নিখাদ বার্তাকক্ষ : অ্যান্টিবডি থেরাপি ক্যান্সার এবং অন্যান্য রোগের চিকিৎসায় কার্যকর ভবিষ্যৎ সাফল্যের আভাস দেয়ায় প্রথম বাণিজ্যিকীকরণের ২০ বছরেরও বেশি সময় পরে এর উন্নয়ন ও উৎপাদনে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহী করে তুলেছে।
অ্যান্টিবডি হল প্রোটিন যা বাইরে থেকে শরীরে প্রবেশ করা অ্যান্টিজেন হিসেবে পরিচিত ক্ষতিকর উপাদান শনাক্ত করতে পারে এবং একই সঙ্গে শরীরের বাকি রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা বা ইমিউন সিস্টেমকে সতর্ক করে দেয়।
১৯৭৫ সালে বিজ্ঞানী জর্জেস কোহলার এবং সিজার মাইলেস্টাইন ল্যাবরেটরিতে অ্যান্টিবডি উৎপাদন পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন। এই আবিস্কারের জন্য তারা ১৯৮৪ সালে চিকিৎসা বিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। এর পর থেকে কয়েক ডজন সিন্থেটিক অ্যান্টিবডি তৈরি করা হয়েছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কেমোথেরাপির সাথে ব্যবহার করার জন্য নতুন অ্যান্টিবডি চিকিৎসা শুরু হয়েছে।
অতি সম্প্রতি ফার্মাসিউটিক্যাল গ্রুপ দাইচি সানকিও এবং অ্যাস্ট্রাজেনেকা উদ্ভাবিত একটি অ্যান্টিবডির ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের ফলাফল এই মাসে আমেরিকান সোসাইটি অফ ক্লিনিক্যাল অনকোলজির বার্ষিক অনুষ্ঠানে সমবেত শীর্ষস্থানীয় ক্যান্সার বিশেষজ্ঞদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।
ইতোমধ্যে স্তন ক্যান্সারের রোগীদের চিকিৎসায় অ্যান্টিবডি হিসাবে এনহার্টু ব্যবহারের অনুমোদন দেয়া হয়েছে, প্রচুর পরিমাণে এইচইআর-২ প্রোটিনের সমন্বয়ে এই অ্যান্টিবডি তৈরি করা হয়েছে।
কম পরিমাণে অ্যান্টিবডিও রোগীদের ক্ষেত্রে ভালো কাজ করে, এতে উপকৃত হয়েছেন এমন লোকের সংখ্যা বাড়ছে।
ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ উইলিয়াম জাকোট বলেন, অ্যান্টিবডি একটি ক্যান্সার কোষের পৃষ্ঠের উপর আটকে থাকে, যেখানে রিসেপ্টর কাজ করে না, অ্যান্টিবডি সেই রিসেপ্টরগুলো হজম করে পুনরায় উৎপাদন করে এবং কেমোথেরাপি সক্রিয় করে।
দক্ষিণ ফ্রান্সের মন্টপেলিয়ারের ক্যান্সার ইনস্টিটিউটের প্রফেসর জাকোট বলেন, ‘কেমোথেরাপি দিয়ে বেঁচে থাকার ক্ষেত্রে আমরা কয়েক দশক ধরে এমন অগ্রগতি দেখিনি।’
তিনি বলেন, যদিও অ্যান্টিবডি থেরাপি প্রযুক্তির একটি জটিল উৎপাদন প্রক্রিয়া রয়েছে, তা সত্ত্বেও এটি সেলুলার থেরাপি প্রযুক্তি ব্যবহার করে চিকিৎসার চেয়ে সহজ।
জাকোট বলেন, অ্যান্টিবডিগুলো ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য বিভিন্ন উপায়ে ব্যবহার করা যেতে পারে। এ গুলো ক্যান্সার কোষ তৈরি বা ইমিউন সিস্টেম নিয়ন্ত্রণ করতে পারে এমন প্রোটিনগুলো ধ্বংস করে।
ফরাসি বায়োটেক ফার্ম ইনঅথারেস লিউকেমিয়ার চিকিৎসায় অ্যান্টিবডির ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের প্রথম পর্যায়ে রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান পিয়েরে লাইরায়ে একথা জানান।
তিনি বলেন, কোম্পানির অ্যান্টিবডি ক্যান্সার কোষ ধ্বংসে ‘গাইডেড মিসাইলের’ মতো কাজ করবে। এটির লক্ষ্য হবে কোষের একটি রিসেপ্টর যা আয়রনকে ক্যান্সার কোষে প্রবেশ করতে দেয়। অ্যান্টিবডি তখন একটি বিষ নিঃসরণ করবে যাতে এটি ধ্বংস হয়।
কিছু অ্যান্টিবডি চিকিৎসায় প্রতিরোধমূলকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে, যেমন অ্যাস্ট্রাজেনেকার ইভুসহেল্ড কোভিড-১৯ এর প্রতিরোধমূলক হিসেবে ব্যবহার করা হয়। ব্রিটিশ কোম্পানি জিএসকে’র জেভুডি ব্যবহার করা হয় কোভিডের চিকিৎসায়। প্রদাহজনিত রোগের চিকিৎসার জন্যও অ্যান্টিবডি তৈরি করা হচ্ছে, যা এই রোগের নিরাময় ঘটাবে।