ভোলায় স্বামী থেকে গৃহবধূ কে ছিনিয়ে নেয়ার প্রতিবাদে এলাকাবাসীর বিক্ষোভ!

অপরাধ প্রচ্ছদ ভোলা

মিজানুর রহমান।
মঙ্গলবার, ২৭ এপ্রিল ২০২১, | সময় ৩:১৫

ভোলার দৌলতখানে স্বামীর কাছ থেকে নববধূকে জোরপূর্বক ছিনিয়ে নেয়ার প্রতিবাদে আজ বিক্ষোভ করেছে এলাবাসী। স্থানীয় মিয়ার হাটে এ বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় অবিলম্বে নববধূকে তার বৈধ স্বামীর কাছে ফিরিয়ে দেয়ার দাবি জানানো হয় বিক্ষোভ সমাবেশে।

উল্লেখ্য, গাজীপুর জেলার জয়দেবপুর থানার বাসিন্দা শ্রাবন্তী রাণী মণ্ডলকে গত শুক্রবার ভোলার দৌলতখান থানার চরখলিফা ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের আলী হোসেনের বাড়ি থেকে স্থানীয় সালিসের মাধ্যমে জোরপূর্বক নিয়ে যায় তার স্বজনরা।

এ সময় শ্রাবন্তীকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোরপূর্বক নিয়ে যাওয়ার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় কিছু লোকজনের মাঝে সমালোচনার ঝড় ওঠে।
জানা গেছে, গাজীপুর উপজেলায় একটি ফ্যান কোম্পানিতে কাজ করতেন দৌলতখানের আলী হোসেনের ছেলে কামরুল ইসলাম। সেখানে শ্রাবন্তী রাণীর সঙ্গে তার পরিচয় হয়।
কামরুল ইসলাম জানান, তাদের প্রথম পরিচয় যখন হয় তখন শ্রাবন্তী অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। ২ বছর ধরে তাদের সঙ্গে প্রেমের সর্ম্পক চলছিল। তখন জানাজানি হলে তার লেখাপড়া বন্ধ করে দেয় পরিবার। চট্টগ্রামে চলে যায় কামরুল। সেখানে একটি জাহাজে চাকরি নেয় সে।

সর্বশেষ গত ১৪ এপ্রিল শ্রাবন্তি তার সঙ্গে চলে আসে দৌলতখানে। ১৫ এপ্রিল নোটারির মাধ্যমে ইসলামধর্ম গ্রহণ করে সে। তার নতুন নাম দেওয়া হয় জান্নাতুল ফেরদৌস। এরপরে তারা বিয়ে করে। শুক্রবার থেকে তারা একসাথে সংসার শুরু করে। কামরুল ইসলাম বলেন, পরে আমি জানতে পারি জান্নাতুল ফেরদৌসের বাবা শংকর চন্দ্র আমার নামে অপহরণ মামলা দিয়েছেন। পরের শুক্রবার (২৩ এপ্রিল) লোকজন নিয়ে এসে তারা আমার স্ত্রীকে তুলে নিয়ে যায়।

কামরুলের আরেক ভাই নুরুজ্জামান দাবি করেন, স্থানীয় প্রভাবশালী কামাল তুফানি নামে এক লোক ভয়ভীতি দেখিয়ে তাদের কাছ থেকে সাদা কাগজে স্বাক্ষর রেখে কামরুলের স্ত্রীকে তার মা-বাবার কাছে দিয়ে দেন।

তিনি আরও বলেন, একটি মেয়ে ইসলামধর্ম গ্রহণ করেছে স্বেচ্ছায়, সেদিন কামরুলের স্ত্রী বোরকা পড়েই সালিসে গিয়েছিল। কিন্তু কামাল তুফানি সেই বোরকা টেনে খুলে মেয়েকে তার বাবার কাছে দিয়ে দেন। ওইদিন কোনো পুলিশ আসেনি।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, শ্রাবন্তী রাণী ওরফে জান্নাতুল ফেরদৌস চিৎকার করে সবাইকে বলছিল ‘সে তার মা-বাবার কাছে যাবে না। কামরুল তার স্বামী, তার সাথেই থাকবে।’ এ সময়ে স্থানীয় এক মেম্বারের পা ধরে কান্না করতেও দেখা যায় তাকে।

কামরুল বলেন, আমি যদি অপহরণ করতাম তাহলে আমার স্ত্রীকে নিয়ে তো লুকিয়ে থাকতাম। তাকে নিয়ে সালিসে যেতাম না। আমার স্ত্রী সবার সামনে চিৎকার করে বলেছে ‘সে ইসলামধর্ম গ্রহণ করেছে।’ তারপরও কেউ আমাদের সাহায্য করতে আসেনি। আমার সংসার ৭ দিনেই ভেঙে দিল। কামরুল দাবি করেন, তার স্ত্রীর বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হয়েছে। ২০০৩ সালের ৩ মার্চ গাজীপুরে শংকর চন্দ্র মণ্ডল ও নিয়তি রানী মণ্ডলের ঘরে জন্ম নেন শ্রাবন্তী রাণী।

এদিকে জান্নাতুলের ফিরে না যাওয়ার ভিডিও ছড়িয়ে পড়ায় ওই দিন ‘দৌলখান থানা’ ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ঘটনাটি নিয়ে ব্যাখ্যা দেন দৌলতখান থানার ওসি।

দৌলতখান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বজলার রহমান বলেন, গাজীপুরের একটি মামলায় আমরা সেই মেয়েকে উদ্ধারে সাহায্য করি। তবে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে পুলিশের উপস্থিতি ছিল না উল্লেখ করলে তিনি জানান, সিভিল ড্রেসে পুলিশ ছিল। অপরহরণ মামলা হলেও ঘটনাটি একটি প্রেমঘটিত ব্যাপার। কিন্তু মেয়ে প্রাপ্তবয়স্ক না হওয়ায় অভিভাবকের সিদ্ধান্ত আইনসিদ্ধ।

তিনি সেখানে দাবি করেন, গাজীপুর থানায় ২৩ এপ্রিল দায়ের করা মামলার সূত্র ধরে অপহরণকৃত অপ্রাপ্তবয়স্ক শিশু শ্রাবন্তী রাণীকে (১৫) মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা লুৎফর রহমান উদ্ধার করে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *