জুনাইদ আহমেদ পলক, এমপি
ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক ও পাকিস্তানের স্বৈরশাসন এবং ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট-পরবর্তী ২১ বছর প্রত্যক্ষ ওপরোক্ষভাবে সামরিক শাসন-শোষণের জাঁতাকলে পিষ্ট হওয়ার পরও বাংলাদেশের জনগণ কখনো উন্নত, সমৃদ্ধও মহত্ জীবনের স্বপ্ন ত্যাগ করেনি। এক সমৃদ্ধ আনন্দময় জীবন সৃষ্টির জন্য তারা বারবার সংগ্রামের পথ বেছেনিয়েছে। পাকিস্তানি স্বৈরশাসন ও শোষণের বিরুদ্ধে কঠোর ত্যাগ ও সংগ্রামের মধ্য দিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুশেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশের জনগণ জাতীয় স্বাধীনতা অর্জন করে। বঙ্গবন্ধু সরকারের প্রথমপঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা (১৯৭৩-৭৮) প্রণয়নের পর ১৯৭৪-৭৫ অর্থবছরে জাতীয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৯ দশমিক৫ শতাংশ অর্জিত হয়। কৃষিতে বাম্পার ফলন হয়। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ সব খাতেবঙ্গবন্ধুর দূরদর্শী দৃষ্টিভঙ্গি থেকে গৃহীত নানা উদ্যোগ বাস্তবায়নের সুফল যখন মানুষ পেতে শুরু করে, তখনই১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট স্বাধীনতাবিরোধী প্রতিক্রিয়াশীলরা তাকে নির্মমভাবে হত্যা করে। দেশ নিমজ্জিত হয়অমানিশার নিকষ কালো অন্ধকারে। দিশেহারা জনগণ এ অবস্থা থেকে উত্তরণে এমনই একজন দূরদর্শী ওযোগ্য নেতার প্রতীক্ষায় থাকেন, যে নেতা তাদের দেবেন উন্নত ও সমৃদ্ধ জীবনের সন্ধান।
১৯৮১ সালের ১৭ মে বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য উত্তরসূরি জননেত্রী শেখ হাসিনার ভারতে ছয় বছরের নির্বাসিত জীবনশেষে স্বদেশ প্রত্যার্বতনে জনগণের সেই অভাবই যেন পূরণ হয়। তিনি শুরু করেন স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধেদুর্বার আন্দোলন। সুদীর্ঘ ২১ বছরের স্বৈরশাসনবিরোধী গণতান্ত্রিক সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় ১৯৯৬ সালেঅনুষ্ঠিত নির্বাচনে জনগণ তাকে ক্ষমতাসীন করে। শুরু হয় বাংলাদেশের মানুষের জন্য গৌরবময় জীবন এবংউন্নত ও সমৃদ্ধ অর্থনীতি গড়ে তোলার পথে নবযাত্রা। এই অভিযাত্রায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনারদূরদর্শী নেতৃত্বে রাষ্ট্রপরিচালনার সময়কাল ১৯৯৬-২০০১ এবং ২০০৯ থেকে আজ পর্যন্ত। এই সময়ে তিনিবাংলাদেশকে পৌঁছে দেন অনন্য উচ্চতায়। অতি সম্প্রতি ইকোনমিস্ট ইনটেলিজেন্স ইউনিটের (ইআইইউ) একপ্রতিবেদনে বলা হয়েছে—২০৪০ সালে বাংলাদেশ বিশ্বে শীর্ষ ২০টি অর্থনীতির একটি হাব হবে। আর ব্রিটেনেরঅর্থনৈতিক গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর ইকোনমিক অ্যান্ড বিজনেস রিসার্চ (সিইবিআর) ২০২২ সালেই জানায়—বর্তমান ধারায় অর্থনৈতিক বিকাশ অব্যাহত থাকলে ২০৩৫ সাল নাগাদ বাংলাদেশ বিশ্বে ২৫তম অর্থনীতিরদেশে পরিণত হবে। প্রশ্ন জাগতে পারে, কীভাবে বাংলাদেশের উন্নয়ন বিশ্বের বিস্ময়ে পরিণত হলো? এক কথায়এর উত্তর হলো :মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের তিনটি অসাধারণ গুণ—সততা, সাহস ওদূরদর্শিতা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুদ্ধাপরাধী এবং পঁচাত্তরের ঘাতকদের বিচারের উদ্যোগ নিয়ে অসীমসাহসিকতার পরিচয় দেন। দেশি-বিদেশি প্রবল চাপ থাকা সত্ত্বেও সাহসের সঙ্গে যুদ্ধাপরাধী ও পঁচাত্তরেরখুনিদের বিচার করে জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করেন। তৃতীয়ত, দূরদর্শিতা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনারদূরদর্শী চিন্তা ও স্বপ্নের ফসল ডিজিটাল বাংলাদেশ। ২০০৮ সালের ১২ ডিসেম্বর দেশের প্রাচীন রাজনৈতিক দলআওয়ামী লীগের নির্বাচনি ইশতেহার দিন বদলের সনদ রূপকল্প ২০২১-এর মূল উপজীব্য হিসেবে এরআবির্ভাব। খ্যাতিমান তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিশেষজ্ঞ সজীব ওয়াজেদ জয় ডিজিটাল বাংলাদেশবাস্তবায়নের আর্কিটেক্ট। বিগত প্রায় ১৩ বছর ধরে তিনি সামনে থেকে ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে নেতৃত্বদেন। ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের ঘোষণা যে একটি আধুনিক বাংলাদেশ বিনির্মাণের পথে কতটা দূরদর্শীঘোষণা ছিল, তার প্রমাণ এর সফল বাস্তবায়ন।
ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে সাফল্যে ভর করেই দূরদর্শী, প্রজ্ঞাবান ও বিচক্ষণ নেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রীজননেত্রী শেখ হাসিনা ২০২২ সালের ১২ ডিসেম্বর ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবসে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণেরঘোষণা দেন। আমরা সবাই জানি যে, বাংলাদেশের ইতিহাসে ডিজিটাল বাংলাদেশ ছিল সবচেয়ে আলোড়নসৃষ্টিকারী ঘোষণা। ঠিক একইভাবে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের ঘোষণাও ইতিমধ্যে মানুষের মনে শুধুআলোড়ন সৃষ্টিই করেনি, নব আশার সঞ্চার করেছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আইসিটিবিষয়ক মাননীয় উপদেষ্টাসজীব ওয়াজেদ জয়ের তত্ত্বাবধানে স্মার্ট বাংলাদেশের চারটি স্তম্ভ—স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট অর্থনীতি, স্মার্টগভর্নমেন্ট এবং স্মার্ট সোসাইটির ওপর ভিত্তি করে সরকার স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে ইতিমধ্যে কাজশুরু করেছে।
স্মার্ট বাংলাদেশ কতটা আধুনিক একটি কর্মসূচি, তা এর চার স্তম্ভের লক্ষ্য থেকেই বোঝা যায়। সম্পূর্ণপরিকল্পনা শর্টটার্ম, মিডটার্ম এবং লংটার্ম টাইমফ্রেমে সাজানো হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বেবাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণে জাতিসংঘেরসুপারিশ পেয়েছে। ন্যায্য, সত্য ও মানুষের কল্যাণের পক্ষে সোচ্চার দূরদর্শী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্মার্টবাংলাদেশ ২০৪১ বিনির্মাণের যে ভিশন ঘোষণা করেছেন, তাতে শক্তি, সাহস, সক্ষমতা ও প্রেরণা জুগিয়েছেডিজিটাল বাংলাদেশ। আগামী দিনে আবারও ক্ষমতাসীন হলে ২০৪১-এর আগেই বাংলাদেশ হবে বুদ্ধিদীপ্ত, উদ্ভাবনী ও সমৃদ্ধ উচ্চ অর্থনীতির আধুনিক স্মার্ট বাংলাদেশ। আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ৭৭তম জন্মদিনেসুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করছি।
লেখক: এমপি, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী