নিখোঁজ থাকার ১০ দিন পর  অভিযোগ প্রাপ্তির ২ দিনের মধ্যে ট্রাক ড্রাইভার ও ট্রাক চাঁদপুর থেকে উদ্ধার।

অপরাধ সমাজ সেবা

নিখোঁজ থাকার ১০ দিন পর  অভিযোগ প্রাপ্তির ২ দিনের মধ্যে ট্রাক ড্রাইভার ও ট্রাক চাঁদপুর থেকে উদ্ধার।

 

২৯/০৫/২০২০ তারিখ রাত ১১.৩২ মিনিটে দুর্গাপুর থানার ওসি সাহেব ফোনে জানালেন গত ২০/০৫/২০২০ তারিখ থেকে একটি ট্রাক ও ট্রাক ড্রাইভার নিখোঁজ। সাথেসাথে ফোন নাম্বার নিয়ে লোকেশন দেখলাম ২১/০৫/২০২০ তারিখ সকালে কচুয়া,  চাঁদপুর তার অবস্থান ছিলো।  ৩০/০৫/২০২০ তারিখ সকালে অফিসে গিয়ে ড্রাইভারের ব্যবহৃত ফোনের সিডিআর নিলাম। সিডিআর পর্যালোচনা করে তিনটা নাম্বার টার্গেট করলাম।

 

ঐ তিনটা নাম্বারের লোকেশন নিয়ে দেখলাম তাদের অবস্থানও চাঁদপুর সদর, শহরাস্তি ও কচুয়া। এই নাম্বারগুলোরও সিডিআর নিলাম। সবকিছু পর্যালোচনা করে প্রাথমিকভাবে মনে হলো ড্রাইভার কচুয়া, চাঁদপুর অবস্থান করছে। নেত্রকোণা জেলা পুলিশের সম্মানিত অভিভাবক পুলিশ সুপার জনাব আকবর আলী মুনসি স্যার ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার প্রশাসন ( পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতি প্রাপ্ত) জানাব এস এম আশরাফুল আলম পিপিএম স্যারের পরামর্শক্রমে ও সার্বিক দিক নির্দেশনায় অভিযান শুরু করার প্রস্তুতি নিলাম। টিমের ব্যবস্থাপনা করেছেন অফিসার -ইন -চার্জ দুর্গাপুর থানা।  ইন্স(তদন্ত)  সাহেবের নেতৃত্বে টিম চাঁদপুর যাওয়ার জন্য রেডি করা হয়। ৩০/০৫/২০২০ তারিখ রাতেই দুর্গাপুর থানার টিম চাঁদপুরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলো। ৩১/০৫/২০২০ তারিখ সকাল ০৫.৩০ এর সময় তারা চাঁদপুর পৌঁছালো।

 

করোনা ভাইরাস সংক্রমণের এই সংকটময় পরিস্থিতিতে অনেক প্রতিকূলতার মধ্যে তাদের থাকা, খাওয়ার ব্যবস্হা করতে হয়েছে। বিভিন্ন বিষয় পর্যালোচনা করে তিনটা টার্গেট নাম্বারের খোঁজে টিম চাঁদপুর থেকে কচুয়া যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিলো। তখন  নাম্বার তিনটার অবস্থান ছিলো কচুয়া। প্রথম টার্গেট নাম্বারের বাড়িতে গিয়ে জানা গেলো সিম রেজিষ্ট্রেশন একজনের নামে আর সিম ব্যবহার করছে তার মেয়ের জামাই, সে বাড়িতে নেই এবং সে সিএনজি চালক। এবার দ্বিতীয় টার্গেটের কাছে পৌঁছাতে হবে।  দ্বিতীয় টার্গেটের কাছে যাওয়ার সময় রাস্তায় বাড়ির পাশে রাখা একটা ট্রাক। সন্দেহ হলো, কিছুটা দূরে গিয়ে দেখলো সবাই ট্রাকটা। ট্রাকের মালিককে দুর্গাপুর থেকে সাথে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল,  সে বলতেছিল এটাই তার ট্রাক। ট্রাকের নাম্বার প্লেট সরিয়ে অন্য নাম্বার প্লেট দেওয়া হয়েছিল এবং ট্রাকে একটা ফোন নাম্বার লেখা ছিলো।  ওদেরকে বললাম ট্রাকে লেখা ফোন নাম্বারটা দিতে। মিলিয়ে দেখলাম এটা আমাদের টার্গেট নাম্বার। তখন আমরা আরও কিছুটা নিশ্চিত হলাম এর আশেপাশেই এই ফোন নাম্বারের লোকটাকে পাওয়া যাবে। আশেপাশের লোকজন যেন কিছু বুঝতে না পারে সেই জন্য বারবার সতর্কতার সাথে কাজটা করতে নির্দেশ দিচ্ছিলাম। পাশের দোকানে জিজ্ঞেস করে জানতে চাইলো কিছু পণ্য পরিবহনের জন্য ট্রাক প্রয়োজন। তারা জানালো ট্রাক ড্রাইভারের বাড়ি পাশেই।  বাড়িতে গিয়ে জানানো হলো পণ্য পরিবহনের জন্য,  ড্রাইভার কোথায় আছে??  ড্রাইভার নিজের পরিচয় দিলো  সেই সাথে আমাদের অভিযানের সফল সমাপ্তি হলো। যত সহজে লিখেছি সমাপ্তি,  সমাপ্তিটা এতো  সহজ ছিলো না, এই অভিযানের সাথে জড়িত প্রতিটি সদস্যই সাক্ষী হয়ে থাকুক।

 

ট্রাক ড্রাইভার একাই চুরির সাথে জড়িত ছিলো। কচুয়াতে সে তার দ্বিতীয় স্ত্রীর কাছে এসেছিল। প্রথম স্ত্রী জানে না তার এই দ্বিতীয় স্ত্রীর কথা।  আবার দ্বিতীয় স্ত্রী জানে না সে বিবাহিত। এখানে এসে জানিয়েছে এই ট্রাকের মালিক সে।

 

এই অভিযানের পর আজকে আমাদের প্রাপ্তি ছিলো ট্রাকের মালিকের অস্রুসিক্ত চোখে আমাদেরকে তথা বাংলাদেশ পুলিশকে ধন্যবাদ দেওয়া।  ট্রাক ফিরে পাওয়ার আনন্দে সে ধন্যবাদ দেয়নি, ধন্যবাদ দিয়েছিলো কিছু  অভিযোগ থেকে দায়মুক্ত হতে পেরেছে বলে। ড্রাইভারের বাবা-মা ও স্ত্রী কে সে বুঝাতে পেরেছে সে তাকে মেরে গুম করে ফেলেনি।  ট্রাকের কিস্তি পরিশোধ হয়নি, কোম্পানির কাছে জবাবদিহিতা। পরিবারের সদস্যদের জন্য রোজগারের সুযোগ বন্ধ হয়নি তাই!!!!!

 

ধন্যবাদ দুর্গাপুর থানার টিমের প্রত্যেক সদস্যকে, যারা এই প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও নিজের উপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেছে।

 

আমরা পুলিশ। যেকোন  প্রতিকূল পরিস্থিতে আপনাদের পাশে পাবেন।

 

প্রয়োজনে আপনার পাশে নেত্রকোণা জেলা পুলিশ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *