নিউজ ডেস্ক : বর্তমান সময়ে দেশে কিশোর অপরাধ উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে। র্যাব “কিশোর গ্যাং’ নামে অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে জোরালো অভিযান পরিচালনা করছে।যারা কিশোরদের গ্যাংয়ে রূপান্তর করছে অর্থাৎ পৃষ্ঠপোষক, তাদের ছাড় দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) মহাপরিচালক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন।
র্যাব ডিজি বলেন, বর্তমান সময়ে কিশোর অপরাধ উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে। তারা হত্যাকাণ্ডের মতো হিংস্র ও নৃশংস অপরাধেও জড়িয়ে পড়ছে। পরবর্তীতে প্রজন্মকে রক্ষা করতে এখনই ‘কিশোর গ্যাং’ কালচারের লাগাম টেনে ধরা দরকার।
তিনি বলেন, আমরা প্রত্যাশা করি পরিবার তার সন্তানের প্রতি আরও নজর দেবে। পাশাপাশি সমাজ ও শিক্ষাঙ্গনকে এগিয়ে আসতে হবে।
মহাপরিচালক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন আরো বলেছেন, এদেশে জঙ্গিদের আর ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ নেই। আমরা সবসময় তাদের কার্যক্রম মনিটর করছি। ইতিতোধ্যে আড়াই হাজারের অধিক জঙ্গিকে গ্রেফতার করেছি আমরা। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে জঙ্গিবাদ একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেন, এই বাংলায় জঙ্গিবাদের ঠাঁই হবে না। ভবিষ্যত প্রজন্ম যাতে এই জঙ্গিবাদে জড়িত না হতে পারে সেজন্য সকলকে এগিয়ে আসতে হবে।
তিনি বলেন, সম্প্রতি আমরা অপ্রচলিত কিছু মাদক দেখতে পাচ্ছি। এসব মাদক সেবন ও ব্যবসার সংগে যারা জড়িত তাদেরকে গ্রেফতার করছি। এর মধ্যে ৪৬ হাজারের বেশি মাদককারবারিকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে কিছু নাশকতার পরিকল্পনা হয়েছিলো, আবার রাষ্ট্রবিরোধী কার্যক্রম হয়েছে। আমরা তাদেরকে গ্রেফতার করেছি। হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে তিনি বলেন, যারা এই ধরনের কার্যক্রম করবে তাদেরকে ছাড় দেওয়া হবে না।
মঙ্গলবার ২৯ জুন ২০২১ ইং দুপুরে র্যাব সদর দপ্তরে সাম্প্রতিক সময়ে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা জানান।
চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেন, করোনা অতিমারির এ সময়ে ‘লকডাউন’ নিশ্চিত করার পাশাপাশি র্যাব ভেজাল পণ্য, দ্রব্যমূল্য বাড়াসহ বিভিন্ন অনিয়মের বিরুদ্ধে নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছে। এছাড়া গত এক বছরের বেশি সময় ধরে আমরা মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, অবৈধ কিট, ভুয়া রিপোর্ট ইত্যাদি সম্পর্কীয় অভিযান পরিচালনা করছি। সাম্প্রতিক সময়ে করোনাসহ বিভিন্ন রোগের টেস্টিং কিট ও রি-এজেন্ট জব্দ ও প্রতারক চক্রের মূলহোতাসহ নয়জন অপরাধীকে গ্রেফতার করে র্যাব।
করোনা পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি কর্মহীন, অসহায় ও দুস্থদের মধ্যে খাদ্য সহায়তা দেওয়া, সুরক্ষাসামগ্রী বিতরণ, প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে অসুস্থ রোগীদের জরুরিসেবা দেওয়া ও অন্যান্য মানবিক কার্যক্রমের মাধ্যমে র্যাব মানুষের আস্থা ও অফুরন্ত ভালোবাসা অর্জন করেছে।
সাগর-রুনি হত্যা মামলার সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে র্যাব ডিজি বলেন, আপনারা জানেন মামলাটি আমাদের কাছে তদন্তাধীন রয়েছে। যথাযথ গুরুত্বের সঙ্গে মামলাটি আমরা তদন্ত করছি। তদন্ত শেষ হলে আমরা আদালতে যথাযথ প্রতিবেদন পেশ করবো। মামলাটির তদন্ত করতে এত সময় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, র্যাবের সক্ষমতা কম এ কথা আমি বলবো না। সব মামলার ক্ষেত্রে যে আমরা সঙ্গে সঙ্গে ডিটেক্ট করতে পেরেছি এটা কিন্তু না। যথাযথ প্রক্রিয়ায় তদন্ত করে যাচ্ছি। এর থেকে বেশি সময় ধরে ও অনেক মামলা বিভিন্ন সংস্থার কাছে তদন্তাধীন রয়েছে।
র্যাব জঙ্গি দমনে প্রশংসনীয় অবদান রেখে চলছে জানিয়ে র্যাব প্রধান বলেন, প্রতিষ্ঠা থেকে আমরা দুই হাজার ৫৫১ জন জঙ্গি গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছি। জঙ্গি দমনে বিগত সময়ের অভিজ্ঞতায় হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলায় প্রাথমিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেয় র্যাব। হলি আর্টিজানের হামলার আসামিদের গ্রেফতারে র্যাবের উল্লেখযোগ্য সাফল্য রয়েছে। জঙ্গিদের কার্যক্রম দুর্বল হলেও মাঝে মধ্যে র্যাবের বা বিভিন্ন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে জঙ্গিরা গ্রেফতার হচ্ছে। জঙ্গি গোষ্ঠী থেকে আমরা এক ধাপ এগিয়ে আছি। সাইবার সক্ষমতা কাজে লাগিয়ে আমরা সাইবার জগতে জঙ্গি কার্যক্রমের মনিটরিং করছি। যখনই আমরা তথ্য পাচ্ছি তাদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনছি।
বাংলাদেশে জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে বাইরের কোনো জঙ্গি সংগঠনের যোগাযোগ আছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের এখানে যে জঙ্গিরা আছে তারা হোম গ্রোন। বিদেশি জঙ্গিদের সঙ্গে যোগাযোগের এখনো কোনো তথ্য আমরা পাইনি। আমাদের দেশের জঙ্গিরা অনলাইনের মাধ্যমে বিভিন্ন ভিডিও দেখে এবং দেশের জঙ্গিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সংঘটিত হওয়ার চেষ্টাকালে আমরা খবর পেয়ে যাচ্ছি। তখনি তাদের গ্রেফতার করছি। এর ফলে আর কোনো বড় ধরনের জঙ্গি হামলার ঘটনা দেশে ঘটছে না।
হলি আর্টিজানের মতো এ রকম আরও কোনো ঘটনা ঘটলে সে ক্ষেত্রে ওই ঘটনা মোকাবিলায় র্যাবের সক্ষমতা জানতে চাইলে র্যাব ডিজি বলেন, এখন তাদের সেই ক্যাপাসিটি আছে বলে মনে করি না। তবে যেকোনো ধরনের হামলার জন্য আমরা কিন্তু প্রস্তুত আছি। এ মুহূর্তে তাদের এ ধরনের হামলা করার সামর্থ্য নেই বলে আমরা আত্মতুষ্টিতে ভুগি না। আমাদের নিজেদের প্রশিক্ষণ এবং যে ধরনের প্রযুক্তিতে তাদের আমরা চিহ্নিত করতে পারি সেগুলো বাড়ানোর কাজ প্রতিনিয়ত করে যাচ্ছি। আমরা আশা করি যেকোনো ধরনের হামলার চেষ্টা করা হলে অনেক আগেই আমরা সেটা প্রতিহত করতে পারবো।