সাতক্ষীরা প্রতিনিধি: সাতক্ষীরার শ্যামনগরের আদিবাসী মুন্ডা পল্লীতে তাণ্ডব চালিয়েছে সন্ত্রাসীরা। শুক্রবার (১৯ আগস্ট) সকাল ১০টার দিকে উপজেলার ধুমঘাট অন্তাখালি মুন্ডা পল্লীতে ঘটনাটি ঘটে।
এ সময় সন্ত্রাসীদের হামলায় আদিবাসী মুন্ডা সম্প্রদায়ের ফনিন্দ্র মুন্ডার স্ত্রী বিলাসী মুন্ডা (৩৬) সনাতন মুন্ডার স্ত্রী রিনা মুন্ডা (৩৫), লক্ষিন্দর মুন্ডার স্ত্রী সুলতা মুন্ডা (৩৫) ও মৃত্যু মল্লুকচান মন্ডার ছেলে নরেন্দ্র মুন্ডা (৭০) আহত হয়।
আহত রিনা মুন্ডার স্বামী সনাতন মুন্ডা অভিযোগ করে বলেন, স্থানীয় মৃত্যু গফুর সরদারের ছেলে রাশিদুল সরদার ও এবাদুল সরদারের নেতৃত্বে বংশীপুর থেকে আগত প্রায় দুই শতাধিক ভাড়াটিয়া লাঠিয়াল এই হামলা চালায়। হামলার সাথে জড়িতরা সরকার দলীয় ছাত্র ও যুব সংগঠনের নেতাকর্মী বলে জানান তিনি।
আহতদের উদ্ধার করে বেলা সাড়ে ১২ টার দিকে শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন দীর্ঘদিন ধরে আমরা মন্ডা সম্প্রদায়ের ভোগ দখলে থাকা জমি দখলের চেষ্টায় ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীদের নিয়ে এই হামলা চালানো হয়েছে।
সন্ত্রাসী হামলার শিকার ফনিন্দ্র মুন্ডা অভিযোগ করে বলেন, আকস্মিকভাবে শুক্রবার সকালের দিকে দুই থেকে আড়াইশত সন্ত্রাসী তাদের মুন্ডা পাড়া ঘিরে ফেলে। এ সময় হামলার সাথে জড়িত সন্ত্রাসীরা প্রতিটি পরিবারকে বসত ঘরের মধ্যে অবরুদ্ধ করে রেখে তাদের ভোগ দখলে থাকা জমিতে পাওয়ারটিলার দিয়ে চাষ শুরু করে। এ সময় অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে কোন রকমে নিজেদেরকে ছাড়িয়ে নিয়ে বিরোধপূর্ণ এই জমিতে যেয়ে জমি চাষে সন্ত্রাসীদের বাধা দিলে তাদের বেধড়ক মারপিট করা হয়। ওই ঘটনায় রিনা মুন্ডা, সুলতা মুন্ডা ও বিলাসী মুন্ডা সহ লক্ষিন্দরয়মুন্ডা মারাত্মকভাবে আহত হয়। এক পর্যায়ে ৯৯৯ এ ফোন দিয়ে পুলিশকে খবর দেওয়া হলেও দীর্ঘ সময় পর পুলিশ সেখানে পৌঁছালে হামলার সাথে জড়িতরা চাষাবাদ শেষে ঘটনাস্থল ছেড়ে চলে যায়। এ সময় তাদের রোপনকৃত ধানক্ষেত সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে বলে তিনি অভিযোগ করেন।
সুন্দরবন আদিবাসী মহিলা সংস্থা সামসের নির্বাহী পরিচালক কৃষ্ণপদ মুন্ডা বলেন, সন্ত্রাসীদের নারকীয় তাণ্ডবের শিকার তিন নারীসহ এক পুরুষকে শ্যামনগর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন মন্ডা সম্প্রদায়ের জমি হস্তান্তরে সরকারি নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। অথচ স্থানীয় কিছু কুচক্রীরা জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে উক্ত জমির মালিকানা দাবি করায় বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন। এমতাবস্থায় শুক্রবার সকালে উক্ত জমির দখল করতে যেয়ে মুন্ডা সম্প্রদায়ের তিন নারীসহ কয়েকজনকে পিটিয়ে আহত করে সন্ত্রাসীরা।
এর আগে হামলার সাথে জড়িত দুই শতাধিক সন্ত্রাসী মুন্ডা পল্লীতে বসবাসরত পরিবারগুলোকে অবরুদ্ধ করে রেখে বিরোধপূর্ণ আট বিঘা জমি পাওয়ারটিলার দিয়ে চাষ করে। এ সময় সন্ত্রাসীরা মুন্ডা সম্প্রদায়ের চাষের জমিতে বেড়ে উঠা ধান নষ্ট করে দেয় এবং তাদের ঘরবাড়ি ভাংচুর করে।
এ ব্যাপারে রাশিদুল ইসলাম জানান, তাদের জমি মুণ্ডা সম্প্রদায়ের লোকজন অবৈধভাবে দখলে রেখেছিল। শুক্রবার ঐ জমি চাষ করতে গেলে তাদের জমিতে নামতে বাধা দেয়া হয়। কাউকে মারপিটের ঘটনা তিনি অস্বীকার করেন।
শ্যামনগর থানার ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা (ওসি) কাজী ওয়াহিদ মুর্শেদ জানান এ ঘটনার খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক সেখানে পুলিশ পাঠানো হয়। ঘটনা স্থলে পুলিশ পৌঁছানোর আগেই হামলাকারীরা সটকে পড়ে। এবিষয়ে এখনো কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
##আসাদুজ্জ্জামান সরদার