জাতীয় নেতা মনসুর আলী হত্যার বিচার কার্যকর চান সিরাজগঞ্জের মানুষ।

জাতীয় প্রচ্ছদ রাজনীতি

জাতীয় নেতা মনসুর আলী হত্যার বিচার কার্যকর চান সিরাজগঞ্জের মানুষ
সিরাজগঞ্জ সংবাদদাতা

নিখাদ বার্তাকক্ষ।।

শহীদ ক্যাপ্টেন এম. মনসুর আলী। ছবি: সংগৃহীত

সিরাজগঞ্জের যমুনাপাড়ের মানুষের কাছে জাতীয় চার নেতার মধ্যে অন্যতম শহীদ ক্যাপ্টেন এম. মনসুর আলী আজও প্রিয়। প্রতি বছর ৩ নভেম্বর এলেই মানুষ শ্রদ্ধাভরে স্বরণ করেন তাদের প্রিয় এই নেতাকে। কারাগারের ভেতর ঘাতকের বুলেট কিংবদন্তী এ নেতার জীবন কেড়ে নিলেও মানুষের হৃদয়ে তিনি আজও চির অম্লান। তবে এ কলঙ্কময় হত্যাকাণ্ডের বিচারের শেষ দেখতে চান সিরাজগঞ্জসহ সারাদেশের মানুষ।

১৯১৯ সালের ১৬ই জানুয়ারী সিরাজগঞ্জ শহর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে কুড়িপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম নেতা ক্যাপ্টেন এম. মনসুর আলী। তার পিতা হরফ আলী ও মাতা বেগম রওশন আরা।

মনসুর আলীর শিক্ষা জীবন শুরু হয় গান্ধাইল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে। পরে তিনি সিরাজগঞ্জের বিএল স্কুল থেকে এস.এস.সি, পাবনা এ্যাডওয়ার্ড কলেজ থেকে এইচ.এস.সি, কলকাতা ইসলামীয়া কলেজে বি.এ, আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম.এ এবং এল.এল.বি পাশ করেন। তার এই শিক্ষা জীবনে পাঁচ বার বৃত্তি পেয়েছিলেন।

১৯৪৬ সালে মনসুর আলী পাবনায় আইন পেশার সঙ্গে যুক্ত হন। এরপর তিনি ১৯৫৮ সালে তৎকালীন সুপ্রিম কোর্টে কর্মজীবন শুরু করেন। পাবনার কর্মজীবনে তিনি একাধিকবার আইনজীবি সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৫০ সালে তিনি আওয়ামী লীগে যোগদান দেন এবং ১৯৫২ এর ভাষা আন্দোলনে পাবনা জেলা থেকে নেতৃত্ব দেন। এ কারণে তিনি ওই সময় নানা ধরনের নির্যাতনের শিকার হন।

রাজনৈতিক জীবনে ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের মনোনয়নে মনসুর আলী প্রথম পূর্ববঙ্গ আইনসভার সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭০ সালের ১৭ এপ্রিল তিনি পাকিস্থান প্রদেশিক পরিষদেও সদস্য ও ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল তিনি স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের (মুজিবনগর সরকার) অর্থমন্ত্রী নিযুক্ত হন।

দেশ স্বাধীন হবার পর বঙ্গবন্ধুর প্রিয়ভাজন হওয়ায় তাকে অর্থ, শিল্পসহ চারটি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব দেয়া হয়। পরে পুনর্গঠিত মন্ত্রীসভায় তিনি স্বরাষ্ট্র ও যোগাযোগ মন্ত্রীর দায়িত্ব নেন।

মনসুর আলী তার রাজনৈতিক জীবনে সব সময়ই সাধারণ মানুষের পাশে থেকে কাজ করে গেছেন।

সিরাজগঞ্জের কাজিপুরের মানুষও তার কর্মজীবন স্বরণে রেখেছেন।

তার প্রতেবেশি ও স্বজনেরা জানান, মুনসুর আলী যখন বাড়িতে আসতেন তখন আশপাশের জেলা থেকে সবাই দেখা করতে আসত। তিনি তাদের সমস্যার কথা শুনে সমাধান করে দিতেন।

কাজিপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা রেফাজ উদ্দিন মাস্টার প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘তার (মনসুর আলী) রাজনৈতিক কর্মজীবনের মধ্যে দিয়ে উত্তরবঙ্গের মানুষের কাছে শেষ আশ্রয় স্থান হয়ে উঠেছিলেন। এ অঞ্চলের মানুষের চাকরি থেকে শুরু করে সব ধরনের বিপদে তিনি তাদের পাশে থাকতেন।’

কাজিপুর উপজেলা চেয়ারম্যান খলিরুর রহমান বলেন, ‘আমরা তার এই জন্মস্থানে জন্মগ্রহণ করে ধন্য। আমরা তার (মনসুর আলী) ও তার পুত্র এবং তার নাতির হাত ধরেই এখানে জনগণের পাশে থেকে কাজ করে চলছি।’

উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান দীন মোহাম্মদ বাবলু প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘চার নেতার হত্যার বিচার হলেও আজও সেটি কার্যকর হয়নি। আমরা এই হত্যার বিচার কাজ দেখতে চাই।’

সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি, সাবেক মন্ত্রী ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ আব্দুল লতিফ বিশ্বাস প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর পরে এই চার নেতাকে পরিকল্পিতভাবে জেলের ভিতর হত্যা করে খুনিরা। মানব সম্পদের বিপর্যের এই দিন। তাই এম মনসুর আলীকে কখনোই ভুলতে পারবে না জাতি।’

শহীদ ক্যাপ্টেন মনসুর আলীর নাতি ও কাজিপুর আসনের সংসদ সদস্য প্রকৌশলী তানভির শাকিল জয় প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘দাদাকে হারানোর ক্ষত তার পরিবারসহ পুরো দেশের মানুষ আজও বয়ে বেড়াচ্ছে। দীর্ঘ দিন ধরে অপেক্ষায় আছেন এই হত্যাকান্ডের শেষ দেখার প্রত্যাশায়। আমার দাদার পর এখানে আমার পিতা মরহুম আলহাজ মোহাম্মদ নাসিম নেতৃত্ব দেন। দাদার স্বরণে কাজিপুরে জাতীয় নেতা ক্যাপ্টেন মুনসুর আলী মুক্তিযুদ্ধ সৃতি কমপ্লেক্স উদ্বোধন করা হয়েছে।’

১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে ঘাতকের বুলেটের আঘাতে শহীদ হন মুক্তিসংগ্রামের অন্যতম নেতা ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী। গণমানুষের এ নেতার স্বরণে সিরাজগঞ্জ, কাজিপুর ও পাবনায় অডিটোরিয়াম, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সরকারী এম মনসুর আলী মেডিক্যাল কলেজ, রেল স্টেশন, সড়কসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামকরণ করা হয়েছে।

মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার কাজ শেষ হওয়ার পাশাপাশি জাতীয় চার নেতার হত্যাকাণ্ডের বিচারও দ্রুত সরকার শেষ করবে এমনটাই প্রত্যাশা জেলাবাসীর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *