেও তা অস্বীকার করছে।
ইমাম হাসান জুয়েল (ছন্মনাম) নামের এক কর্মচারী পদপ্রত্যাশী জানান, সভাপতি সুলতানা রাজিয়া নিজের সাবেক পদবির অপব্যবহার করে কর্মচারীদের ঝামেলায় ফেলেছেন। দলিল সংক্রান্ত বিষয়ে বলতে গেলে কোন প্রকার উত্তর দিচ্ছেন না এবং দলিলের সত্যতা প্রমাণ করতেও ব্যর্থ হয়েছেন। এমতাস্থায় শিক্ষক-কর্মচারীদের মধ্যে একটি থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে। শিক্ষক ও কর্মচারীরা আতঙ্কের দিন পার করছেন। কেউ টাকা চাইতে গেলে তাকে বিভিন্ন ধরনের হুমকি ধামকি দিচ্ছে।
অনুসন্ধানে পাওয়া যায়, পরিদর্শনে বা নথিপত্রে জমির কাগজপত্র দেয়া হলেও বাস্তবে কলেজের নামে কোন জমি নেই। যেটুকু পরিমাণ জমি আছে তের জন ব্যক্তির নামে এবং জমির পরিমাণ ২১ দশমিক ৬৮ শতাংশ। যার আর.এস দাগ- ৯০২ ও ৯০১, খতিয়ান- ১৯২, মৌজা- জোতপ্রতাপ। কিন্তু পরিদর্শনের সময় বলা হয়, এমনকি বর্তমান
গঠনতন্ত্রেও দেখানো হয়েছে জমির পরিমাণ ১২ দশমিক ৬৮ শতাংশ। যা সম্পূর্ণভাবে মিথ্যা ও বানোয়াট।
কলেজের চাকুরি প্রত্যাশী শিক্ষক-কর্মচারীরা বলেন, বর্তমানে আর.এস- ৯০২ ও ৯০১ দাগে উল্লেখিত জমিতে প্রতিষ্ঠানের বর্তমান সভাপতি প্রফেসর সুলতানা রাজিয়া ও তার ভাই শামসুল হক নিজেরাই ১৯৭৫ সাল থেকে কলেজের জমিতে বড় ভবন নির্মাণ করে দোকান ও বাসা ভাড়া দিয়ে আসছে। এলাকার মানুষের প্রশ্ন প্রতিষ্ঠানের জমিতে কিভাবে তারা ব্যক্তিগতভাবে বাড়ি করে দোকান ও বাসা ভাড়া দেয়?
চাকুরিপ্রত্যাশী মনোয়ার হোসেন (ছন্মনাম) বলেন, ১৯৭৫ সালের দানপত্র দলিল নং- ২২৮৫৪ এই দলিল মূলে জমির মালিক তের জন। কিন্তু সভাপতি সুলতানা রাজিয়া ও তার নেশাগ্রস্থ ছেলে রুশো আহমেদ কলেজের জমি নিজের কব্জায় নেওয়ার জন্য এই জাল দলিল তৈরি করেছেন। এমনকি এর আগেও একটি জমির জাল দলিল তৈরি করার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এক চাকুরি প্রত্যাশীর কাছে প্রতিষ্ঠানের নামে জমি নিয়ে বড় ছেলের নামে করেন সুলতানা রাজিয়া।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রভাষক পদপ্রত্যাশী ক্যামেরার সামনে বলেন, কলেজ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে যেসকল দলিল দেওয়া হয়েছে, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার পূর্বের তিন জন অধ্যক্ষের কাছেও নিয়োগ বাণিজ্য করেছেন সুলতানা রাজিয়া। পূর্বে দুই অধ্যক্ষকে বিভিন্ন ভাবে হয়রানি এবং ব্ল্যাকমেইল করে হুমকি-ধামকি দিয়েছেন। জোরপূর্বক তাদেরকে প্রতিষ্ঠান থেকে বহিস্কার করা হয়েছে।
এবিষয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ মোহাম্মদ হোসেন হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সভাপতি প্রফেসর সুলতানা রাজিয়া বলেন, বিষয়টি যেহেতু জটিল, অফিসে আসেন, সরাসরি কথা বলব। পরে ফোনে এবিষয়ে মন্তব্য রাজি হননি তিনি।