যাকে নমিনেশন দেবো, তার জন্য কাজ করতে হবে: শেখ হাসিনা।।
নিখাদ বার্তা কক্ষ।।
প্রকাশিত:রবিবার ০৬ আগস্ট ২০২৩ | অনলাইন সংস্করণ
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যাকেই দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হোক না কেন, তার পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘নৌকা মার্কায় আমরা যাকেই নমিনেশন দিই, ভালো-মন্দ, কানা-খোড়া যা-ই হোক, আপনাদের প্রতিজ্ঞা করতে হবে যে, তাকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করতে হবে।’
রবিবার (৬ আগস্ট) আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভার সমাপনীর বক্তব্যে তিনি এ নির্দেশনা দেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী সবাইকে হাত তুলে প্রতিশ্রুতি করার আহ্বান জানালে সবাই হাত তোলেন।
তিনি দলের তৃণমূল নেতাকর্মীদের মানুষের পাশে থেকে মানুষের হৃদয় জয় ও তাদের আস্থা-বিশ্বাস অর্জনের নির্দেশ দেন। নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমাদের এক হয়ে কাজ করতে হবে। আগামী নির্বাচনের জন্য এখন থেকে জনমত সৃষ্টি করে আবারও যেন বিজয়ের পতাকা নিয়ে এই গণভবনে আসবেন, সেই দাওয়াত দিচ্ছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, আপনারা মানুষের কাছে গেলে, সরকারের উন্নয়ন তুলে ধরলে, ভবিষ্যতের প্রতিশ্রুতি দিলে, অবশ্যই মানুষ আওয়ামী লীগকে ভোট দেবে। নৌকায় ভোট দেবে। নৌকায় ভোট দিয়ে এ দেশের মানুষ স্বাধীনতা পেয়েছে। আর্থ- সামাজিক ও অবকাঠামোগত উন্নতি হয়েছে। নৌকায় ভোট দেওয়ার কারণে ডিজিটাল বাংলাদেশ পেয়েছে। খাদ্য নিরাপত্তা পেয়েছে। ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ গেছে। সবাই নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েছে বলে হয়েছে। সেটা মানুষকে বলতে হবে। বলে তাদের সমর্থন আদায় করতে হবে। এটাই হবে সব থেকে বড় কাজ।’
জাতীয় সংসদ নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘এই নির্বাচনের ওপর নির্ভর করছে আমাদের ক্ষমতায় যাওয়া না যাওয়া। সেই কথাটা মাথায় রেখে… আমাদের ওপর ভরসা রাখতে হবে। কারণ, আমরা যখন নমিনেশন দেবো, অবশ্যই আমাদের মাথায় এটাও থাকবে যে, কাকে নমিনেশন দিলে ওই সিটটা আমরা ফিরে পাবো। সেখানে অনেক এসএমএস পাঠালে, আর কারও গীবত গাইলেই যে আমরা সে কথা শুনবো, তা কিন্তু আমি শুনবো না। স্পষ্ট বলে দিচ্ছি, ওই কথা আমি শুনবো না। কারণ, আমার নিজের হিসাব-নিকাশ আছে। আজকে ৪২ বছর আপনাদের সঙ্গে প্রতিটি এলাকায় ঘুরেছি। কাজেই আমার একটা ধারণা আছে। আমার দলেরও আছে। আমরা সার্ভে করি। রিপোর্ট নিই। কার অবস্থান কতটা? সেটা বুঝে কিন্তু আমরা নমিনেশন দিই।’
দলের নমিনেশন দেওয়ার প্রক্রিয়া তুলে ধরে মনোনয়ন বোর্ডের প্রধান শেখ হাসিনা বলেন, ‘অনেক সময় আমি খবর পাই, মাঝে মাঝে ম্যাসেজও পাই যে, এক এলাকায় আমাদের সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে অথবা নেতার বিরুদ্ধে আমাদেরই লোকটা নানা অপপ্রচার চালায়। আমি তাকে লিখলাম, ওপর দিকে থুথু ফেললে নিজের গালেও পড়ে। যাকে খাটো করার চেষ্টা হচ্ছে সে খাটো হলে দলই খাটো হবে। আর নৌকার ভোট কমবে।’
কাজেই একজনকে খাটো করে যদি কেউ নমিনেশন চায়, সে তো বড় হতে পারবে না। সে ভোটে জিততেও পারবে না। কারণ মানুষের মন থেকেই তো মুছে যাবে। আর এত কাজ যে আমরা করলাম, সেটা থাকবে না। সেটা সবাইকে মনে রাখতে হবে। নমিনেশন আমরা যখন দেই, আমাদের নমিনেশনের কতগুলো নিয়ম আছে। আমি কিন্তু ঘরে বসে থাকি না। সারাদিন যেমন দেশ গড়ার কাজ করি, সংগঠনের কাজও বসে করি। কোথায় কার কী অবস্থা… আমরা ৬ মাস পর পর সার্ভে করি। আমাদের এমপিদের অবস্থা বা আমাদের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের অবস্থা, তাদের কী কাজকর্ম, তার কিন্তু হিসাব নেওয়ার চেষ্টা করি।’
‘দলের প্রার্থীদের বিরুদ্ধে কাজ করেন’, এমনটি জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘নমিনেশন চূড়ান্ত হওয়ার পর কেউ কেউ মনে করেন, আওয়ামী লীগ তো নমিনেশন দিলো না। একটা সিট না পেলে কী হবে? আরও বাকি সিট তো পাবো। ক্ষমতায় তো যাবো। তো এটাকে আমরা হারাই। হারিয়ে নিজেদের ক্ষমতাটা দেখাই। আর ওটা দেখাতে গিয়ে যে, পুরোটাই হেরে যাবেন আর তারপর…? ২০০১ সালে হেরে যাওয়ার পর বিএনপির যে অত্যাচার-নির্যাতন, সেটা কি মনে আছে কারও? না ভুলে গেছেন সবাই। আমরা আবার যদি ক্ষমতায় আসতে না পারি, আমাদের নেতাকর্মীদের ওপরে কি নির্যাতন হবে? আর বাংলাদেশটার কী দশা হবে? এরা তো লুটে খাবে। ২০০১-২০০৬ সালের মতো লুটে খাবে তারা। এরা তো লুটেরা। হাজার হাজার কোটি টাকা লুটে এখন সেই টাকা ব্যয় করে। এখন লন্ডনে বসে আছে খালেদা জিয়ার ছেলে। যত রকমের অপকর্ম করে গেছে।’
দলের নেতাদের উদ্দেশ করে আওয়ামী লীগের সভাপতি বলেন, ‘সামনে আমাদের নির্বাচন। এ ব্যাপারে এখন থেকে সবাইকে প্রস্তুতি নিতে হবে। আমাদের একমাত্র শক্তি হচ্ছে জনগণ। জনগণের শক্তি হচ্ছে আওয়ামী লীগের একমাত্র শক্তি। আওয়ামী লীগ বা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কোনোদিন কারও কাছে মাথা নত করেননি। নিজের জীবনকে কবুল করে তিনি এই দেশের মানুষের মুক্তি এনে দিয়েছেন। আমরা তাঁরই আদর্শের অনুসারী। আমরা কারও কাছে মাথা বিকাই না। মাথা নত করি না। আওয়ামী লীগ এদেশ স্বাধীন করেছে। আজকে যতটুকু উন্নতি হয়েছে আওয়ামী লীগ আছে বলেই তা সম্ভব হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘এই সাড়ে ১৪ বছরে বাংলাদেশটার যেভাবে পরিবর্তন এনেছি, আমার মনে হয়— এটা একটি অসাধ্য সাধন। আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর থেকে দেশের মানুষের উন্নতি হচ্ছে। মানুষের আর্থিক অবস্থার অনেক পরিবর্তন হয়েছে। এই পরিবর্তন হয়েছে বলে এটা ধরে রাখতে হবে। বাংলাদেশের জনগণ আমাদের ভোট দিয়েছে। আমরা নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় এসেছি। জানি আমাদের বিরুদ্ধে অনেক রকম অপপ্রাচার চালানো হয়। অপপ্রচার চালায় কারা? যাদের জন্ম হচ্ছে সন্ত্রাসের মধ্য দিয়ে। অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের মধ্য দিয়ে। যারা ভোট চুরির মধ্য দিয়ে…। আর তাদের মুখে যখন বড় বড় কথা শুনি, তা অবাকই লাগে। তারা নাকি অনেক কিছু করবে। ক্ষমতায় তো ছিল। শুধু লুটপাট করেছে। মান্ডিলন্ডারিং করেছে। বিদেশে অর্থপাচার করেছে। নিজেদের ভাগ্য তারা করেছে। বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য তারা গড়েনি।’
শেখ হসিনা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ছাড়া এ দেশের মানুষের পাশে আর কেউ নেই। আওয়ামী লীগের সময়ে দেশের মানুষের ভাগ্য গড়া হয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আগামী ইলেকশনকে সামনে রেখে আমরা যে উন্নয়নটা করেছি। যতটুকু করেছি প্রত্যেক এলাকায় উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে। সেই কথাটা মানুষের সামনে তুলে ধরতে হবে। সেটা প্রচার করতে হবে।’
আমরা যে ভাতা দিচ্ছি, স্বল্পমূল্যে খাবার দিচ্ছি, এর উপকারভোগীদের কাছে যেতে হবে। প্রত্যেক এলাকার ভোটার লিস্ট ধরে ঘরে ঘরে গিয়ে বলতে হবে যে, আওয়ামী লীগ কী কী উন্নয়ন এ পর্যন্ত করেছে। ভবিষ্যতে কী করবে। আমরা অনেকগুলো কাজ হাতে নিয়েছি, সেগুলো সম্পন্ন করতে হবে। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে দেশকে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সেজন্য সবাইকে তৎপর হতে হবে।’
দলের নেতাদের উদ্দেশ করে তিনি আরও বলেন, ‘আমরা যেটা করেছি সেটা মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। যতক্ষণ বসে একে অপরের গীবত গাইবেন, একে অপরকে খাটো করবেন— এই সময়টা নষ্ট না করে জনগণের জন্য কী কী কাজ করেছি, সেটা জনগণকে বলেন। তাদের মাথায় ঢুকান যে, আওয়ামী লীগ আছে বলেই এটা পাচ্ছেন, না থাকলে পাবেন না। সব লুটেপুটে খাবে।’
বিএনপির ২০১৩, ১৪ ও ১৫ সালের আন্দোলনের প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তারা মনে করে— অগ্নিসংন্ত্রাস করলে, পুড়িয়ে মানুষ মারলে, আওয়ামী লীগ পড়ে যাবে। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার এত কাঁচা নয়। আওয়ামী লীগ সরকারের শিকড় প্রথিত এই মাটিতে। আওয়ামী লীগ এদেশের মাটি মানুষের থেকে উঠে এসেছে। আমরা মানুষের জন্য কাজ করি।’
এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘কিছুদিন আগে আমাদের হুমকি দিলো— ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে আমাদের উৎখাত করবে। কী করতে পেরেছে? কিছু পেরেছে? পারেনি। কেন পারেনি? কারণ, মানুষের সমর্থন পায়নি। কিন্তু খালেদা জিয়া ভোট চুরি করলে, আমরা তাকে উৎখাত করেছি। চোরের মায়ের বড় গলা। এখন ওরা একটু বেশি বড় বড় কথা বলে। জনগণের সমর্থন তাদের নেই, পাবেও না। হাতে টাকা আছে। টাকা ছড়াক। কিছু লোক আছে। সবাই তো আওয়ামী লীগ সমর্থন করবে না। সেগুলো এক হয়। এখানে জামায়াত আর বিএনপি হলো জোট। আর বাকি কিছু খুচরা পার্টি। তারা (ছাগলের তিন নম্বর বাচ্চার মতো) শুধু লাফাচ্ছে। আর আন্দোলন করে তাদের মুখের দিকে তাকাচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের একমাত্র শক্তি জনগণ। ওরা যত অপপ্রচার করবে, তার উপযুক্ত জবাব দিতে হবে। জনগণের কাছে যেতে হবে। জনগণকে বলতে হবে— আওয়ামী লীগ ছাড়া এভাবে কেউ দেয় না।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের উন্নয়ন সুষম উন্নয়ন সারা বাংলাদেশ ব্যাপী। কোন এলাকায় ভোট পেয়েছি, কোন এলাকায় পাইনি, সেটা বিবেচনায় নেইনি। বিবেচনায় নিয়েছি একটা, তা হলো বাংলাদেশের মানুষ ভালো থাকবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশের যে পরিস্থিতি ছিল— বিএনপির অগ্নিসন্ত্রাস, জ্বালাও-পোড়াও, অবরোধ কর্মসূচি, অনেক কিছু তারা করেছে। কিন্তু জনগণের কাছে আমাদের গ্রহণযোগ্যতা ও শক্তিশালী সংগঠন আছে বলেই তারা কোনও ক্ষতি করতে পারি। বরং তারাই ধীরে ধীরে মানুষের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।’
তারেক রহমান ও তার স্ত্রীর মামলার রায়ের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘তার বিরুদ্ধে মামলা, শাস্তি হয়। বিএনপির লোকেরা কোট-কাচারিও মানতে চায় না। কোর্ট ভাঙচুর করে। মাস্তানি করে। এটা তো তাদের অভ্যাস। কোর্টের দোষ কী? চুরি করার সময় মনে ছিল না? তো চোরকে চোর বলবে না কী বলবে? তারা তো ভাঙচুর সন্ত্রাসী কাজই জানে। এখন থেকে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। তাদের গুজব ও অপপ্রচারে কান না দিয়ে উপযুক্ত জবাব দিতে হবে। এ বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।’
সাংগঠনিক কার্যক্রম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সদস্য সংগ্রহ দেখি কেউ করেন, কেউ করেন না। কেন করেন না আমি জানি না। সদস্য সংগ্রহ করা, সংগঠন তৈরি করা… আজকে আমরা অনেককে বক্তব্য দিতে দেইনি।’
বর্ধিত সভায় জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের ৪৩ জন নেতাকে বক্তব্যের সুযোগ দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘নতুনদের থেকে বক্তব্য শুনতে চেয়েছি। কষ্ট করে এসেছেন। যেসব বক্তব্য এসেছে তা অত্যন্ত গঠনমূলক। সেই জন্য সবাইকে ধন্যবাদ জানাই। যাদের বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ দিতে পারিনি, ভবিষ্যতে যখন ডাকবো তখন এবার যারা দিয়েছেন, তাদের বাদ দিয়ে বাকিদের দেবো। যারা সময় মতো কমিটি করতে ব্যর্থ হয়েছেন, তাদের কিন্তু বক্তৃতা করতে দেইনি। দেবো না। যারা সংগঠন করে আসবেন, তারাই সুযোগ পাবেন। এভাবেই আমরা আস্তে আস্তে দলকে শৃঙ্খলার মধ্যে নিয়ে আসবো।’