নিখাদ বার্তাকক্ষ : প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী বলেছেন, পনের আগস্ট ১৯৭৫ সালে সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পিছনে যেসব খুনিরা ছিলো, তারা বিদেশেও শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানাকে হত্যার ষড়যন্ত্র করেছিল। কিন্তু তখন তারা যে দেশে ছিলেন, সে দেশের সরকার তা প্রতিহত করে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৭তম শাহাদাত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবসে লন্ডনে বাংলাদেশ হাই কমিশন আয়োজিত স্মারক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি একথা বলেন।
আন্তজার্তিক খ্যাতিসম্পন্ন ঐতিহাসিক ও গবেষক ড. গওহর রিজভী বলেন, জাতির পিতাকে হত্যার ষড়যন্ত্র বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার আগে মুক্তিযুদ্ধের সময় থেকেই শুরু হয়েছিল। কোনো কোনোটি ছিল ব্যক্তি বিশেষের ষড়যন্ত্র, কোনোটির পিছনে ছিল সম্মিলিত পরিকল্পনা ও উদ্যোগ। বঙ্গবন্ধুকে বন্দি করে পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল তাঁকে জীবিত অবস্থায় ফিরিয়ে দেয়ার জন্য নয়।
তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু একটি প্রগতিশীল, ধর্মনিরপেক্ষ ও বাঙালি জাতীয়তাবাদ ভিত্তিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার গোড়াপত্তন করেছিলেন। তাঁকে নৃশংসভাবে হত্যার মাধ্যমে বাংলাদেশকে স্বাধীনতার পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে নেয়াই ছিলো খুনিদের চূড়ান্ত লক্ষ্য। এসবের পর্যাপ্ত প্রমাণ পাওয়া গেছে। যথাযথ সময়ে সেসব প্রকাশ করা হবে।’
আজ ঢাকায় প্রাপ্ত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনিম সোমবার রয়্যাল বা’রা অব কেনজিংটনের একটি হোটেলে আয়োজিত এই হাই-প্রোফাইল অনুষ্ঠানে স্মারক বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন এশিয়া ও প্যাসিফিক বিষয়ক শ্যাডো মন্ত্রী ক্যাথরিন ওয়স্ট এমপি এবং অল পার্টি পার্লামেন্টারি গ্রুপ অন বাংলাদেশের ভাইস চেয়ার লর্ড শেখ । অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্বপক্ষে গঠিত স্টুডেন্ট একশন কমিটির অন্যতম সদস্য সৈয়দ মোজাম্মেল আলী।
হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনিম তার স্মারক বক্তব্যে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার মাধ্যমে তাঁর অসাম্প্রদায়িক, প্রগতিশীল ও ধর্মনিরপেক্ষ মূল্যবোধকে নিশ্চিহ্ন করার ষড়যন্ত্র ছিলো পূর্বপরিকল্পিত। এই নৃশংস হত্যাকান্ড মানব ইতিহাসের নজিরবিহীন বর্বরতার ঘটনা এবং আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের চরম লঙ্ঘন যা আব্রাহাম লিঙ্কন, মহাত্মা গান্ধী, মার্টিন লুথার কিং এবং জন এফ কেনেডি’র মতো অন্যান্য সমসাময়িক নেতাদের রাজনৈতিক হত্যাকান্ড থেকে সম্পূর্ণ আলাদা।’
অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুর ওপর ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের বার্তা পাঠ করে শোনানো হয় এবং জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে দেয়া বিরোধীদলীয় ও লেবার পার্টির নেতা স্যার কেয়ার স্টারমারের ভিডিও বার্তা এবং বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নির্মীত বঙ্গবন্ধুর ওপর তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
হাইকমিশনার অতিথিদের নিয়ে বাংলাদেশ হাইকমিশনের স্মারক প্রকাশনা ‘বঙ্গবন্ধু-দ্য ফ্রেন্ড অব বেঙ্গল’-এর মোড়ক উন্মোচন করেন।
অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক কর্মী ঊর্মি মাজহার এবং বাংলাদেশ হাইকমিশনের কাউন্সিলর (পলিটিক্স) দেওয়ান মাহমুদুল হক বঙ্গবন্ধু ও ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের শহীদদের প্রতি নিবেদিত বিশিষ্ট কবি নির্মলেন্দু গুণের প্রখ্যাত কবিতা “সেই রাত্রির কল্পকাহিনী” আবৃত্তি করেন।