সুরতহাল রিপোর্টে যেসব বর্ণনা আছে এবং

অপরাধ ঢাকা

নিখাদ ডেক্স : বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান মুনিয়া ‘আত্মহত্যা’ করেছে, নাকি তাকে ‘হত্যা’ করা হয়েছে তা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে গেছে তদন্তকারীরা। ফ্ল্যাটে মুনিয়াকে যে অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিলো, সে বিষয়ে বর্ণনা দিয়ে কিছু সুপারিশ করেছে পুলিশ।

এই তরুণীকে ‘ধর্ষণ’ কিংবা ‘বিষ প্রয়োগ’ করা হয়েছিল কি না? তা খতিয়ে দেখতে ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের কাছে সুপারিশ করেছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা রাজধানীর গুলশান থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবুল হাসান। মুনিয়ার মৃত্যুর পর আজ বুধবার (২৮ এপ্রিল) দুপুরে গুলশান থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) শামীম হোসেনের লেখা একটি সুরতহাল  রিপোর্ট হাতে এসেছে। 

তাতে তিনি লিখেছেন, ‘হত্যার আগে ভিকটিম ধর্ষিত হয়েছে কি না তা জানার জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। কিংবা তাকে বিষ প্রয়োগ করা হয়েছিল কি না তাও তদন্তের আওতায় আনার সুপারিশ করা হয়েছে।’ 

সুরতহাল প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘মুনিয়ার বয়স ২৩ বছর। গায়ের রং ফর্সা। লম্বা অনুমান ৫ ফুট ৩ ইঞ্চি। মাথার চুল লম্বা অনুমান ১২ ইঞ্চি। চুলের রং বাদামি। মুখমণ্ডল গোলাকার, নাক স্বাভাবিক, চোখ দুটি বন্ধ, জিহ্বা মুখ থেকে আধা ইঞ্চি বাহিরে দাঁত দিয়ে কামড়ানো, দুইটি দাঁত দেখা যায়। জিহ্বা দিয়ে সামান্য লালা বের হয়েছে। গলার বামপাশে অর্ধচন্দ্রাকৃতি গভীর কালোদাগ রয়েছে। হাত দুটি শরীরের সঙ্গে লম্বালম্বি অর্ধমুষ্টি।

শামীম হোসেন আরও উল্লেখ করেন, ‘মৃতের বড়বোনের দ্বারা লাশ ওলটপালট করে বুক, পেট ও পিঠ স্বাভাবিক দেখা যায়। মলদার স্বাভাবিক, যৌনাঙ্গে দিয়ে লালচে রঙের পদার্থ বের হতে দেখা যায়। দুই পা লম্বালম্বি, পায়ের আঙুল নিম্নমুখী।’

এসআই শামীম হোসেন জানিয়েছেন, ‘ভিক্টিম ধর্ষিত হয়েছে কিনা, ধর্ষিত হলে ডিএনএস সংগ্রহ, ভিকটিমকে বিষ প্রয়োগ করা হয়েছে কিনা এবং ভিকটিমের মৃত্যুর প্রকৃত কারণ নির্ণয়ের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ বিভাগীয় প্রধান ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল বরাবর পাঠানো হয়েছে।’

সুরতাহল প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করেই ময়নাতদন্ত হয়ে থাকে। এরই মধ্যে ময়নাতদন্ত শেষ হলেও এখনো প্রতিবেদন আসেনি। এই প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলছেন, ‘ময়নাতদন্ত রিপোর্ট এলেই প্রকৃত কারণ বের হয়ে আসবে। তবে কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়। আইন অনুযায়ী সব চলবে। যেই অপরাধী হোক, তাকে আইনের মুখোমুখি হতে হবে। এটি তদন্তাধীন রয়েছে। সেই তদন্তের পরই আমরা বলতে পারব।’

প্রসঙ্গত, গুলশানের একটি ফ্ল্যাট থেকে গত সোমবার (২৬ এপ্রিল) সন্ধ্যায় কলেজপড়ুয়া ওই তরুণীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। মেয়েটিকে ‘আত্মহত্যায় প্ররোচনা’ দেয়ার অভিযোগে সোমবার (২৬ এপ্রিল) রাতেই গুলশান থানায় মামলা করেন তার বড় বোন ইসরাত জাহান তানিয়া। এতে আসামি করা হয় বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সায়েম সোবহান আনভীরকে।

পুলিশের গুলশান জোনের উপকমিশনার (ডিসি) সুদীপ কুমার চক্রবর্তী সাংবাদিকদের জানান, সোমবার সন্ধ্যার দিকে গুলশান ২ নম্বরের ১২০ নম্বর সড়কের ফ্ল্যাট থেকে ওই তরুণীর ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তার বাড়ি কুমিল্লায়।

ঘটনাস্থল থেকে আলামত সংগ্রহ করার পাশাপাশি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মরদেহের ময়নাতদন্ত শেষে মঙ্গলবারই কুমিল্লায় বাবা-মায়ের কবরের পাশেই ওই তরুণীকে দাফন হয়। এই তরুণী পরিবারের সবার ছোট, তার ১ ভাই এবং ১ বোন রয়েছে।

এ চাঞ্চল্যকার ঘটনায় মামলার পর মঙ্গলবারই বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি সায়েম সোবহান আনভীরের বিদেশে যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে আদালত। তবে, সায়েম সোবহান বর্তমানে দেশে রয়েছেন কিনা, তা নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে।

আনভীরের বিদেশ যাতায়াতের ওপর নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আদালতে আবেদন করেন আত্মহত্যায় প্ররোচনা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গুলশান থানার পরিদর্শক মোল্লা আবুল হাসান। আবেদনে সাড়া দিয়ে আনভীরের বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেন ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের বিচারক শহিদুল ইসলাম। সেই সঙ্গে বিচারক আগামী ৩০ মের মধ্যে তদন্ত করে আদালতে প্রতিবেদন জমা দেয়ার আদেশ দেন তিনি।

কয়েকটি গণমাধ্যমে আনভীরের বিদেশ যাওয়ার খবর প্রকাশ করলেও বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন বিভাগ থেকে জানানো হয়েছে, গত কয়েকদিনের মধ্যে এই নামে কেউ বিদেশ যাননি। তবে, আশঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছে- ডকুমেন্ট জালিয়াতির মাধ্যমে তিনি দেশ ত্যাগ করেছেন কিনা!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *