প্রতারক দিুপ,দঃআইচা থানায় রিমান্ডে।

অপরাধ চর ফ্যাশন দূর্নীতি প্রচ্ছদ ভোলা

মিজানুর রহমান।।।

ভোলা, চরফ্যাশন

প্রতারণার দায়ে গ্রেপ্তার আশরাফুল ইসলাম দিপুর গ্রামের বাড়ি ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার নজরুল নগর ইউনিয়নের বাবুরহাট এলাকায়। বাবা আবদুল জলিল ওরফে মতু ফকির একজন ছাগল পালক। তার চার ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে সবার ছোট দিপু। পড়াশোনা করেছেন অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত। এর পরই চলে যান ঢাকায়, জায়গায় জায়গায় জাল পাতেন প্রতারণার। সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন জেলা ঘুরে বেড়ানো আর প্রতারণাই ছিল তার নেশা ও পেশা।

মাঝে মধ্যে নিজের এলাকাতেও যেতেন দিপু। চলাফেরায় থাকত রাজকীয়ভাব। ঘর থেকে বের হলেই সামনে এসে দাঁড়াত মাইক্রোবাস। দরজা খুলে দিতেন অন্য কেউ। যেন, গাড়ি ছাড়া তার চলেই না! এটাও ছিল তার প্রতারণার ফাঁদ। স্থানীয়দের বোঝাতেন চাকরি করেন উচ্চপদে। সবই তার হাতের মুঠোয়। দিপুর সেই ফাঁদে পা বাড়িয়ে এলাকার অনেকেই খুইয়েছেন মোটা অঙ্কের টাকা।

তাদেরই একজন চরফ্যাশন দক্ষিণ আইচা এলাকার ফারুক। দিপুর প্রতারণা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমার এক ছেলেকে ঢাকার একটি প্রতিষ্ঠিত স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেওয়ার কথা বলে সে ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়। পরে বিষয়টি প্রতারণা বুঝতে পেরে টাকা ফেরত চাইলে নয়ছয় শুরু করে।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আশরাফুল আলম দিপু পুরো এলাকাতেই এক পরিচতি নাম। স্থানীয় প্রভাবশালীদের সঙ্গে ছিল তার চলাফেরা। এ জন্য অপকর্ম করেও পার পেয়ে যেতেন। তার বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতেও সাহস পেতেন না। তবে এ প্রতারক গ্রেপ্তার হওয়ার পরই মুখ খুলতে শুরু করেছেন সাধারণ মানুষ।

তারা জানান, নিজ এলাকায় মাদকের সঙ্গেও জড়িত দিলেন দিপু। বছর দুয়েক আগে ইয়াবাসহ তাকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। অনেক নারীর সঙ্গেও রয়েছে তার অনৈতিক সম্পর্ক। শুধু তাই নয়,

করোনার মধ্যে এলাকায় এসে তিনি বেশকিছু ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেন। কিন্তু ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নেওয়া ওইসব মালামালের টাকা না দিয়ে উল্টো ভয়ভীতি দেখান। বাবুরহাট বাজারের একাধিক ব্যবসায়ীই তার কাছে টাকা পান বলে অভিযোগ।

নজরুল নগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, ‘দিপু যখন এলাকায় আসত তখন ভিআইপি ব্যক্তিদের মতো চলাফেরা করত। তার টাকার উৎস কোথায়? একজন ছাগল পালকের ছেলে হয়েও তার এমন রাজকীয় চলাফেরায় অনেকেই হতবাক হয়ে যেতেন।’ ইউপি চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘এলাকায়ও প্রতারণার মাধ্যমে বহু লোকের টাকা আত্মসাৎ করেছে দিপু। বাবুরহাট বাজারের অনেকেই তার কাছে টাকা পায়।’

দক্ষিণ আইচা থানা যুবলীগের আহ্বায়ক বাবুল হাওলাদার জানান, দরিদ্র পরিবারের সন্তান দিপু প্রতারকের খাতায় নাম লেখায় ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়া অবস্থায়। দিন যত গড়িয়েছে ততই হাত পাকিয়েছে প্রতারণায়। চাকরি দেওয়ার নাম করে ভোলার অনেকের কাছ থেকেই সে টাকা নিয়েছে। এ ছাড়া বাবুরহাট বাজারের ব্যবসায়ী জসিমের কাছ থেকে ১ লাখ, ওয়ারিস সিকদারের কাছ থেকে ৩৫ হাজার এবং কাপড় ব্যবসায়ী সাহাজলের কাছ থেকে ৬০ হাজার টাকা নিলেও আর ফেরত দেয়নি। মূলত স্থানীয় কিছু প্রভাবশালীর ছত্রছায়ায় ছিল এ প্রতারক।

দক্ষিণ আইচা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হারুন অর রশিদ বলেন, ‘তার বিরুদ্ধে আমাদের থানায় একটি প্রতারণা ও একটি মাদকের মামলা ছিল। মাদক মামলায় পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করেছিল। পরে জামিনে বের হয়। পরে ওই মামলা খারিজ হয়ে যায়। অন্যদিকে প্রতারণার মামলাটিও বেশি দূর এগোয়নি। যাদের সঙ্গে প্রতারণা করেছিল তাদের টাকা ফেরত দিয়ে রক্ষা পায় দিপু।’ এক প্রশ্নের জবাবে ওসি বলেন, ‘এলাকায় তাকে কোনো পুলিশ প্রটোকল দেওয়া হয়নি।’

ভোলার পুলিশ সুপার সরকার মো. কায়সার বলেন, ‘জেলার বাইরেই মূলত বড় বড় প্রতারণা করেছে দিপু। এলাকায়ও চাকরি দেওয়ার নাম করে বিভিন্নজনের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে জানতে পেরেছি। স্থানীয় পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছি, তার বিরুদ্ধে যদি কেউ প্রতারণার মামলা করতে চায় তা গ্রহণ করতে।’ পুলিশ সুপার আরও বলেন, ‘ভুয়া পরিচয় ব্যবহার করে দিপু প্রতারণা করত- এমন খবর জানতে পেরে তার বিষয়ে গোয়েন্দা বিভাগ থেকে রিপোর্ট চাওয়া হয়েছিল। আমরা তদন্ত করে সেই রিপোর্ট দিয়েছি, তার ওপর ভিত্তি করেই ওই প্রতারককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’

ADVERTISEMENT

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *