বিশাল উত্থানে শেয়ারবাজার

অর্থনীতি জাতীয়

আস্থা সঙ্কট আর মহামারি করোনার প্রকোপে নিস্তেজ হয়ে পড়া দেশের শেয়ারবাজার আবার চাঙা হয়ে উঠেছে। প্রায় দেড় মাস ধরেই ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় রয়েছে দেশের শেয়ারবাজার। ধারাবাহিকভাবে মূল্যসূচক ও লেনদেন বাড়লেও গতকাল সা¤প্রতিক সময়ের মধ্যে সব থেকে তেজি ছিল শেয়ারবাজার। সূচকের বিশাল উত্থানের মধ্য দিয়ে লেনদেন শেষ হয়েছে দেশের দুই শেয়ারবাজারে। এদিন লেনদেন শুরু হতেই বড় লাফ দেয় মূল্যসূচক। লেনদেনেও দেখা দেয় চাঙাভাব। মাত্র ১০ মিনিটে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) শত কোটি টাকার ওপরে লেনদেন হয়। শুরুর এই চাঙাভাব অব্যাহত থাকে লেনদেনের শেষ পর্যন্ত।

ফলে লেনদেন ছাড়িয়ে যায় হাজার কোটি টাকা। ডিএসই’র প্রধান মূল্যসূচক বাড়ে প্রায় ২০০ পয়েন্ট। লেনদেনে অংশ নেয়া অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লেখায়। এতে একদিনেই প্রায় সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকার ওপরে বাজার মূলধন ফিরে পেয়েছে ডিএসই। অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সার্বিক সূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ৪৮১ পয়েন্ট।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) শেয়ারবাজারে সুশাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বেশিকিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ নিয়েছে। বেশ কয়েকটি দুর্বল কোম্পানির প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) বাতিল করে দেয়া হয়েছে। অনিয়ম করায় বেশকিছু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয়েছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার এমন ভ‚মিকার কারণে বাজারের ওপর বিনিয়োগকারীদের আস্থা বেড়েছে। বাজারে এখন এসবের ইতিবাচক প্রভাব দেখা যাচ্ছে।

তারা বলছেন, এখন যেহেতু শেয়ারবাজার পতন কাটিয়ে উঠছে তাই বিনিয়োগকারীদের সতর্কতার সঙ্গে বিনিয়োগ করতে হবে। হুজুগে বা গুজবে বিনিয়োগ করা উচিত হবে না। কোনোভাবেই বিনিয়োগকারীদের প্যানিক সেল (হুজগে বিক্রি) করা যাবে না। আবার গুজবে পড়ে অতিরিক্ত লাভের আশায় দুর্বল কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করা ঠিক হবে না। বিনিয়োগকারীদের ভালো কোম্পানি বাছাই করে মৌলভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানিতে বিনিয়োগ করতে হবে। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেছেন, বিএসইসি স¤প্রতি কিছু ভালো পদক্ষেপ নিয়েছে। কিছু কোম্পানির আইপিও বাতিল করেছে, আবার কিছু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে অনিয়মের কারণে জরিমানা করেছে। আমি মনে করি, বিএসইসির এই পদক্ষেপ সঠিক আছে। এর একটা ইতিবাচক প্রভাব বাজারে পড়েছে।

তিনি বলেন, বেশ কিছুদিন ধরেই বাজার ঊর্ধ্বমুখী। এতোদিন বাজারে ছোট ছোট যে উত্থান হচ্ছিল তা স্বাভাবিকই ছিল। তবে একদিনে ১৮০ পয়েন্ট সূচক বেড়ে যাওয়া আমার কাছে স্বাভাবিক মনে হচ্ছে না। হঠাৎ এমন বড় উত্থান হলে বড় পতন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এই উত্থানের পেছনে অন্য কোনো কারণ আছে কি না তা খতিয়ে দেখা উচিত। শেয়ারবাজার অনেক দিন ধরেই নিম্নমুখী ছিল। এখনও বাজারের যে চিত্র তা আরও বাড়ার সম্ভাবনা আছে। তারপরও একদিনে মূল্যসূচক অস্বাভাবিক বাড়া ঠিক নয়।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, বাজারের ওপর বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরে আসছে। যার ইতিবাচক প্রভাব শেয়ারবাজারে দেখা যাচ্ছে। এ আস্থা ফেরার ক্ষেত্রে বিএসইসি’র সা¤প্রতিক পদক্ষেপগুলো ভ‚মিকা রেখেছে। বেশ কিছু কোম্পানির আইপিও বাতিল করা হয়েছে। তা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। এর সঙ্গে করোনার প্রকোপও কিছুটা কমে এসেছে। ধীরে ধীরে অর্থনৈতিক কার্যক্রম স্বাভাবিক হচ্ছে। এসব কিছু মিলেই বাজার ঊর্ধ্বমুখী।

বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস বৃহস্পতিবার লেনদেন শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন ছিল ৩ লাখ ৩৩ হাজার ৬৮৫ কোটি টাকা, যা গতকালের লেনদেন শেষে দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৪৫ হাজার ১৩৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ একদিনেই ডিএসই’র বাজার মূলধন বেড়েছে ১১ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা। মূলধন বাড়ার অর্থ হলো তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দাম সম্মিলিতভাবে ওই পরিমাণ বেড়েছে।

বড় অঙ্কের বাজার মূলধন বাড়ার পাশাপাশি সবকটি মূল্যসূচকের বড় উত্থান হয়েছে। দিনের লেনদেন শেষে ডিএসই’র প্রধান মূল্যসূচক আগের দিনের তুলনায় ১৮০ পয়েন্ট বেড়ে ৪ হাজার ৫৪৫ পয়েন্টে উঠে এসেছে। এ নিয়ে টানা ১১ দিন সূচক বাড়ল ডিএসইতে। গত ২২ জুলাই ডিএসইএর প্রধান সূচকের অবস্থান ছিল ৪ হাজার ৭৬ পয়েন্ট। এর মাধ্যমে চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারির পর সূচকটির সব থেকে বড় উত্থান হলো। ওইদিন ডিএসইর প্রধান সূচক বাড়ে ২৩২ পয়েন্ট।

এদিকে প্রধান মূল্যসূচকের পাশাপাশি বড় উত্থান হয়েছে ডিএসই’র অপর দুই সূচকের। এর মধ্যে ডিএসই-৩০ সূচক ৬৪ পয়েন্ট বেড়ে এক হাজার ৫৪০ পয়েন্টে উঠে এসেছে। ডিএসইর শরিয়াহ সূচক ৪৭ পয়েন্ট বেড়ে এক হাজার ৫৮ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।

এদিন এক শতাংশের ওপরে দাম বেড়ছে ২৭৭টি কোম্পানির। এর মধ্যে ২৫০টির দাম বেড়েছে ২ শতাংশের ওপরে। ৪ শতাংশের ওপরে দাম বাড়ার তালিকায় রয়েছে ১৫৪টি। ৯৪টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়ছে ৬ শতাংশের ওপরে। ৯ শতাংশের ওপরে দাম বেড়েছে ২৬টির।

এদিকে সূচকের বড় উত্থানের দিনে হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে সিএসই’র লেনদেন। দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে এক হাজার ১২৮ কোটি ৬৪ লাখ টাকা, যা আগের দিন ছিল ৮৩৬ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। এ হিসেবে লেনদেন বেড়েছে ২৯২ কোটি ১১ লাখ টাকা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *