সাতক্ষীরায় বাল্য বিবাহকে লাল কার্ড দেখালো দুই শতাধিক শিক্ষার্থী

শিক্ষাঙ্গন

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি: সাতক্ষীরায় বাল্য বিবাহকে লাল কার্ড দেখালো দুই শতাধিক শিক্ষার্থীরা।

বুধবার (১২ জুলাই) সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ডি বি ইউনাইটেড হাইস্কুলে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান বারসিকের আয়োজিত এক ক্যাম্পেইনে বাল্য বিবাহকে লাল কার্ড প্রদর্শন করে তারা।

‘বাল্য বিবাহ জীবন থেকে জীবন কেড়ে নেয়’ প্রতিপাদ্যে এই ক্যাম্পেইনে ডি বি ইউনাইটেড হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক মমিনুর রহমান মুকুলের সভাপতিত্বে বাল্য বিয়ের কুফল তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন, সাতক্ষীরা সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কর্মকর্তা সুমনা আইরিন, সদর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা শেখ সহিদুর রহমান, সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. জাহিদুর রহমান, মানবাধিকার কমর্ী মাধব চন্দ্র দত্ত, জেলা বাল্য বিবাহ প্রতিরোধ কমিটির সমন্বয়ক এ্যাড. সাকিবুর রহমান বাবলা, অভিভাবক আব্দুল আহাদ, শিক্ষক মুকুল হোসেন, শিক্ষাথর্ী লিপিকা গাইন, তাবাচ্ছুম, বারসিকের আঞ্চলিক সমন্বয়কারী রামকৃষ্ণ জোয়ারদার।

বক্তারা বাল্য বিয়ের কুফল তুলে ধরে বলেন, বাল্যবিবাহ মানুষের জীবনে একটি অভিশাপ। বাবা-মারা অসচেতনতার কারণে অল্প বয়সে ছেলে-মেয়েকে বিয়ে দিয়ে নিশ্চিন্ত হতে চাইলেও বিয়ের পর দিন থেকে শুরু হয় নানা মাত্রিক সমস্যা। এক কথায় বলা চলে বাল্য বিবাহ জীবন থেকে জীবন কেড়ে নেয়। আমরা নারী আমরাই সব পারি। নারীরা হলো সহনশীল। পড়াশুনা করে নারীরা এখন অনেক এগিয়ে গেছে। মেয়েরা এখন আর পিছিয়ে নেই, দেশের প্রধানমন্ত্রী, জাতীয় সংসদের স্পিকার, দেশের শিক্ষামন্ত্রী ও বিরোধী দলীয় নেতাও একজন নারী। সংসার করা থেকে দেশ তথা বিশ্বের বিভিন্ন বড় বড় প্রতিষ্ঠান শাসন করছে নারীরা।তাদেরকে আর অবহেলা করার কোন জো নেই। সুতরাং নারীরা সবই পারে। এজন্য সকলকে নিজ নিজ দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে বাল্য বিবাহ প্রতিরোধ করতে হবে।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন, বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান বারসিকের সহকারী কর্মসূচি কর্মকর্তা গাজী মাহিদা মিজান, বারসিকের শ্যামনগর অফিসের ক্যাশিয়ার বিধান মধু, প্রোগ্রাম অফিসার বিশ্বজিৎ মন্ডল, বারসিকের শিক্ষা, সংস্কৃতি ও বৈচিত্র্য রক্ষা টিমের সভাপতি এস এম হাবিবুল হাসান, যুব সংগঠক জাহাঙ্গীর আলম, প্রচার সম্পাদক মো. আহাদুজ্জামান সাহেদ, সদস্য মো. তায়িব হোসেন প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে অতিথিরা আরো বলেন, সরকার ঘোষিত স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে হলে মেয়েদেরকে লেখাপড়া করতে হবে। অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের নিয়ে ভালো স্বপ্ন দেখবে। মেয়েরা পড়াশোনা করে বিয়ের জন্য নয়, নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করবে। ১৮ বছরের আগে বিয়ে নয়। বাল্য বিয়ে দিলে সরকারি হেল্প লাইনে যোগাযোগ করতে হবে। বাল্যবিবাহ যত না মুসলমানদের মধ্যে হয় তার চেয়ে বেশি হয় হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে। কারণ তাদের বিবাহের কোন রেজিষ্ট্রী নাই। যাতে কোন ডকুমেন্ট থাকে না। যেটা উভয় পক্ষের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।
বাল্যবিবাহ আইনের বাধ্যবাধকতা থাকলেও আমাদের সমাজ সেটিকেও বৃদ্ধা আঙুল দেখিয়ে বাল্যবিবাহ দিচ্ছে অভিভাবকরা।তারা সন্তানের স্বাস্থ্যের কথা না ভেবে ভালো পাত্র পেলেই অল্প বয়সেই মেয়েকে বিয়ে দিয়ে দিচ্ছে। এটা রোধ করতে আমাদের অভিভাবকদের আরো বেশি সচেতন হতে হবে। সাতক্ষীরা উপকূলীয় এলাকা হওয়ায় এখানে বাল্য বিবাহ সবচেয়ে বেশি প্রচলিত। আমাদের আইন করে নয় সচেতনতার মাধ্যমে বাল্যবিবাহকে সমাজ থেকে বিতাড়িত করতে হবে।

অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন, বেসরকারি গবেষণা উন্নয়ন সংস্থা বারসিকের আঞ্চলিক সমন্বয়ক রামকৃষ্ণ জোয়ার্দার।

অনুষ্ঠান শেষে ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে পুরস্কার হিসেবে বই,বিভিন্ন প্রকার ফলজ ও বনজ গাছের চারা বিতরণ করা হয় স্কুলের শিক্ষার্থীদের মাঝে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *