শামীম আহম্মেদ
পিঠার নাম শুনলেই জিভে জল আসে না এমন বাঙালি পাওয়া যাবে না। বিশেষ করে শীতে পিঠা বাঙালির জীবন ও সংস্কৃতির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। কিছুদিন আগেও শহুরে সংস্কৃতিতে পিঠার অবস্থান খুব নগণ্য হয়ে পড়েছিল। বিভিন্ন স্টলে বার্গার, পিত্জার জোয়ারে হারিয়েই যেতে বসেছিল পিঠা। কিন্তু ধীরে ধীরে ফিরে আসছে পিঠা। রাজধানীসহ নানা শহরে পিঠা উৎসব আয়োজনে মানুষ আগ্রহ নিয়ে আসছে। ফিরে আসছে পিঠা খাওয়ার ধুম। সেই ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখতে এবং পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে তা ছড়িয়ে দিতে শিল্পকলা একাডেমি ও জাতীয় পিঠা উৎসব পরিষদ যৌথভাবে আয়োজন করেছে পিঠা উৎসবের।
১৪ই জানুয়ারি ২০২৫,সকাল ৯:০০টায় কবি নজরুল সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান, বেলুন আর শান্তির পায়রা উড়িয়ে এ উৎসবের উদ্বোধন করেন। এবং পিঠা উৎসবের স্টলগুলো পরিদর্শন শেষে তিনি বলেন, সামাজিক ও অর্থনৈতিক কারণসহ নানা কারণে এখন আর গ্রামে-গঞ্জে সেভাবে পিঠা উৎসব হয় না। সেই উৎসব এখন শহরে নানা আনুষ্ঠানিকতায় হচ্ছে। এটা ভালো দিক। অন্তত এই উৎসবের কারণে আমরা আমাদের গ্রামের সেই পিঠাপুলির ঘ্রাণ নিতে পারছি, স্বাদ নিতে পারছি। তবে, এবারের উৎসবে প্রায় ২০টি স্টলে প্রায় ২০০ পদের পিঠা নিয়ে হাজির হয়েছেন কবি নজর সরকারি কলেজের পিঠাশিল্পীরা। যার মধ্যে রয়েছে—ভাপা পিঠা, চিতই পিঠা, ঝাল পিঠা, মালপোয়া, মেড়া পিঠা, মালাই পিঠা, মুঠি পিঠা, আন্দশা, কুলশি, কাটা পিঠা, কলা পিঠা, খেজুরের পিঠা, ক্ষীর কুলি, গোকুল পিঠা, গোলাপ ফুল পিঠা, লবঙ্গ লতিকা, রসফুল পিঠা, সুন্দরী ছিটকা পিঠা, চিতই পিঠা, দুধ চিতই, বিবিখানা, চুটকি পিঠা, চাপড়ি পিঠা, ঝিনুক পিঠা, সূর্যমুখী পিঠা, ফুল পিঠা, বিবিয়ানা পিঠা, সেমাই পিঠা, নকশি পিঠা, নারকেল পিঠা, নারকেলের ভাজা পুলি, দুধরাজ, ফুলঝুরি পিঠাসহ আরও বাহারি সব নামের পিঠা। বৈচিত্র্যময় স্বাদের এসব পিঠা ভোজনরসিকদের রসনায় জোগাবে ব্যতিক্রমী আনন্দ।
শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বললে, তারা জানান কবি নজরুল সরকারি কলেজে এবার প্রথম বারের মতো পিঠা উৎসব পালিত হয়। এই উৎসবের মধ্য দিয়ে তারা বাঙালি হারিয়ে যাওয়া সংস্কৃতি ঐতিহ্য কে ফিরে পেয়েছে। তারা নিজেরা সারা রাত পরিশ্রম করে নিজহাতে পিঠা তৈরি করে তাদের স্টল সাজিয়েছে এবং সবাই যেন পিঠা ক্রয় করতে পারেন তার জন্য তারা নাম মূল্যে পিঠা বিক্রি করছে।
তাদের দাবি, এবাছরের মতো প্রতিবছর যেন এই উৎসব পালনের ব্যবস্থা করা হয়।
এদিকে, নানা রকমের বাহারি পিঠার সঙ্গে উৎসব আঙিনায় শহীদ মিনারের সামনে বিকাল ১ টা থেকে অনুষ্ঠিত হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। তারই অংশ হিসেবে উদ্বোধনী আয়োজন শেষে উৎসব মঞ্চে শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এতে কবি নজরুল সরকারি কলেজের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থী ও সাংস্কৃতিক সংগঠন এ সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় অংশ নেন।
বিকাল পাঁচটায় আনুষ্ঠানিকভাবে আনন্দ উল্লাসের সাথে সমাপ্তি হয়।