আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিরোধের জেরে বান্দরবানে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) এক গ্রুপের অতর্কিত হামলায় অপর গ্রুপের (জেএসএস সংস্কার) ছয় নেতাকর্মী নিহত হয়েছেন। এ সময় তিনজন গুলিবিদ্ধ হন। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাদের দু’জনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং একজনকে চকরিয়া মালুমঘাট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। মঙ্গলবার ভোর সাড়ে ৬টার দিকে বান্দরবান শহর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে সদর উপজেলার রাজবিলা ইউনিয়নের বাঘমারায় জেএসএস সংস্কার (এমএন লারমা) গ্রুপের নেতাকর্মীদের ওপর জেএসএস (সন্তু লারমা) গ্রুপের ক্যাডাররা অতর্কিত গুলি চালালে এ হতাহতের ঘটনা ঘটে। এ সময় দু’পক্ষের মধ্যে বন্দুকযুদ্ধের ঘটনাও ঘটে।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, রাজবিলা ইউনিয়নের বাঘমারার পাহাড়ি এলাকায় জেএসএসের (এমএন লারমা) সশস্ত্র গ্রুপের ১০-১২ জন সদস্য আশ্রয় নেন। এ খবর পেয়ে জেএসএসের (সন্তু লারমা) সশস্ত্র শাখার সদস্যরা ভোরে তাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। এ সময় দু’গ্রুপের মধ্যে বেশ কিছুক্ষণ গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। এতে জেএসএস সংস্কার (এমএন লারমা) গ্রুপের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি বিমল কান্তি চাকমা (৬৮) নিহত হন। নিহত অন্যরা হলেন- কেন্দ্রীয় কমিটির উপদেষ্টা চিং থেয়াইয়াং মারমা ডেভিড (৫৬), বান্দরবান জেলা সভাপতি রতন তঞ্চঙ্গা (৫০), যুব সমিতির সদস্য রবীন্দ্র চাকমা মিলন (৫০), রিপন ত্রিপুরা জয় (৩৫), জ্ঞান ত্রিপুরা দিপেন (৩২)। নিহতদের মধ্যে শুধু রতন চাকমার বাড়ি বান্দরবানের রোয়াংছড়ি উপজেলায়। অন্যরা সবাই খাগড়াছড়ির পানছড়ি, মানিকছড়ি, মহালছড়ি, গুইমারা উপজেলার বাসিন্দা। আহতরা হলেন- জেএসএস সংস্কার গ্রুপের সদস্য খাগড়াছড়ির বাসিন্দা নিরু চাকমা (৪২), বিদ্যুৎ ত্রিপুরা (৩৩)। এছাড়া স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের স্কুল শিক্ষিকার কলেজ পড়ুয়া মেয়েও রয়েছে। তবে তার নাম জানা যায়নি।
বান্দরবানের পুলিশ সুপার জেরিন আক্তার জানান, ছয়জনের লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠানো হয়েছে। গুলিবিদ্ধ দু’জনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং এক ছাত্রীকে চকরিয়া মালুমঘাট খ্রিস্টান মেমোরিয়াল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে গুলির খোসাসহ বিভিন্ন আলামত জব্দ করা হয়েছে। মামলার প্রস্তুতি চলছে। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন সেনাবাহিনী, পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। ঘটনাস্থলসহ আশপাশের এলাকাগুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
জেএসএস সংস্কার (এমএন লারমা) গ্রুপের কেন্দ্রীয় কমিটির তথ্য ও প্রচার সম্পাদক সুধাকর ত্রিপুরা বলেন, সাংগঠনিক সফরে গিয়ে সংগঠনের শীর্ষ নেতারা বান্দরবান জেলা সভাপতি রতন তঞ্চঙ্গার বাড়িতে আশ্রয় নেন। কিন্তু সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা তাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। এতে কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি বিমল চাকমাসহ ছয় নেতাকর্মী নিহত হয়েছেন। সন্তু লারমার অগণতান্ত্রিক কর্মকাণ্ড বন্ধে এবং নৃশংস হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের তিনি শাস্তি দাবি করেন।
রাজবিলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ক্যঅংপ্রু মারমা বলেন, জেলার বহিরাগত সন্ত্রাসীদের একটি গ্রুপ গভীররাতে বাঘমারা এলাকায় আশ্রয় নিয়েছিল। এ খবর পেয়ে ঘুম থেকে তাদের উঠার আগেই সশস্ত্র আরেকটি গ্রুপ হামলা চালায়। ব্রাশফায়ারে বহিরাগত গ্রুপের ছয়জন ঘটনাস্থলেই নিহত হয়। এছাড়া এলোপাতাড়ি গুলিতে দু’জন সন্ত্রাসী এবং এক ছাত্রী গুলিবিদ্ধ হয়েছে। আশ্রয় নেয়া গ্রুপটি নিরস্ত্র ছিল বলে জেনেছি। প্রত্যক্ষদর্শী ওয়াইমং মারমা বলেন, হঠাৎ একদল সশস্ত্র লোক সকালে রতন চাকমার বাড়িতে ঢুকে এলোপাতাড়ি গুলি করে। এ সময় সকালের নাস্তার জন্য রতন রান্না করছিলেন। ওয়াইমংয়ের ধারণা, হামলাকারীরা ছয় থেকে সাতজন ছিল। দু’জনকে অস্ত্র হাতে গুলি করতে দেখেছেন। হামলার পর তারা পাশের ধানক্ষেত দিয়ে চলে যায়। রতন চাকমার স্ত্রী মিনিপরু মারমা বলেন, সকালে বাজার করে রান্নার আয়োজন করেছিলেন তার স্বামী রতন। গুলির শব্দ শুনে বাইরে এসে দেখি রতনসহ কয়েকজন গুলিবিদ্ধ অবস্থায় উঠানে পড়ে আছে। বাড়ির পেছনে ধানক্ষেত দিয়ে দু’জনকে পালিয়ে যেতে দেখেছেন তিনি।
জেএসএসের সংস্কারপন্থী অংশের বান্দরবান জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক উবামং মারমা বলেন, হামলার সময় আমি সেখানে ছিলাম। গুলির শব্দ শুনে মাটিতে শুয়ে পড়েছিলাম বলে প্রাণে বেঁচে যাই। তিনি বলেন, এ হত্যাকাণ্ডের জন্য জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) মূল দলই দায়ী।