বগুড়া-১ ও যশোর-৬ আসনের উপনির্বাচন
‘করোনা পরিস্থিতিতে উপনির্বাচনে অংশ নেয়ার পরিবেশ নেই ’
করোনাভাইরাস ও বন্যার কারণে বগুড়া-১ ও যশোর-৬ আসনের উপনির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না বিএনপি। রোববার রাতে দলের স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। এর আগে নির্বাচনে না থাকার বিষয়ে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের অনীহার কথা দলের হাইকমান্ডকে জানিয়েছিলেন যশোর ও বগুড়ার নেতারা।
জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে উপনির্বাচনে না যাওয়ার পক্ষে মতামত গ্রহণ করা হয়েছে। দেশে করোনাভাইরাসের বর্তমান পরিস্থিতিতে কোনোভাবেই নির্বাচনে অংশ নেয়ার পরিবেশ নেই।
স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকে নিজ নিজ বাসা থেকে যুক্ত ছিলেন, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু প্রমুখ। আর লন্ডন থেকে যুক্ত থেকে সভাপতিত্ব করেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
শনিবার নির্বাচন কমিশন আগামী ১৪ জুলাই বগুড়া-১ ও যশোর-৬ আসনের উপনির্বাচনের ভোটগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কারণে ১৮০ দিনের মধ্যে উপনির্বাচন দুটি করতে হচ্ছে বলে কমিশন সিদ্ধান্ত দিয়েছে। গত ১৮ জানুয়ারি সংসদ সদস্য আবদুল মান্নানের মৃত্যুতে বগুড়া-১ এবং ২১ জানুয়ারি ইসমাত আরা সাদেকের মৃত্যুতে যশোর-৬ আসন শূন্য হয়। বগুড়া-১ আসনে একেএম আহসানুল তৈয়ব জাকির ও যশোর-৬ আসনে আবুল হোসেন আজাদকে মনোনয়ন দেয় বিএনপি।
সংসদীয় আসন শূন্য হওয়ার পরবর্তী ৯০ দিন এবং দৈব-দুর্বিপাকের কারণে সম্ভব না হলে আরও ৯০ দিন- সব মিলিয়ে ১৮০ দিনের মধ্যে ভোট করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। ২৯ মার্চ এই দুটি উপনির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। করোনাভাইরাস সংকটের কারণে ভোটের সপ্তাহখানেক আগে স্থগিত করা হয় নির্বাচন। একই সঙ্গে আটকে আছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনও।
শনিবার উপনির্বাচনের তারিখ ঘোষণার পর থেকে বগুড়া ও যশোর বিএনপির নেতারা করোনা ও বন্যার ভয়াবহ পরিস্থিতির কথা দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও মহাসচিবকে জানান। চলমান পরিস্থিতিতে নির্বাচনে না যাওয়ার পক্ষে তারা মত দেন। তাদের যুক্তি এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু আশা করা মানে বোকার স্বর্গে বাস করা। এমনিতেই এই সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি হতাশাজনক। তার মধ্যে বগুড়ায় করোনা পরিস্থিতির পাশাপাশি বন্যা। আর যশোরে ভয়াবহ রকমের করোনাভাইরাস সংক্রমণ।
বগুড়া জেলা বিএনপির আহ্বায়ক জিএম সিরাজ সাংবাদিকদের বলেন, যে কারণে উপনির্বাচন নির্বাচন কমিশন স্থগিত করেছিল, সেই করোনা পরিস্থিতি কি এখন স্বাভাবিক হয়েছে? এখন তো বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে এখন করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি পিকে অবস্থান করছে। আর বগুড়া এখন হটস্পট। আবার যমুনায় পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বগুড়া-১ আসনে (সারিয়াকান্দি ও সোনাতলা উপজেলা) বন্যা দেখা দিয়েছে। আউশ ধান, পাট, আখসহ বিভিন্ন ফসলের ব্যাপক ক্ষতিও হয়েছে। বেশ কয়েকটি ভোটকেন্দ্রও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ অবস্থায় নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত সঠিক বলে জনগণ মনে করছে।
বগুড়া-১ উপনির্বাচনে ধানের শীষের প্রার্থী একেএম আহসানুল তৈয়ব জাকির বলেন, ইসি সংবিধানের দোহাই দিচ্ছে। কিন্তু সংবিধানের জন্য মানুষ, না মানুষের জন্য সংবিধান? আদালতে গিয়েও সময় বাড়ানো যেত। কারণ আমার আসনে একদিকে করোনার হটস্পট, অন্যদিকে বন্যা। ১৪ থেকে ১৫টি ভোটকেন্দ্র আছে যা ৪ থেকে ৫ ফুট পানির নিচে। কতগুলো কেন্দ্রের ভেতরে পানি ঢোকেনি, কিন্তু আশপাশের রাস্তাঘাট সে াতে ভেঙে গেছে। এছাড়া এখানে করোনার যে পরিস্থিতি, ১০ জন মানুষও যদি আক্রান্ত হয়, এর দায়দায়িত্ব কে নেবে? আসলে ভোটাররা যাতে কেন্দ্রে না যায় এবং আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে সুযোগ দিয়ে জয়ী করতে এই সময়ে ভোটগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, এই পরিস্থিতিতে আমরা নির্বাচন বর্জন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কেন্দ্রও এ বিষয়ে আপনাদের জানিয়েছে।
বিএনপির খুলনা বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক ও যশোর উপনির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য অনিন্দ্য ইসলাম অমিত বলেন, আমরা যশোরের করোনা পরিস্থিতির ভয়াবহ চিত্র দলের হাইকমান্ডকে জানিয়েছিলাম। দল নির্বাচনে না গিয়ে জনগণের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে।