সাতক্ষীরা প্রতিনিধি: বাল্যকাল থেকে নাজমুল হুদার স্বপ্ন ছিল ডিফেন্সে চাকরি করা। দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেয়া কিন্তু নাজমুলের বাবার সঙ্গে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনার প্রেক্ষিতে মূহুর্তে দৃশ্যপট পাল্টে যায়। সেই থেকে নাজমুল দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করে নিজেকে সাইবার জগতে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার। সেই অদম্য মনোবল আর ইচ্ছা নাজমুলকে আলোর পথ দেখায়। ২০১৫ সালে নাজমুলের বাবা মুহাঃ হায়দার আলীর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম তথা ব্যক্তিগত ফেসবুক একাউন্ট নষ্ট হয়ে যায়। এরফলে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হারিয়ে তিনি বিপাকে পড়েন। বাবার অমলিন চেহারা দেখে নাজমুল ফেসবুক আইডি রিকভার করার আপ্রাণ চেষ্টা করে।কিন্তু কোনভাবেই উদ্ধার করতে সক্ষম হলেন না। এতে তার বাবা নানা সমস্যার বেড়াজালে আটকে যান। মূলত এই ঘটনার প্রেক্ষিতে বাবার দুঃখভারাক্রান্ত চেহারা তাকে বেদনায় কাতর করে ফেলে। বাবার মুখে সেদিন হাসি ফুটিয়ে তুলতে না পারলেও এই ঘটনার শিকার যাতে আর কেউ না হয় তিনি জেদ চেপে বসেন। এসব কারণে তিনি সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করার ইচ্ছা পোষণ করেন।
২০১৫ সালের ডিসেম্বরে নাজমুলের সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে কাজ শুরু করার লক্ষ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নিয়ে কাজ করা কিছু ভারতীয় ফেসবুক গ্রুপের সঙ্গে যুক্ত হোন। এরপর সেখান থেকে দীর্ঘদিন কাজ শিখে সাইবার হামলার শিকার হওয়া মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। এক পর্যায়ে সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করতে করতে নাজমুল এই কাজে পারদর্শী হয়ে ওঠেন। কিন্তু নাজমুলের সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করাকে আশপাশের লোকজন তুচ্ছতাচ্ছিল্য এবং নানা ধরনের তিরষ্কার করে বেড়াত। সাইবার জগতের হিরো নাজমুলের সংগ্রামের পথ ছিল কন্টকাকীর্ণ।
সব বাঁধা উপেক্ষা করে নিজেকে নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়। অত্যন্ত পারদর্শী নাজমুল জন্মগ্রহণ করেন কুড়িগ্রাম জেলার ভুরুঙ্গামারী উপজেলার ফুলকুমার গ্রামে। দিনে দিনে মেধাবী এ সোশ্যাল মিডিয়ায় সাইবার হিরো দেশের স্বনামধন্য সংবাদ মাধ্যমে খবরের শিরোনাম হয়েছেন। এতে নাজমুল নাঈমের দক্ষতার পরিচয় ফুটিয়ে তুলে ধরা হয়েছে। তিনি দেশের হাজার হাজার হ্যাক কিংবা নষ্ট হয়ে যাওয়া ফেসবুক আইডি মূহুর্তে উদ্ধার করে দেন।শুধু ফেসবুক আইডি নই,উদ্ধার করেছেন দেশসেরা জনপ্রিয় ইউটিউবারদের চ্যানেল। এতে উপকৃত হয়েছে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষেরা। উপকৃত হয়েছে যারা তাদের তালিকায় রয়েছে জনপ্রিয় ইউটিউবার জুনায়েদ ইসলাম,ফিল্যান্সার আনিসুর রহমান নিলয়,রোড রাইর্ডাস এর প্রতিষ্ঠাতা হাসান সেতু,বাংলাদেশের ক্রিকেটার আরিফা জাহান বীথি, কুঁড়েঘর ব্যান্ডের অফিসিয়াল ফেসবুক গ্রুপের এডমিন কে.এম রাকিব আল হাসান সহ হাজার হাজার মানুষ। কাজের দক্ষতার পরিচয় দিয়ে তিনি সাইবার বিশেষজ্ঞ হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। বিভিন্ন ব্যক্তিকে সাইবার সেবা দিয়ে অতিরিক্ত টাকা মানবকল্যাণে ব্যয় করেন।
সোশ্যাল মিডিয়ায় সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে নাজমুল হুদার পরিকল্পনা কি ? অভিভাবকরা কেমন সাড়া দিয়েছিল জানতে চাইলে তিনি বলেন, সারাবিশ্বে তথ্য প্রযুক্তির চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেই ধারাবাহিকতায় কোন অংশে পিছিয়ে নেই আমাদের দেশ। দিন দিন বাংলাদেশে তথ্য প্রযুক্তির চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় এখানে সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে ব্যবহার কারীদের মনে শঙ্কা বিরাজ করছে। ভার্চুয়াল জগত হয়ে ওঠেছে আতংকের আরেক নাম।এসব ভয়ভীতি কাটাতে এবং সকল ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা দিতে সাইবার জগতে আমার পদচারণা।কেননা আমার বাবা ছিলেন একজন ভুক্তভোগী। ফেসবুক আইডি হ্যাকিং থেকে বাঁচতে কি কি করতে হবে এই বিষয়ে সচেতনতা এবং পরিবারের সঙ্গে কোথাও বেরুলে আমার সম্পর্কে জানার চেষ্টা করতো,সম্মান জানাতো।
এরপর সব সময় পিতা-মাতা আমাকে সাপোর্ট দিতেন। এছাড়া আশপাশের লোকজন তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে অসম্মান করত। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে তারা এখন আমার কাজকে সম্মান করে।আমার শারিরীক অবস্থার খোঁজখবর নেই। বাংলাদেশের বাইক বিডি এর নতুন সিইও এবং রোড রাইডারর্স এর প্রতিষ্ঠাতা হাসান সেতু বলেন, আমার ফেসবুক একাউন্টে সমস্যা হয়েছিল। মূহুর্তে নাজমুল হুদা ভাই আমার একাউন্টের সমস্যা সমাধান করে দেন। নাজমুল হুদার মাধ্যমে উপকৃত হওয়া তরুণ প্রজন্মের জনপ্রিয় ইউটিউবার জুনায়েদ ইসলাম বলেন, পূর্বে আমার ইউটিউব চ্যানেলের এক্সেস হারিয়ে গেছিল।তখন সোশ্যাল মিডিয়ায় সাইবার বিশেষজ্ঞ নাজমুল হুদা নাইম ভাই ২৪ ঘন্টার মত সমস্যার সমাধান করে দেন।
এছাড়া আমার ফেসবুক একাউন্ট হ্যাক হলে জানানোর সাথে সাথেই তিনি উদ্ধার করে দেন। উল্লেখ্য: সাইবার বিশেষজ্ঞ নাজমুল হুদা নাইম সায়েন্স বিভাগ থেকে এসএসসি পাশ করেন। তিনি এইচএসসি পাশ করে মানবিক বিভাগ থেকে। সোশ্যাল মিডিয়ায় সাইবার নিরাপত্তার কাজের পাশাপাশি তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিচ্ছেন।
সোশ্যাল মিডিয়ায় সাইবার নিরাপত্তার বিষয়ে নাজমুল হুদা নাঈম জানান, প্রযুক্তির বিশ্ব প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছে। প্রযুক্তি পণ্যের সুবিধা বাড়ছে। একই সঙ্গে বাড়ছে ডেটা নিরাপত্তার ঝুঁকিও। সবাই আলোর পথে হাঁটছে, সম্ভাবনার পথে। কিন্তু অপরাধ চক্র থেমে নেই। সাইবার অপরাধের শিকার হচ্ছে সরকার, করপোরেট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং সব আর্থিক ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান।
তিনি আরও বলেন, ছোটবেলা থেকেই সাইবার সিকিউরিটি ও হ্যাকিং এর প্রতি আমার গভীর আগ্রহ ছিল। আমার ইচ্ছা ও আগ্রহ দেখে অনেকেই হাসাহাসি করতেন। পঞ্চম শ্রেণিতে থাকতে আমি এ কাজ করছি। দেশ ও দেশের বাইরের মানুষের সোশ্যাল মিডিয়ার সমস্যাগুলো অনলাইনের মাধ্যমে সমাধান করে দেই। মাসে যা উপার্জন হয় তা দিয়ে গরির ও অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করি। আমি মনে করি, মানুষ মানুষের জন্য।