‘উগ্র বামপন্থি’দের হারানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। স্থানীয় সময় শনিবার দেশটির স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে হোয়াইট হাউসে দেওয়া এক ভাষণে এ প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। মূলত ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার (কালোদের জীবনও মূল্যবান) বা বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনকারীদেরই ‘উগ্র বামপন্থি’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তিনি যখন এ ভাষণ দিচ্ছিলেন, তখন ওয়াশিংটনে হোয়াইট হাউসের আশপাশে বিক্ষোভ করেছেন বর্ণবাদবিরোধীরা। খবর বিবিসি, সিএনএন ও রয়টার্সের।
১৭৭৬ সালের ৪ জুলাই যুক্তরাজ্যের কাছ থেকে স্বাধীনতা অর্জন করে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির ২৪৪তম স্বাধীনতা দিবসের দিন শনিবার ট্রাম্পের ভাষণের আগে বি-৫২ বোমারু বিমান ও এফ-৩৫ যুদ্ধবিমানের মহড়া হয়। মহড়া শেষের ভাষণে ট্রাম্প ঐতিহাসিক বিভিন্ন স্মারক ও ভাস্কর্যের বিরুদ্ধে বিক্ষোভের নিন্দা করেছেন। একে তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে ধ্বংসের চেষ্টা হিসেবে অভিহিত করেছেন। ট্রাম্প বলেন, ‘নৈরাজ্যবাদী, উত্তেজনা সৃষ্টিকারী ও লুটতরাজকারীদের ধারণা নেই যে, তারা কী করছেন। এখন উগ্র বামপন্থি ও মার্কসবাদীদের পরাজিত করার সময় এসেছে।’
বক্তৃতায় সংবাদ মাধ্যমের কড়া সমালোচনা করেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তিনি সম্প্রতি মিনিয়াপোলিসে পুলিশের হেফাজতে কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েড নিহত হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ছড়িয়ে পড়া বিক্ষোভের সমালোচনা করেছেন। তার মতে, সংবাদ মাধ্যম এসব বিক্ষোভে মদদ দিচ্ছে। তবে কয়েকটি সংবাদ মাধ্যম ট্রাম্পের এই বক্তব্যকে বিভেদ সৃষ্টির বক্তব্য বলে উল্লেখ করেছে।
ট্রাম্প যেখানে দাঁড়িয়ে ভাষণ দিয়েছেন তার কয়েক গজ দূরে সড়ক আটকে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ করেছেন বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনকারীরা। হোয়াইট হাউসের সামনের ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার প্লাজা ও পাশের লিংকন মেমোরিয়ালের আশপাশের সড়কগুলোতে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ দেখায় তারা। এসব স্থানে ট্রাম্প সমর্থকরাও অবস্থান নিয়েছিল। তবে দু’পক্ষের মধ্যে সহিংসতার কোনো খবর পাওয়া যায়নি। ট্রাম্পের বক্তব্যের পর ওয়াশিংটন থেকে ৪০ মাইল উত্তরে বাল্টিমোরে ক্রিস্টোফার কলম্বাসের ভাস্কর্য উপড়ে ফেলেছে বর্ণবাদবিরোধীরা। পাঁচশ’ বছর আগে কলম্বাস তার দলবল নিয়ে আমেরিকা অঞ্চলে স্থানীয় রেড ইন্ডিয়ানদের ওপর হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে শ্বেতাঙ্গ ইউরোপীয়দের উপনিবেশ কায়েমের পথ প্রশস্ত করেন।
ট্রাম্পের ভাষণের পর রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসির ন্যাশনাল মলের আকাশে আতশবাজির প্রদর্শনী করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসন। ওয়াশিংটনের মেয়র মুরিয়েল বাউজারের সতর্কতা উপেক্ষা করেই এ আতশবাজি প্রদর্শনী করা হয়। এ ধরনের অনুষ্ঠানে ব্যাপক দর্শক সমাগম হলে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়াতে পারে বলে সতর্ক করেছিলেন বাউজার।
তবে ট্রাম্প তার ভাষণে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের ৯৯ শতাংশের রোগই একদমই ক্ষতিকর নয়। করোনা নিয়ন্ত্রণের কৌশলও ভালো কাজ করেছে বলে দাবি করেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। যদিও হোয়াইট হাউসের করোনা টাস্কফোর্সের সদস্য ও সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. অ্যান্থনি ফুসি গত সপ্তাহে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে সঠিক পথে নেই। কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে পরিস্থিতি নাজুক হতে পারে বলে সতর্ক করেছিলেন তিনি।
বিশেষজ্ঞদের সতর্ক বার্তা অনুযায়ী গত কয়েকদিন ধরেই যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ফের ব্যাপক হারে বাড়তে শুরু করেছে। তবে এ পরিস্থিতিতেও স্বাস্থ্যঝুঁকি উপেক্ষা করে স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে পার্টির আয়োজন করেন ট্রাম্প। এবারের আয়োজনে কিছুটা ভিন্নতা ছিল। টেবিলে ৮-১০টি চেয়ার ছিল না। সামাজিক দূরত্ব রাখতে প্রতি টেবিলে চারটি করে চেয়ার ছিল। তবে হোয়াইট হাউসের লনে যে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল, তাতে মানুষের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। সেখানে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার কোনো বালাই ছিল না।