মাসুদ রানা’র আড়াই শতাধিক বই শেখ আবদুল হাকিমের: কপিরাইট অফিস।

বাংলাদেশ শিক্ষাঙ্গন

ডেস্ক রিপোর্ট।

‘মাসুদ রানা’র আড়াই শতাধিক বই শেখ আবদুল হাকিমের: কপিরাইট অফিস

 

 

কাজী আনোয়ার হোসেন স্পাই থ্রিলার সিরিজ ‘মাসুদ রানা’ লেখা শুরু করলেও সিরিজের আড়াই শতাধিক বই লিখেছেন শেখ আবদুল হাকিম; পারিশ্রমিকের বিনিময়ে তার কাছ থেকে লেখা নিয়ে কাজী আনোয়ার হোসেন নিজের নামে প্রকাশ করতেন বলে জানিয়েছে কপিরাইট অফিস।

গত বছর জুলাইয়ে ‘মাসুদ রানা’ সিরিজের ২৬০টি ও ‘কুয়াশা’ সিরিজের ৫০টি বইয়ের লেখক হিসেবে মালিকানা স্বত্ব দাবি করে কাজী আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে কপিরাইট আইনের ৭১ ও ৮৯ ধারা লঙ্ঘনের অভিযোগ দাখিল করেছিলেন শেখ আবদুল হাকিম।

তিন দফা শুনানি, দুই পক্ষের যুক্তি-পাল্টা যুক্তি ও তৃতীয় পক্ষের বক্তব্যের আলোকে রোববার কপিরাইট অফিসের এক রায়ে বলা হয়েছে, সেবা প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী কাজী আনোয়ার হোসেন কপিরাইট আইনের ৭১ ও ৮৯ ধারা লঙ্ঘন করেছেন।

কপিরাইট অফিসের রেজিস্ট্রার জাফর রাজা চৌধুরী জানান, মাসুদ রানা সিরিজের প্রায় ৪৫০টি বইয়ের মধ্যে ২৬০টি বইয়ের লেখক হিসেবে শেখ আবদুল হাকিমের দেওয়া তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনা করে দেখা গেছে তিনিই বইগুলোর লেখক। সেই সঙ্গে কুয়াশা সিরিজের ৫০টি বইয়ের লেখকও তিনি।

তিনি রোববার রাতে গণমাধ্যমকে বলেন, “সেগুলোর মধ্যে আগেই তার নামে ৬টি বইয়ের কপিরাইট করা ছিল। বাকি বইগুলোও নিজের নামে স্বত্বের জন্য কপিরাইট অফিসে আবেদন করতে পারেন।”

পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ পর্যন্ত মাসুদ রানা সিরিজের ২৬০টি ও কুয়াশা সিরিজের ৫০টি বইয়ের প্রকাশ বা বাণিজ্যিক কার্যক্রম গ্রহণ থেকে বিরত থাকার জন্য সেবা প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী কাজী আনোয়ার হোসেনকে নির্দেশ দিয়েছে কপিরাইট অফিস।

সেই সঙ্গে আবদুল হাকিমের নামে কপিরাইট নিবন্ধনকৃত প্রকাশিত বইগুলোর বিক্রিত কপির সংখ্যা ও বিক্রয় মূল্যের হিসাব বিবরণী আগামী ৩০ দিনের মধ্যে বাংলাদেশ কপিরাইট অফিসে দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

শেখ আবদুল হাকিম গণমাধ্যমকে বলেন, “মাসুদ রানা সিরিজের ২৬০টি বইয়ের লেখক হিসেবে ‍অবশেষে স্বীকৃতি পেলাম। এখন এই বইগুলো বিক্রি বাবদ পাওনা অর্থ আমি ফেরত চাই।”

এ রায়ের বিরুদ্ধে কাজী আনোয়ার হোসেন আগামী ৩০ দিনের মধ্যেই কপিরাইট অফিসে আপিল করার সুযোগ আছেন বলে জানান জাফর রাজা চৌধুরী।

এদিকে কাজী আনোয়ার হোসেনের পরিবারের পক্ষে মাসুমা মায়মুর গণমাধ্যমকে জানান, তারা এখনও রায়ের কপি হাতে পাননি। রায়ের কপি হাতে পেলেই কপিরাইট অফিসে আপিল করবেন।

“আমরা আইনের পথেই হাঁটব। সেখানেও ন্যায় বিচার না পেলে আমরা হাই কোর্টে যাব। আইনের মাধ্যমেই যা হওয়ার হবে।”

রায়ের পর্যবেক্ষণ বলা হয়েছে, পারিশ্রমিকের বিনিময়ে শেখ আবদুল হাকিমসহ একাধিক লেখককে দিয়ে মাসুদ রানা সিরিজের বইগুলো লিখিয়ে নিয়েছেন কাজী আনোয়ার হোসেন।

‘বাজারজাত করার স্বার্থে’ প্রকাশক প্রকৃত লেখকের পরিবর্তে মাসুদ রানার বইগুলোতে নিজের নাম ব্যবহার করতেন। বিষয়টি নিয়ে শেখ আবদুল হাকিমের আপত্তি না থাকলেও রয়্যালিটি নিয়ে তাদের মধ্যে মতপার্থক্য তৈরি হয়।

আবদুল হাকিমের অভিযোগ, তার লেখা বই একের পর এক মুদ্রণ প্রকাশিত হলেও প্রাপ্য রয়্যালিটি তাকে দেওয়া হয়নি; সেকারণেই কপিরাইট অফিসের দ্বারস্থ হয়েছেন তিনি।

তার নামে কপিরাইট নিবন্ধনকৃত বইগুলোর রয়্যালিটি দাবি ও ক্ষতিপূরণ চেয়ে কপিরাইট বোর্ডে কিংবা দেওয়ানী আদালতে অভিযোগ দায়ের করতে পারেন।

তার নামে কপিরাইট নিবন্ধনকৃত বই কোনো দোকান, বাজার বা গুদামজাত করা থাকলে তা জব্দ করার জন্য স্থানীয় থানা কিংবা কপিরাইট টাস্ক ফোর্সের কাছে আবেদন করতে পারেন।

মাসুদ রানা সিরিজের ৫০টি বইয়ের লেখক হিসেবে দাবি করে কাজী আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে একই ধারায় অভিযোগ দায়ের করেছেন আরেক লেখক ইফতেখার আমিন। সেই অভিযোগও শিশগিরই নিষ্পত্তি করা হবে বলে জানান জাফর রাজা চৌধুরী।

বাংলাদেশের জনপ্রিয় স্পাই থ্রিলার মাসুদ রানা নতুন করে চলচ্চিত্রায়নও হচ্ছে। এর মধ্যেই সেবা প্রকাশনীর বিপক্ষে কপিরাইট অফিসের আদেশ এল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *