বাসস : ইতালির প্রধানমন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে বাংলাদেশের গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। ইতালির প্রধানমন্ত্রী গুইসেপ্পে কন্তের বক্তব্য কয়েকটি পত্রিকায় ভুলভাবে প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, “ইতালির প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বাংলাদেশিরা ভাইরাস বোমা।” কিন্তু ইতালির প্রধানমন্ত্রী এ ধরনের বক্তব্য দেননি।
সম্প্রতি স্পেন সফরকালে স্পেনের টেলিভিশনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ইতালির প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন,বাংলাদেশ থেকে একটি বিমান ইতালির রোম বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পর করোনা টেস্টে ২০ শতাংশ যাত্রীর করোনা পজিটিভ আসে। ইতালিতে করোনা যেন আবার কঠিন ভয়াবহ অবস্থায় না পৌঁছায় সেজন্য বাংলাদেশের বিমান বন্ধ করা হয়েছে। বাংলাদেশ ছাড়াও পৃথিবীর ১২টি দেশের বিমান সেদেশে প্রবেশ বন্ধ করা হয়েছে।
ইতালির সাথে বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বিদ্যমান। ইতালির প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ফেব্রুয়ারি মাসে দ্বিপাক্ষিক সফরে ইতালি যান। সে ময় দু’দেশের প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত ফলপ্রসু ও সফল দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন। এক লক্ষ পঞ্চাশ হাজারের বেশি বাংলাদেশি ইতালিতে বসবাস করে এবং তারা ইতালি ও বাংলাদেশের অর্থনীতিতে অবদান রেখে চলেছেন। বৈশ্বিক সমস্যা করোনা পরিস্থিতিতে যখন কিছু দেশ প্রবাসীদের দেশে পাঠানোসহ প্রবাসীদের স্বার্থবিরোধী সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, তখন ইতালি সে দেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধার কর্মসূচির অংশ হিসেবে অনিয়মিত প্রবাসী শ্রমিকদের নিয়মিতকরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বাংলাদেশ পুরোপুরি করোনামুক্ত না হওয়ার পরও বাংলদেশিদের ইতালির রেসিডেন্স পারমিট দিয়ে সেদেশের সরকার অত্যন্ত উদারতার পরিচয় দিয়েছে। গত এক মাসে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস প্রায় এক হাজার ছয় শত যাত্রী নিয়ে ইতালিতে ৬টি বিশেষ চার্টার্ডফ্লাইট পরিচালনা করেছে। ইতালিগামী বাংলাদেশি যাত্রীদের অধিকাংশ ইতালির রেসিডেন্স পারমিটধারী এবং কিছু যাত্রী ইতালির পাসপোর্টধারী। বাংলাদেশিদের ইতালির রেসিডেন্স পারমিট প্রাপ্তি ও সেদেশে গমনের ক্ষেত্রে ঢাকাস্থ ইতালি দূতাবাসের ভূমিকা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। কিন্তু রোম বিমানবন্দরে গমনের পর সেখানে পরীক্ষায় ৭০/৭৫ জন বাংলাদেশির করোনা পজিটিভ আসে, যা অত্যন্ত দু:খজনক। এছাড়া ইতালির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের করোনা পরীক্ষায়ও সেদেশে ২০/২৫ জন বাংলাদেশির করোনা পজিটিভ আসে। ইতালির সরকার প্রায় এমন ১০০ বাংলাদেশির সহায়তায় প্রয়োজনীয় সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। তাদের অধিকাংশকে ইতালির সরকারের খরচে হোটেলে আইসোলেশনে রাখাসহ প্রয়োজনানুসারে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। কিন্ত করোনা আক্রান্ত বাংলাদেশিদের কয়েকজন ইটালি সরকারের সিদ্ধান্ত এবং কোয়ারেন্টিন ও আইসোলেশন নির্দেশনা অমান্য করেন। তারা ইতালির সরকারের বিধিনিষেধ অমান্য করায় সে দেশে বসবাসরত মানুষদের করোনা সংক্রমণের ঝুঁকিতে ফেলে দিচ্ছেন। গত মার্চ মাসে ইতালি থেকে দেশে ফিরে কিছু ইতালি প্রবাসী বাংলাদেশি একই ধরনের দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ করেন এবং বাংলাদেশে কোরেন্টিন নির্দেশনা অমান্য করেন, যা সাধারণ মানুষের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে।
ইতালির সংবাদপত্রে ইতালি প্রবাসী বাংলাদেশিদেও করোনা বিষয়ক অবাধ্য আচরণ স্থান পেয়েছে। ফলে ইতালির নাগরিকদের সে দেশে বসবাসরত বাংলাদেশিদের প্রতি অবিশ্বাস ও অসন্তোষ সৃষ্টি হতে পারে। সে দেশের একটি পত্রিকায় ‘বাংলাদেশি ভাইরাস বোমা’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।
কিন্তু ইতালির প্রধানমন্ত্রী স্পেনের টেলিভিশনে সাক্ষাৎকারে কোন সম্প্রদায়ের প্রতি ‘ভাইরাস বোমা’ শব্দটি ব্যবহার করেননি। দু’দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এবং প্রবাসী বাংলাদেশিদের ওপর প্রভাব পড়ে এমন কোন ধরনের সংবাদ পরিবেশন না করার জন্য বাংলদেশি গণমাধ্যমকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হয়েছে। এ ধরনের সংবাদ পরিবেশনে সংবাদের সঠিকতা যাচাই করার করা উচিত।
বিদেশ গমনকারী বাংলাদেশিসহ পৃথিবীর সকল দেশের প্রবাসী বাংলাদেশিরা যেন বসবাসরত দেশের আইন ও নিয়ম মেনে চলেন সে বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টির জন্যও বাংলাদেশি গণমাধ্যমকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হয়েছে।