নিখাদ বার্তাকক্ষ : গতকাল (৩ সেপ্টেম্বর) নয়া দিল্লিতে অনুস্ঠানরত, স্যার গঙ্গারাম হাসপাতাল আয়োজিত ‘ক্লিনিকস ইন হেপাটো-বিলিয়ারী ডিজিজেস ২০২২’ সম্মেলনে আমন্ত্রিত বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক স্বপ্নীল। তিনি হেপাটাইটিস বি’র চিকিৎসায় ন্যাসভ্যাকের ভুমিকা নিয়ে ভার্চুয়ালী লেকচার দেন। এই নিয়ে পরপর দুদিন জাপান ও ভারতে দুটি গুরুত্বপূর্ণ লিভার সম্মেলনে আমন্ত্রিত হয়ে ন্যাসভ্যাক নিয়ে বললেন তিনি ।
সম্প্রতি তারা ন্যাসভ্যাকের নতুন কিছু আপডেট দুটি শীর্ষ আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশ করার পর থেকেই ন্যাসভ্যাক নিয়ে সারা বিশ্বে লিভার বিশেষজ্ঞদের আগ্রহ ক্রমেই বাড়ছে। তাদের সর্বশেষ গবেষণায় দেখা যাচ্ছে ন্যাসভ্যাক দিয়ে চিকিৎসা শেষ করার তিন বছর পরও অন্য কোন চিকিৎসা ছাড়াই লিভার সম্পুর্ণ ভালো থাকে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে উদ্ভাবিত প্রথম ওষুধ ন্যাসভ্যাক যা বাংলাদেশে এরই মধ্যে অনুমোদন পেয়েছে। আশা করা যায় শিগগিরই দেশের হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের আক্রান্ত রোগীরা ন্যাসভ্যাক ব্যবহার করে সুফল পাবেন। কিউবাসহ বিশ্বের একাধিক দেশে ন্যাসভ্যাক ব্যবহার করা হচ্ছে। পাশাপাশি জাপানের একাধিক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে জাপানী হেপাটাইটিস বি আক্রান্ত রোগীদের ওপর ন্যাসভ্যাকের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চলছে এবং এর সুফলও পাওয়া যেতে শুরু করেছে।
বাংলাদেশে ডা. স্বপ্নীলের নেতৃত্বে ন্যাসভ্যাকের ফেইজ-১, ২ এবং ৩ ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালগুলো অনুষ্ঠিত হয়েছিল। যা পরবর্তী সময় হেপাটোলজি ইন্টারন্যাশনাল ও প্লস ওয়ানের মত খ্যাতিসম্পন্ন আর্ন্তজাতিক বৈজ্ঞানিক জার্নালে প্রকাশিত হয়। সম্প্রতি প্যাথোজেন্স এবং ভ্যাকসিন্স নামক দুটি শীর্ষ বৈজ্ঞানিক জার্নালে ন্যাসভ্যাকের ২ এবং ৩ বছরের ফলোআপ ডাটাও প্রকাশিত হয়েছে।
এ যাবত প্রাপ্ত তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষন করলে দেখা যায়, লিভার সিরোসিস প্রতিরোধে ন্যাসভ্যাক অন্যতম কার্যকর ওষুধ। এটি একটি ইমিউন থেরাপি যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দিয়ে হেপাটাইটিস বি ভাইরাস ও লিভার রোগকে নিয়ন্ত্রনে রাখে। ন্যাসভ্যাকই পৃথিবীর প্রথম ইমিউনথেরাপি যা হেপাটাইটিস বি তথা যে কোনো ক্রনিক ইনফেকশনের বিরুদ্ধে কার্যকর ও নিরাপদ হিসেবে প্রথমবারের মতো একটি ফেইজ ৩ ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে প্রমাণিত হয়েছে। শুধু তাই নয় ন্যাসভ্যাকই ক্রনিক ইনফেকশনের বিরুদ্ধে কার্যকর প্রথম ইমিউনথেরাপি, যা দুই এবং তিন বছরের ফলোআপেও নিরাপদ ও কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে।
ন্যাসভ্যাক অনুমোদনের মাধ্যমে ভারত ও চীনের মতো দেশকে ছাড়িয়ে বাংলাদেশ এ অঞ্চলের প্রথম দেশ হিসেবে নিজ দেশে নিজস্ব উদ্ভাবিত ওষুধ অনুমোদনের অনন্য কৃতিত্ব অর্জন করেছে।
দেশে সম্প্রতি হেপাটাইটিস বি ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী, যারা প্রচলিত ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা করছেন, তাদের জন্য ন্যাসভ্যাকের নতুন একটি ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরু হয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ইন্টারভেনশনাল হেপাটোলজি ডিভিশনে এই ট্রায়ালটি অনুস্ঠিত হচ্ছে। আনুষ্ঠানিকভাবে এর উদ্বোধন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ। ট্রায়ালটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন গবেষক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারভেনশনাল হেপাটোলজি ডিভিশনের ডিভিশন প্রধান অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল।