শিক্ষার্থীদের ক্ষতি পোষাতে বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছি

বাংলাদেশ শিক্ষাঙ্গন

মিজানুর রহমানঃস্টাফ রিপোর্টার।

শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, ‘প্রত্যেক সংকট কিছু নতুন সম্ভাবনা নিয়ে আসে। আমরা সেই সম্ভাবনা কাজে লাগিয়ে সবার সহযোগিতায় এগিয়ে যাচ্ছি। করোনা পরিস্থিতির মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে আমরা কোটি কোটি শিক্ষার্থী ও তাদের পরিবারকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলতে পারি না। তাদের সুরক্ষার কথা চিন্তা করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে স্কুল-কলেজ খোলা হবে। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় যে ক্ষতি হবে তা পুষিয়ে নিতে আমরা কিছু পরিকল্পনা তৈরি করেছি।’

গত শনিবার কালের কণ্ঠ’র সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে শিক্ষামন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি করোনাকালের অনলাইন শিক্ষা ব্যবস্থা, মন্ত্রণালয়ের নানা পরিকল্পনা, নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি, কারিগরি শিক্ষাসহ নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘যে স্তরে যে শিখনফল ও যোগ্যতা অর্জন আমাদের লক্ষ্য সেটা সংক্ষিপ্ততম সিলেবাসে আমরা কতটা অক্ষুণ্ন রাখতে পারব করোনাকালে সে চেষ্টা আমরা করছি; যাতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পর আমাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের শিখিয়ে পরবর্তী পর্যায় পর্যন্ত নিতে পারি। কারণ কাঙ্ক্ষিত শিখনফল ও কাঙ্ক্ষিত দক্ষতা অর্জন না করে যদি পরবর্তী পর্যায়ে যায়, তাহলে পরের পড়াটা সে ধরতে পারবে না।’

তিনি বলেন, ‘মাঠ পর্যায়ের জরিপে আমরা জানতে পেরেছি সংসদ টিভির ক্লাসগুলো মোবাইল ফোনসহ প্রযুক্তির বিভিন্ন মাধ্যমে প্রায় ৯০ শতাংশ শিক্ষার্থীর দোরগোড়ায় পৌঁছেছে। তবে ১০ শতাংশকে পেছনে ফেলে আমরা সামনে এগিয়ে যাব না। তাই আমরা টোল ফ্রি মোবাইল সুবিধা চালু করতে যাচ্ছি, যার মাধ্যমে সেই ১০ শতাংশ শিক্ষার্থীও শিক্ষকদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলার মাধ্যমে পাঠের সুযোগ পাবে। এ ছাড়া ইন্টারনেটের মূল্যবৃদ্ধির বিষয়ে বাজেটে প্রস্তাব থাকলেও শুধু শিক্ষাক্ষেত্রের জন্য নামমাত্র মূল্যে কিভাবে ইন্টারনেট সুবিধা দেওয়া যায়, সেটা নিয়েও আমরা ভাবছি।’

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘এ ছাড়া কমিউনিটি রেডিওর মাধ্যমেও তাদের কাছে শিক্ষা পৌঁছানোর বিষয়ে আমাদের কাজ চলছে। ইউনিয়ন পর্যায়ের তথ্য সেবা কেন্দ্র ও ডিজিটাল সেবা কেন্দ্রগুলোকে শিক্ষার জন্য ব্যবহার করার পরিকল্পনা রয়েছে। করোনাকালে আমরা যেভাবে বা যেসব ক্লাসের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছছি, সেগুলোর মান আরো উন্নত করার চেষ্টা করছি। তথ্য-প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহার করে আমরা কিভাবে শতভাগ শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছব সে চেষ্টা আমরা করছি। আমাদের শিক্ষার্থীরা যেন ঝরে না পড়ে, শিক্ষার্থীরা যেন পড়াশোনার মধ্যে থাকে সে চেষ্টা আমরা করছি।’

এমপিওভুক্তির ব্যাপারে মন্ত্রী বলেন, ‘যখনই কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যোগ্যতা অর্জন করবে, পর্যায়ক্রমে সেগুলোকে আমরা এমপিওভুক্ত করব। এখন সব প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। কিন্তু এমপিওভুক্ত করতে অনেক ডকুমেন্টেশন প্রয়োজন হয়। তার পরও আমাদের চেষ্টাটা চলছে। এমপিওভুক্তির প্রক্রিয়াটা কঠিন। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে নিয়োগসহ নানা সমস্যা রয়েছে। সেই সমস্যাগুলো যাচাই-বাছাই না করে এমপিওভুক্ত দেওয়া যায় না। গত বছর যাচাই-বাছাই করতে গিয়ে দেখেছি, কিছু তথ্যবিভ্রাটের ঘটনাও ঘটেছে। সেই তথ্যবিভ্রাটের ঘটনা যাতে না ঘটে সে জন্য আমরা এডুকেশন ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সেলকে (ইএমআইএস) উন্নত করার চেষ্টা করছি। এতে ওই সেলেই সব আপডেট তথ্য থাকবে। ফলে তথ্যবিভ্রাটের ঘটনা ঘটবে না। তবে গত বছরের চেয়ে এই বছর হয়তো এমপিওভুক্তির যাচাই-বাছাইয়ের সময় দীর্ঘ হতে পারে। কিন্তু ইএমআইএস সেল একবার অপারেশনাল হয়ে গেলে আশা করছি এমপিওভুক্তিসহ অন্যান্য বিষয়ে খুব বেশি সময় লাগবে না।’

কারিগরি শিক্ষার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘কারিগরি শিক্ষা এখন আমাদের মূল ফোকাস। কারণ আমাদের চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের কথা যদি বলি, আমাদের এসডিজি-৪-এর কথা যদি বলি এবং আমাদের যে ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড, তা যদি অর্জনের কথা বলি, তাহলে আমাদের জনসংখ্যাকে জনসম্পদে রূপান্তর করতে হবে। পৃথিবীর যেসব দেশ ভালো করেছে, তারা কিন্তু কারিগরি শিক্ষাকে গুরুত্ব দিয়েছে। আমাদের সবার আত্মকর্মসংস্থানের জন্য কারিগরি শিক্ষার বিরাট গুরুত্ব রয়েছে।’

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘২০০৯ সালে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষার্থী ছিল শতকরা এক ভাগেরও কম। কিন্তু এখন কারিগরিতে শিক্ষার্থী প্রায় সাড়ে ১৭ শতাংশ। আমরা কারিগরিতে প্রয়োজনীয়সংখ্যক শিক্ষক নিয়োগের চেষ্টা করছি। বেসরকারি অনেক কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে, সেগুলো মানসম্পন্ন নয়। সেগুলোর মান উন্নত করার চেষ্টা করছি আমরা। কারিগরি শিক্ষায় আমরা যথেষ্ট পরিমাণ বিনিয়োগও করছি। একই সঙ্গে কারিগরি শিক্ষাকে পুরো আধুনিকায়ন করার চেষ্টা করছি। অনেকেই মনে করেন যে কারিগরিতে শুধু দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা পড়বে, যারা মেধাবী শিক্ষার্থী নয় তারা পড়বে। মানুষের এই ধারণা আমাদের বদলাতে হবে। কারিগরি শিক্ষা কিন্তু সবার জন্য। কারিগরি শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষায় যাওয়ার যে দ্বার উন্মুক্ত আছে, সেগুলোও মানুষকে আমাদের জানাতে হবে। আমরা সেই উদ্যোগগুলো নিয়েই কাজ করছি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *