বাবা মারা যাওয়ার পরও রিজেন্ট হাসপাতালের মালিক মো. সাহেদ ওরফে সাহেদ করিম লাপাত্তা। তার বাবা সিরাজুল করিম বৃহস্পতিবার রাতে আত্মীয়-পরিজনবিহীন অবস্থায় ঢাকার একটি হাসপাতালে মারা গেছেন (ইন্না লিলস্নাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। সিরাজুল যে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন, সে হাসপাতালের শীর্ষ একজন কর্মকর্তা এই তথ্য নিশ্চিত করেন। ওই কর্মকর্তা জানান, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে নয়টায় সিরাজুল করিম মারা যান। এ সময় তার পাশে আত্মীয়স্বজন, বন্ধু-বান্ধব কেউ ছিলেন না। তারা সাহেদের স্ত্রীর ফোন নম্বর জোগাড় করে সিরাজুল করিমের মারা যাওয়ার খবর দেন। পরে তার মনোনীত দুজন ব্যক্তি এসে মৃতদেহ নিয়ে যায়। দুজনের কেউই তাদের নিকটাত্মীয় নন। এর আগে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তেজগাঁও থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছিল। সংকটাপন্ন অবস্থায় সিরাজুল করিম একাই হাসপাতালে ছিলেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সাহেদ বা তার প্রতিষ্ঠানের কাউকে খুঁজে না পাওয়ায় বিপাকে পড়েন। সমস্যা এড়াতে তারা জিডি করেন। করোনা চিকিৎসার নামে প্রতারণার অভিযোগে ৬ জুলাই উত্তরার রিজেন্ট হাসপাতালে অভিযান চালায় র?্যাব। পরদিন সাহেদকে এক নম্বর আসামি করে উত্তরা পশ্চিম থানায় মামলা করের্ যাব। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত নয়জনকে গ্রেপ্তার করেছের্ যাব। এ ঘটনার পর মো. সাহেদ আত্মগোপনে গেছেন বলে পুলিশের বিশেষ বাহিনীর্ যাব জানিয়েছে। কর্মকর্তারা বলেছেন, তার বিদেশে যাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, মো. সাহেদ দেশের ভেতরেই পালিয়ে রয়েছেন। তার ব্যাংক হিসাব জব্দ করা এবং দুর্নীতির তদন্ত করাসহ বিভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু অভিযোগ ওঠার দুদিন পরও তাকে যে গ্রেপ্তার করা যায়নি, সে ব্যাপারে সরকারের সদিচ্ছা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মানবাধিকার কর্মীদের অনেকে। র?্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কর্নেল আশিক বিলস্নাহ বলেছেন, গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মো. সাহেদকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালানো হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘সাহেদ করিমকে গ্রেপ্তারের জন্য আমরা সর্বাত্মকভাবে অভিযান পরিচালনা করছি। তাকে ধরার জন্য সারাদেশেই র?্যাব সজাগ আছে। সে যেন কোনোভাবেই দেশ ত্যাগ করতে না পারে, সেজন্য র?্যাব সতর্ক অবস্থায় আছে।’ তিনি আরও জানান, প্রতারণার মামলার তদন্তের দায়িত্ব যেন র?্যাব পায়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে তারা সেই অনুরোধ জানাবেন। মো. সাহেদকে নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনেও এখন জোরালো আলোচনা চলছে। বিরোধী দল বিএনপি অভিযোগ তুলেছে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকে মো. সাহেদ মহামারির মধ্যে চিকিৎসার নামে অসহায় মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। সেজন্য তাকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না। এদিকে দুর্নীতি দমন কমিশন বা দুদকও মো. সাহেদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান চালানোর কথা বলেছে। দুদকের সচিব দিলওয়ার বখত বলেছেন, দুর্নীতির বিষয়ে তারা অনুসন্ধান করবেন। তিনি বলেন, ‘পত্রপত্রিকায় যেসব তথ্য এসেছে, সেগুলো দুদকের নজরে এসেছে। দুদক তা অনুসন্ধানের ব্যাপারে প্রক্রিয়া চালাচ্ছে। আশা করি, শিগগিরই অনুসন্ধান শুরু করা যাবে। কোভিড-১৯ এর চিকিৎসার জন্য নির্ধারিত হওয়ার পর সরকারের টাকা নিয়েও রিজেন্ট হাসপাতাল মানুষের কাছে টাকা নিয়েছে। এই অভিযোগ দুদক অনুসন্ধান করবে।’ চিকিৎসার নামে প্রতারণার অভিযোগে দেশে আলোচনার শীর্ষে থাকা মো. সাহেদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাকে যে খুঁজে পাচ্ছে না-এ নিয়েও নানা আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে। মানবাধিকার কর্মীদের অনেকে মো. সাহেদকে গ্রেপ্তারের প্রশ্নে সরকারের সদিচ্ছা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। মানবাধিকার কর্মী এলিনা খান বলেছেন, মো. সাহেদকে ধরা যাচ্ছে না- এটা তিনি বিশ্বাস করতে পারছেন না। তিনি বলেন, ‘হাসপাতালের কয়েকজনকে ধরেছে। কিন্তু মালিককে পাওয়া যাচ্ছে না-এটা বিশ্বাসযোগ্য মনে করছি না। কারণ করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যাওয়া বেশ কঠিন।’ এলিনা খান মনে করেন, করোনাভাইরাসের ভুয়া পরীক্ষার জন্য কেউ মারা গেছে কিনা বা সংক্রমণ কতটা ছড়িয়েছে- মো. সাহেদ এবং রিজেন্ট হাসপাতালের বিরুদ্ধে এ ব্যাপারেও তদন্ত করা উচিত।