নিখাদ বার্তাকক্ষ : মোটরবাইক শোডাউন না করা ও সাংগঠনিক নির্দেশনার বাইরে কোনও কর্মকাণ্ডে জড়িত না হওয়াসহ ‘স্মার্ট ক্যাম্পাস’ গড়তে নেতাকর্মীদের ১০ দফা নির্দেশনা দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ছাত্রলীগ। রবিবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) ঢাবি শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন ও সাধারণ সম্পাদক তানবীর হাসান সৈকত স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় চলতি মাসেই এক সপ্তাহের ব্যবধানে দুটি চাঁদাবাজির ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। ইতোমধ্যে এই দুই ঘটনায় পাঁচ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কারও করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সবশেষ গত বৃহস্পতিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) রাতে পুলিশ পরিচয়ে চাঁদা আদায়ের অভিযোগে ঢাবির দুই শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়। জানা যায়, তারা দুজনই ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের চাঁদাবাজিতে সম্পৃক্ততার বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা সৃষ্টি হয়। এমনকি এ নিয়ে ক্ষুব্ধ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের নিজেও। তিনি ছাত্রলীগের নামে অপকর্মকারী দুর্বৃত্তদের আইনের আওতায় আনার জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে অনুরোধ করেছেন। শনিবার এক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে তিনি বলেন, ‘গুটিকয়েক অপকর্মকারীদের আওয়ামী লীগের বদনাম হতে পারে না। এদের কারণে সরকারে উন্নয়ন ম্লান হচ্ছে।’
এমন আলোচনা-সমালোচনার মধ্যেই নেতাকর্মীদের জন্য ১০ দফা নির্দেশনা জারি করলো ঢাবি ছাত্রলীগ। অবশ্য ‘স্মার্ট ক্যাম্পাস’ গড়ার উদ্দেশ্যে এর আগেও ৮ দফা নির্দেশনা জারি করেছিল ছাত্রলীগের এই শাখা। এবারের ১০ দফা নির্দেশনাতেও আগের নির্দেশনাগুলোর কয়েকটি পুনরাবৃত্তি করা হয়েছে।
রবিবার বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং তার সুযোগ্য কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনার স্মৃতিধন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ ছাত্র সমাজের কাছে অনুকরণীয়। দেশরত্নের পরিকল্পিত স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নের মাধ্যমে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা’ বিনির্মাণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ পথ দেখাবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি স্মার্ট ক্যাম্পাস’ হিসেবে পরিণত করতে ‘ছাত্রলীগের প্রতিটি কর্মীর জন্য অবশ্য পালনীয়’ সাংগঠনিক নির্দেশনায় বলা হয়েছে—
১. সাংগঠনিক কর্মসূচি ও নির্দেশনার বাইরে ব্যক্তিগত ও দলবদ্ধভাবে কোনও কর্মকাণ্ডে জড়িত হওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
২. বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও আবাসিক হলগুলোতে শতভাগ শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণে উদ্যোগী হতে হবে। পরিবেশ নষ্ট হতে পারে এমন কোনও কর্মকাণ্ডে জড়িত হওয়া যাবে না।
৩. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর দেশের শিক্ষা উন্নয়ন ও গবেষণা, সামাজিক-সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা ও শিল্পচর্চার অন্যতম কেন্দ্র হিসেবে সুপরিচিত। এরকম প্রতিটি উদ্যোগ-আয়োজন সফলভাবে সম্পন্ন করতে ছাত্রলীগের কর্মীদের স্বতঃস্ফূর্ত স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে ভূমিকা রাখতে হবে।
৪. বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাকৃতিক পরিবেশ নির্মল-মনোরম রাখতে সকল প্রকার ব্যক্তিগত ব্যানার, ফেস্টুন ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে।
৫. মোটরবাইক শোডাউন, উচ্চ শব্দে হর্ন বাজানো, সাউন্ড সিস্টেমের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার করা যাবে না।
৬. আবাসিক হলগুলোতে শিক্ষার পরিবেশ উন্নতকরণে, সুশৃঙ্খল আবাসন ও স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্য নিশ্চিতকরণে ভূমিকা রাখতে হবে।
৭. বিশ্ববিদ্যালয় পরিমণ্ডলে ক্রিয়াশীল অপরাপর প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠন, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন, বাস কমিটি প্রভৃতির সাথে সহযোগিতাপূর্ণ সম্পর্ক ও সদ্ভাব বজায় রাখতে হবে।
৮. গণমাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিক বন্ধুদের দায়িত্ব পালনে সর্বাবস্থায় সহযোগিতা করতে হবে।
৯. ধর্মীয় উগ্রবাদ, সাম্প্রদায়িকতা, মৌলবাদ-জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, গুজব ও বিভ্রান্তি ছড়ানো, অপরাধমূলক প্রবণতা, মাদক সংশ্লিষ্টতার সাথে জড়িত শিক্ষার্থীদের বিষয়ে প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে সহযোগিতা করতে হবে।
১০. সাংগঠনিক শৃঙ্খলা পরিপন্থী, নিরাপত্তা বিঘ্নকারী, বেআইনি, ইভটিজিং, র্যাগিং ইত্যাদি কর্মকাণ্ডের সাথে কোনোভাবেই জড়িত হওয়া যাবে না।