নিখাদ বার্তাকক্ষ : দেশের আইনজীবীদের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয় পেয়েছেন বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ সমর্থিত সাদা প্যানেল।
মোট ১৪ পদের বিপরীতে এবারের নির্বাচনে সাধারণ ৭ টি আসনের (দেশজুড়ে) মধ্যে ৪টি, গ্রুপভিত্তিক ৭ টির মধ্যে ৬ টিসহ ১০ টি পদে জয়ী হয়েছেন সাদা প্যানেলের প্রার্থীরা।
অপরদিকে সাধারণ তিনটি, অঞ্চলভিত্তিক একটিসহ চারটি আসন পেয়েছেন বিএনপি ও সমমনা সমর্থিত জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য সমর্থিত নীল প্যানেলের প্রার্থীরা।
গতকাল ২৯ মে বিকাল ৪ টায় ভোট গণনা শুরু হয়ে রোত সোয়া তিনটার দিকে ফল ঘোষণা করেন বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ও এটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। ফল ঘোষণার সময় উভয়পক্ষের আইনজীবী ও প্রার্থীগণ উপস্থিত ছিলেন। উৎসবমুখর পরিবেশে ভোটের ফলাফল ঘোষণা করেন বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ও এটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন।
এর আগে ২৫ মে বার কাউন্সিল নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ভোট গ্রহণের শেষে সব কেন্দ্রের ফলাফল বার কাউন্সিলে পৌঁছায়। এর পর গতকাল রোববার বিকেল চার টায় বার কাউন্সিলের সভাকক্ষে ভোট গণনা শুরু হয়। এবারের নির্বাচনে সাধারণ আসনে ৩৫ জন ও অঞ্চলভিত্তিক ৭টি আসনের বিপরীতে ২৩ জন প্রার্থী হন। এর মধ্যে প্যানেল হিসেবে প্রার্থী দেয় বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ-সমর্থিত সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ (সাদা প্যানেল) ও বিএনপি-সমর্থিত জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য প্যানেল (নীল প্যানেল)।
সাধারণ সাত আসনের মধ্যে সাদা প্যানেল থেকে চারজন নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁরা হলেন সিনিয়র এডভোকেট মোহাম্মদ সাঈদ আহমেদ রাজা (১৭ হাজার ৪৩৩ ভোট), সৈয়দ রেজাউর রহমান (১৭ হাজার ৯৩ ভোট), মোহাম্মদ মোখলেসুর রহমান (১৬ হাজার ৮৪৪ ভোট) ও মো. রবিউল আলম বুদু (১৫ হাজার ২৭ ভোট)।
সাধারণ আসনে নীল প্যানেল থেকে ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন (১৬ হাজার ৮১১ ভোট), ব্যারিস্টার মো. রুহুল কুদ্দুস কাজল (১৫ হাজার ৯৬৫ ভোট) ও সিনিয়র এডভোকেট জয়নুল আবেদীন (১৪ হাজার ৭৯৬ ভোট) নির্বাচিত হয়েছেন।
সাতটি অঞ্চলভিত্তিক আসনের মধ্যে সাদা প্যানেল ছয়টিতে জয় পেয়েছে। গ্রুপ ‘এ’-তে (বৃহত্তর ঢাকা জেলার সব আইনজীবী সমিতি) নির্বাচিত হয়েছেন আবদুল বাতেন। গ্রুপ ‘বি-তে (বৃহত্তর ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল ও ফরিদপুর জেলার সব আইনজীবী সমিতি) মো. জালাল উদ্দিন খান। গ্রুপ ‘ডি’-তে (বৃহত্তর কুমিল্লা জেলা ও সিলেট জেলার সব আইনজীবী সমিতি) এ এফ মো. রুহুল আনাম চৌধুরী। গ্রুপ ‘ই’-তে (বৃহত্তর খুলনা, বরিশাল ও পটুয়াখালী অঞ্চলের সব আইনজীবী সমিতি) আনিছ উদ্দিন আহমেদ। গ্রুপ ‘এফ’-এ (বৃহত্তর রাজশাহী, যশোর ও কুষ্টিয়া জেলার আইনজীবী সমিতি) মো. একরামুল হক। গ্রুপ ‘জি’-তে (বৃহত্তর দিনাজপুর, রংপুর, বগুড়া ও পাবনা জেলার সব আইনজীবী সমিতি) মো. আবদুর রহমান বিজয়ী হয়েছেন।
অঞ্চলভিত্তিক আসনে নীল প্যানেল থেকে শুধু গ্রুপ ‘সি’-তে (বৃহত্তর চট্টগ্রাম ও নোয়াখালী জেলার সব আইনজীবী সমিতি) এ এস এম বদরুল আনোয়ার নির্বাচিত হয়েছেন।
বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ও এটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন স্বাক্ষরিত নির্বাচন সংক্রান্ত গেজেটে উল্লেখ করা হয়েছে, কোনো প্রার্থী নির্বাচনের বিরুদ্ধে আপত্তি করতে চাইলে ফলাফল সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশের দিন থেকে এক মাসের মধ্যে আবেদন করতে হবে। এ জন্য তিন সদস্যবিশিষ্ট নির্বাচন সংক্রান্ত আপত্তি দরখাস্ত শুনানির জন্য ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়েছে। সুপ্রিমকোর্টের সিনিয়র এডভোকেট মুনসুরুল হক চৌধুরীর নেতৃত্বে ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন এডভোকেট সৈয়দ হায়দার আলী ও এডভোকেট আব্দুস সবুর। বাংলাদেশ বার কাউন্সিল কার্যালয়ে নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল ১৪ জুলাই আপত্তিপত্র গ্রহণ করবে।
তিন বছর পরপর বার কাউন্সিলের নির্বাচন হয়ে থাকে। গত বছর নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হলেও করোনা পরিস্থিতির কারণে শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। এমন প্রেক্ষাপটে গত বছরের আগস্টে সংস্থাটির কার্যক্রম পরিচালনায় অ্যাডহক কাউন্সিল গঠন করা হয়।
করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসার পর গত মার্চে নির্বাচনের জন্য ২৫ মে তারিখ ঠিক করে গেজেট প্রকাশ করা হয়। বার কাউন্সিল নির্বাচনে ১৪টি পদ বা আসনে ভোট হয়। এর মধ্যে সাধারণ আসনে (দেশজুড়ে) সাতজন ও সাতটি অঞ্চলভিত্তিক আইনজীবী সমিতির সদস্যদের মধ্য থেকে একজন করে আরও সাতজন নির্বাচিত হন।
গত ২৫ মে সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবন, দেশের সব জেলা সদরের দেওয়ানি আদালত প্রাঙ্গণ, বাজিতপুর, ঈশ্বরগঞ্জ, দুর্গাপুর, ভাঙ্গা, চিকন্দি, পটিয়া, সাতকানিয়া, বাঁশখালী, ফটিকছড়ি, সন্দ্বীপ, হাতিয়া, নবীনগর ও পাইকগাছা দেওয়ানি আদালতগুলোর প্রত্যেকটির অঙ্গনে একটি করে ভোট কেন্দ্রে এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
করোনা মহামারি জনিত পরিস্থিতির কারণে বার কাউন্সিল নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে না পারায় বর্তমানে একটি এ্যাডহক কমিটি দায়িত্ব পালন করছে। এই কমিটি ৩০ জুন পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করবেন। আগামী ১ জুলাই নির্বাচিত কমিটি দায়িত্ব গ্রহণ করবেন।
বাংলাদেশের এটর্নি জেনারেল পদাধিকার বলে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
সর্বশেষ ২০১৮ সালের ১৪ মে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ সংখ্যাগরিষ্টতা লাভ করে। সিনিয়র এডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ূন ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।